More

Social Media

Light
Dark

নবজাগরণের সুরে হারাই

নব জাগরণ। একটা নতুন শুরুরই আভাস। আবারও হয়ত ফিরবে স্বর্ণালী দিন। সেই ইঙ্গিতই তো দিচ্ছে জিম্বাবুয়ে। ক্রিকেট ময়দানে একসময় বেশ শক্তিশালী দলটা ক্রমশ দুনীর্তির কাল থাবায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। সবাই হয়ত ধরেই নিয়েছিল একদিন কোন এক অন্ধকারে ঠাই হবে দলটির। আর দেখা যাবে না তাঁদের ক্রিকেট মাঠে। তবে না, জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা থেমে যেতে চাননা।

তাঁরা বরং লড়াই করতে চান, লড়াই করে বেঁচে থাকতে চান। করুণ দশা পুরো ক্রিকেট বোর্ড থেকে শুরু করে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের। জার্সিতে কোন ধরণের স্পন্সর ছাড়াই খেলতে হয়েছে বহু ম্যাচ। খেলোয়াড়দের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে সাহায্য চাইতে হয়েছে। শুধুমাত্র ক্রিকেটটাকে তাঁরা ভালবাসে বলে। আর ক্রিকেট খেলে যেতে চায় বলে।

জুতোয় জোড়াতালি দিয়ে খেলতে খেলতে বিশ্বের বুকে আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দৃঢ় এক প্রত্যয় থেকেই তো খোদ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাঁদের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয় তুলে নিল জিম্বাবুয়ে। পূর্ণ শক্তির এক অস্ট্রেলিয়া দলের সামনে দাঁড়িয়ে সমানে সমান লড়াইটা করে দেখাল জিম্বাবুয়ে।

ads

অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাঁদের হারানোর কিছুই ছিল না। অপেক্ষাকৃত দূর্বল দল হিসেবেই তাসমান পারে হাজির হয়েছিল বার্ল, রাজা, চাকাভারা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ইতোমধ্যেই সিরিজ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ের। তবুও একটা ছাপ ফেলে রেখে যাওয়ার ইচ্ছে থেকেই দুরন্ত এক জয় তুলে নেয় তাঁরা। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এটাই জিম্বাবুয়ের প্রথম জয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

ঐতিহাসিক এই জয়ের সম্পূর্ণ কৃতিত্বটাই নিজের বলে দাবি করতে পারেন রায়ান বার্ল। যে খেলোয়াড়টা একদিন সাহায্য চেয়ে টুইটারে পোস্ট করেছিলেন তিনিই বনে গেলেন ইতিহাস গড়ার কারিগর। ষষ্ঠ বোলার হিসেবে অজিদের বিপক্ষে বল করতে এসে তিনি তুলে নেন পাঁচটি উইকেট। তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফারটা তিনি তুলে নিলেন, তাও আবার ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

আগে ব্যাটিং করে অজি ব্যাটাররা সংগ্রহ করতে পারে কেবল মাত্র ১৪১ রান। যদিও ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার শত প্রতিকূলতার মাঝেও ৯৪ রানের একটা অনবদ্য ইনিংস খেলেন। বাকি ব্যাটারদের বাইশ গজে থিতু হতে দেননি বার্ল ও তাঁর সতীর্থরা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকে অস্ট্রেলিয়ার। আর শেষমেশ নিজেদের সংগ্রহটা আরেকটু বাড়িয়ে নিতে পারেনি অজিরা।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে একটা সুন্দর স্মৃতির অপেক্ষাই যেন করতে থাকে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা। ওপেনিংয়ে ৩৮ রানের একটা জুটির পর দ্রুত মিডল অর্ডার ধ্বসে পড়তে শুরু করে। সে ধস সামাল দেন অধিনায়ক রেগিস চাকাভা। তিনি ধস সামাল দিয়েই ক্ষান্ত হননি। দলের জয় সুনিশ্চিত করেই মাঠ ছেড়েছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।

সাম্প্রতিক সময়ে জিম্বাবুয়ের পারফরমেন্সের গ্রাফটা উর্ধ্বমুখি। প্রতিটা ম্যাচেই তাঁদের হয়ে কেউ না কেউ পারফরম করছে। দলকে জয়ের পথটা দেখিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সিরিজটা হয়ত জিম্বাবুয়েকে লড়াই করবার একটা রসদের জোগান দিয়েছে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ভাল দল। তবুও তাঁদের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে জিম্বাবুয়ে। আর টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশকে তাঁরা হারিয়েছে ২-১ ব্যবধানে।

এরপর ভারতের সাথে ওয়ানডে সিরিজে খানিকটা লড়াই করেছিল তাঁরা। তবে সুফল তেমন একটা পাওয়া যায়নি। শেষমেশ একটা ইতিহাস জয় করেই নিজেদের সঠিক পথে থাকার বার্তাটা দিয়ে গেল চাকাভার সতীর্থরা। এমন বেশকিছু জয় হয়তো জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে নি:সন্দেহে সাহায্য করবে। তাছাড়া এমন ঐতিহাসিক জয়গুলো নিশ্চয়ই সুদিন ফিরিয়ে নিয়ে আসবে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link