More

Social Media

Light
Dark

এখন রোমাঞ্চিত হওয়ারই সময়

জীবনে যেকোনো প্রথম কিছু সবসময়ই যেন এক আলাদা রকম রোমাঞ্চ তৈরি করে। খেলাধুলার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সেরকমই হয়, কোনো দেশ বহু কাল ধরে যখন স্বপ্ন দেখে আসে একদিন তারা বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলবে এবং যখন একদিন সেই স্বপ্ন পূরণ হয়, তখন সে তো রোমাঞ্চিত হওয়ারই সময়।

ব্রায়ান আমিনি ও তাঁর পরিবার ও বহুকাল ধরে স্বপ্ন দেখে আসছিলেন আমিনি পরিবারের হাত ধরেই একদিন ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলবে বারমুন্ডিরা, সেই এতদিনের দেখা স্বপ্ন এবার তাঁদের সত্যিই পূরণ হওয়ার পালা। ব্রায়ান আমিনির ছোট নাতি চার্লস, এবার সেই স্বপ্ন পূরণের এক বড় কারিগর।

হোক না টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, বছর দুয়েক আগেই বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে রানার্স হয়ে সেই বিশ্বকাপেরই টিকিট পাকা করেছেন চার্লস আমিনি, আসাদ ভালা, টনি উরা, লেগা সিয়াকারা। হ্যাঁ, এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মরু দেশে স্বপ্ন সত্যি করতে চলা পাপুয়া নিউ গিনি দলটি শুধু বিশ্বকাপে খেলা নয়, হয়তো অনেক নতুন চমক নিয়েই হাজির হতে চলেছে।

ads

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্বে গ্ৰুপ ২-এ বাংলাদেশ, স্কটল্যান্ড ও ঘরের মাঠে খেলতে নামা ওমানের চ্যালেঞ্জ টপকে গ্ৰুপে অন্তত দ্বিতীয় হয়েও যদি সুপার ১২ এ যেতে পারে পাপুয়া নিউগিনি, সেটা তাঁদের সবার কাছেই এক বিরাট গর্বের ও ক্রিকেট বিশ্বের কাছে এক চমক হয়ে উঠতে পারে। সত্যিই চমক দেখানোর মতো ‘এলিমেন্ট’ কেমন আছে পাপুয়া নিউ গিনির? এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক।

  • শক্তি

পাপুয়া নিউ গিনির আসল শক্তি যদি কিছু হয়, সেটা তাঁদের বোলিং, বিশেষত স্লো মিডিয়াম পেস বোলিং ও তার সাথে অলরাউন্ডাররা। একগাদা অলরাউন্ডারে ঠাসা দলটার বেশিরভাগই ব্যাটে – বলে অবদান রাখতে পারেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খুব কম রান ও ডিফেন্ড করার ক্ষমতা রাখে দলটা তাঁদের স্লো বোলিং দিয়ে।

অধিনায়ক আসাদ ভালা বা চার্লস আমিনি, নর্মান ভানুয়াদের অলরাউন্ড দক্ষতার জন্য পাপুয়া নিউ গিনি কিন্তু একটা ‘সারপ্রাইস প্যাকেজ’ হতে পারে প্রথম রাউন্ডে বাংলাদেশ বা স্কটল্যান্ডের মতো দলের কাছে। স্লো বোলিং এর বিরুদ্ধে ব্যাটিং এর ক্ষেত্রে এই দুটো দলের দুর্বলতা বরাবরই টি-টোয়েন্টিতে দেখা গেছে, এইখানেই কিন্তু কামড় বসানোর সুযোগ আমিনি, ভালা দের।

এছাড়া বাঁ-হাতি পেসার নোসাইনা পোকানা বা মিডিয়াম পেসার ড্যামিয়েন রাভু বা চাদ সোপার এঁরাও কিন্তু অ্যাসোসিয়েট জগতে নিয়মিত উইকেট শিকারি। এছাড়া দলটার ফিল্ডিং ও এমনিতে যথেষ্টই নজর কাড়ার মতো। গত টি২০ বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ারে পাপুয়া নিউ গিনি চমকে দিয়েছিলো আসাদ ভালা ও টনি উরার দুর্দান্ত ওপেনিং জুটি দিয়ে, বিশ্বকাপেও বারমুন্ডিরা এই দুজনের জুটির অপেক্ষায় থাকবে।

আরেকজনের কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন লেগা সিয়াকা, অ্যাসোসিয়েট জগতে দুর্দান্ত রানিং বিটউইন দ্য উইকেটের এর জন্য যাঁর খ্যাতি, আর শেষের দিকে হার্ড হিটার নর্মান ভানুয়ার ব্যাটের দিকেও কিন্তু পাপুয়া নিউ গিনি তাকিয়ে থাকবে, টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে যাঁর স্ট্রাইক রেট ১৫২, গত কোয়ালিফায়ারে বল হাতে বারমুডার বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক ও করেছেন এই ভানুয়া। পাপুয়া নিউগিনির বিশ্বকাপ অভিযানে ভানুয়া এক বড় অস্ত্র হতে চলেছেন।

  • দুর্বলতা

প্রথমবার এতো বড় মঞ্চে নামতে চলা পাপুয়া নিউ গিনির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তাঁদের অনভিজ্ঞতা। সাদা চোখে দেখলে এই স্কোয়াডের অনেকেই প্রায় ৭-৮ বছর তো আবার কেউ ১০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, টি-টোয়েন্টি ও খেলেছেন যথেষ্টই, কিন্তু বিশ্বকাপের মতো আসরে চাপ সামলানোটা একটা বিরাট ব্যাপার, সেখানেই বারমুন্ডিরা পিছিয়ে।

অ্যাসোসিয়েট জগতে নিয়মিত পারফরমেন্স করলেও গ্ৰুপে বাংলাদেশের মতো দলের চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে পরের রাউন্ডে যেতে গেলে, বাংলাদেশের কোয়ালিটি বোলিং সামলানো কিন্তু পাপুয়া নিউগিনির কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ হবে, যেখানে ব্যাটিং তাঁদের কিছুটা হলেও দুর্বল জায়গা।

এছাড়া প্রায় বছর দুয়েক টিটোয়েন্টি না খেলার মধ্যে থাকাটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে যেতে পারে। এমনিতেই আইসিসি ওয়ান ডে লিগ ২ তে বারবার আমেরিকা বা নেপালের সামনে ব্যাটিং বিপর্যয় হয়েছে, বিশ্বকাপে সেই রেশ চললে ভালা, উরা দের কপালে কিন্তু দু:খ আছে।

  • পাপুয়া নিউ গিনি দল ও তাঁদের সম্ভাবনা

বছর কয়েক ধরে নিয়মিত খেলা বেশিরভাগদের নিয়ে এমনিতে ‘কোর টিম’ টাই বিশ্বকাপে ধরে রেখেছে পাপুয়া নিউ গিনি। ব্যাটিংটা পুরোপুরি নির্ভর করবে টনি উরা, আসাদ ভালা, লেগা সিয়াকা, চার্লস আমিনিদের ওপর, আর শেষ দিকে ভানুয়া তো আছেনই। তবে চমক হতে পারেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান কিপলিন দোরিগা।

‘ইনোভেটিভ’ সব শট মারায় যাঁর দারুণ দক্ষতা। বোলিংটা যথেষ্টই ‘স্টেডি’ থাকায় বোলিং নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কারণ নেই, তবে ব্যাট হাতে বোর্ডে কেমন রান তুলতে পারবে পাপুয়া নিউগিনি তার ওপরই নির্ভর করছে সুপার ১২ পর্বে যেতে পারবে কিনা। বাংলাদেশ ম্যাচ বাদ দিলে, স্কটল্যান্ড ও ওমান এই দুটো ম্যাচে জিততেই হবে তাঁদের, সেটা যথেষ্টই কঠিন তবে অসম্ভব নয়।

এতদিন ধরে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখা আসাদ ভালারা সুপার ১২এ যাওয়ার জন্যও জান প্রাণ লড়িয়ে দেবেন এ আশা করাই যায়। আর পাপুয়া নিউ গিনির আপাত অচেনা সব নামগুলোও ক্রিকেট বিশ্বের কাছে মুখে মুখে ফেরার বাসনা নিয়েও নিশ্চয়ই নামবেন ব্রায়ান আমিনির নাতি ও তাঁর সতীর্থরা।

  • পাপুয়া নিউ গিনি স্কোয়াড

আসাদ ভালা (অধিনায়ক), চার্লস আমিনি, টনি উরা, লেগা সিয়াকা, নর্মান ভানুয়া, সেসে বাউ, চ্যাড সোপার, নোসাইনা পোকানা, কিপলিন দোরিগা, জেসন কিলা, ড্যামিয়েন রাভু, হিরি হিরি, গৌডি টোকা, সাইমন আটাই, জ্যাক গার্ডনার, কাবুয়া মোরিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link