More

Social Media

Light
Dark

নিলে ‘নীল’ দক্ষিণ আফ্রিকা

যে কোন প্রথমই বেশ আনন্দদায়ক, তবে প্রথমবার স্কুলে যাওয়ার বিষয়টা একটু আড়ালে রেখে। প্রায় দুই যুগ আগে এমনই এক প্রথমের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল জিম্বাবুয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের। বিশ্বকাপের মঞ্চে নতুন এক ইতিহাস।

১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ, সেবার প্রথম বারের মত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। অথচ, সেই বিশ্বকাপেরই সেমিফাইনাল খেলে প্রোটিয়ারা। আন্ডারডগ হয়েও কিভাবে সেদিন দৈত্য বধ করেছিল জিম্বাবুয়ে – আজ শুনবো সেই গল্প।

বিশ্বকাপের ২৬তম ম্যাচে ২৯ মে মুখোমুখি হয়েছিল আফ্রিকা মহাদেশের এই দুই দল। তখনও উদীয়মান এক দল জিম্বাবুয়ে। আবার সে সময়টাকে জিম্বাবুয়ের স্বর্ণালী সময়ও বলা হয়। ১৯৯৭-২০০২ এই সময়কালের মধ্যে অনেক প্রথমের সাথেই দেখা হয়েছিল জিম্বাবুয়ের। অন্তত ক্রিকেটের ময়দানে।

ads

সে অন্য আলাপ। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর স্মৃতিটা নিশ্চয়ই বেশ উজ্জ্বল। প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক অ্যালেস্টেয়ার ক্যাম্পবেল।

অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে ৬৫ রানের জুটি গড়েন দুই ওপেনার নিল জনসন ও গ্রান্ট ফ্লাওয়ার। ১৯ রান করে ফ্লাওয়ার আউট হয়ে গেলে জনসন নতুন জুটি বাঁধেন মারে গুডউইনের সাথে। সে জুটি থেকে আসে ৬৬ রান।

বেশ একটা শক্তপোক্ত অবস্থানে ছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু খুব বেশি সময় দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা তা সহ্য করলেন না। আঘাত হানলেন ল্যান্স ক্লুসনার। তুলে নেন ৩৪ রান করা গুডউইনের উইকেট। তারপর অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে নিয়ে আবার বড় এক জুটি গড়তে চলেছিলেন জনসন। তবে এবার ‘সাদা বিদ্যু’ খ্যাত অ্যালান ডোনাল্ড বেশিক্ষণ অপেক্ষা করলেন না।

দ্রুতই নিল জনসন ও অধিনায়ক ক্যাম্পবেলকে ফিরিয়ে দেন ডোনাল্ড। খানিক বাদেই রান আউটের ফাঁদে কাটা পড়েন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। একটা পর্যায়ে বড় সংগ্রহের পথে হাঁটা জিম্বাবুয়ের ইনিংস ক্রমশ স্লথ হতে থাকে।

শেষ অবধি ২৩৩ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে থামে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। স্বল্প পুঁজি। অন্তত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। আবার সময়ে বিবেচনায় বেশ যথেষ্ট লড়াই করবার জন্য।

লড়াইটা সেদিন করেছিল ক্যাম্পবেলের সতীর্থরা। একেবারে সমানে সমান। একেবারে শুরু থেকেই যেন ম্যাচ জয়ের দৃঢ় এক প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমেছিল জিম্বাবুয়ের প্রায় প্রতিটি খেলোয়াড়। তাদের শরীরী ভাষায় সেদিন যেন জয়ের ক্ষুধা স্পষ্ট। একেবারে ইনিংসের শুরুর বলেই গ্যারি কার্স্টেনের উইকেট তুলে নেন অ্যান্ডি হুইটল। অতর্কিত এক বাউন্সে হুইটলের তালু-বন্দি হয়েই ফিরে যেতে হয় কার্স্টেনকে।

সেই যে শুরু হল। এরপর ক্রমশ তাসের ঘরের মত টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকার। ৪০ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে থামে ব্যাটারদের প্যাভিলিয়নে ফেরার মিছিল। বাঘা-বাঘা সব ব্যাটার ততক্ষণে সাজঘরে নিজেদের মুখ লুকাতে ব্যস্ত। আর বাইশ গজে কোন রকম ইনিংস মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন শন পোলক এবং ড্যারিল কালিনান। দুইজনে মিলে জড়ো করেন ৬৬ রান।

তবে কালিনান বেশিক্ষণ সঙ্গ দিয়ে যেতে পারেননি। তিনি আউট হয়ে যান ২৯ রান করে। এরপর পোলকের সাথে যুক্ত হন ক্লুজনার। এই জুটি প্রোটিয়াদের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখছিলেন। তবে লং-অন অঞ্চলে ক্যাচ আউট হয়ে পোলক ফিরে গেলে জয়ের চিলতে আলোও নিভে যায়। ৫২ রানে পোলক ছিলেন দারুণ ছন্দে। কিন্তু সে উইকেটের পর সম্ভবত প্রোটিয়ারা জয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছিল।

অন্যদিকে, জিম্বাবুয়ে শিবিরে বয়ে যাচ্ছিল নতুন এক সুখকর ইতিহাসের শীতল হাওয়া। পোলকের আউটের পর বাকিটা শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল। অথচ তখনও ক্লুজনার একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন। ১৮৫ রানে যখন দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয়ে যায় তখনও একপ্রান্তে অনড় ছিলেন তিনি ৫২ রান করে। হিথ স্ট্রিক অ্যালান ডোনাল্ডের উইকেট তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন।

বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে মেতে ওঠে পুরো জিম্বাবুয়ে শিবির। ঐ যে শুরুতেই বলেছিলাম প্রথম যে কোন কিছুই খুব আনন্দের। প্রথম প্রেম, প্রথম জয়। উল্লাস যেন থামতেই চাইছিল না নিল জনসনের। কেননা ব্যাট হাতে ৭৬ রানে অনবদ্য এক ইনিংস খেলার পর বল হাতে ২৭ রান খরচায় শিকার করেছিলেন তিন উইকেট। সেদিনের সব আনন্দের মালিক তো তিনিই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link