More

Social Media

Light
Dark

সংকট বনাম আশা

ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। মাস তিনেক আগেও তিনি আইসিসির মাস সেরার পুরস্কার জিতেছেন। আর এর নেপথ্যে ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে তাঁর ব্যাটিং পারফরম্যান্স।

টেস্টেও তিনি দলের সেরা পারফরমারদের একজন। দিব্যি আরো লম্বা সময় দলকে তিনি সাদা পোশাকে সার্ভিস দিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাখেন।

কিন্তু, টি-টোয়েন্টি?

ads

ক্রিকেটের  এই সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে ‍মুশফিকুর রহিমের সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স বাংলাদেশের জন্য বিরাট দুশ্চিন্তার কারণ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সম্ভবত এটাই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয়।

সর্বশেষ ২০ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুশফিক রান তুলেছেন মাত্র ১৩.৮১ গড়ে। হাফ সেঞ্চুরি একটা আছে যদিও, তবে দেশের মাটিতে ক’দিন আগেই হওয়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তিনি ছিলেন চূড়ান্ত ব্যর্থ। একাধিক বার রানের খাতা খোলার আগেই তিনি ফিরেছেন সাজঘরে। এটা টি-টোয়েন্টির সাথে মানানসই নয়, দেশের মাটিতে মন্থর উইকেটে খেলার পরও এটা সত্য।

মুশফিককে স্কোয়াডে রাখার পেছনে টিম ম্যানেজমেন্টের সবচেয়ে বড় যুক্তি হল তাঁর অভিজ্ঞতা। টি-টোয়েন্টির বিবেচনায় মুশফিক আসলে কতটা অভিজ্ঞ? এখন অবধি বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি খেলেছেন ২০ ম্যাচ। করেছেন মাত্র ২৫৮ রান।

গড় মাত্র ১৬.১২। কোনো হায় সেঞ্চুরি নেই। সেরা ইনিং ৪৭ রানের। অথচ, তিনি খেলেন চার নম্বর পজিশনে। স্ট্রাইক রেট মাত্র ১০৪.৪৫। এই পরিসংখ্যান মোটেও টি-টোয়েন্টির সাথে যায় না। তারপরও মুশফিক বিশ্বকাপে। আর মুশফিক এমন একজন চরিত্র বাংলাদেশ ক্রিকেটে যাকে কয়েকটা ম্যাচে বাজে পারফরম্যান্স করার পরও বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট একাদশ থেকে সরানোর সাহস দেখাবে না।

টি-টোয়েন্টিতে মুশফিকুর রহিম একেবারেই ছন্দে নেই, এটা বুঝতে বিরাট কোনো বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। বিশ্বকাপের আগে যে ক’টা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল পেয়েছে – তাঁর কোনোটাই পারফরম্যান্স নেই মুশফিকের। ওমান ‘এ’ দলের মত প্রতিপক্ষও তাঁকে ‘ডাক’ উপহার দিয়েছে।

অথচ, তিনিই বাংলাদেশের ‘নাম্বার ফোর’। আচ্ছা, এই চার নম্বরে আগেও কি মুশফিক খুব দুধর্ষ কোনো ব্যাটসম্যান ছিলেন? উত্তর ‘না’।  চার নম্বরে ৪১ টা ম্যাচ খেলে মুশফিক করেছেন ৭০০ রান। গড় ২৩.৬৯। স্ট্রাইক রেট ১২১.৮৫। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন চারটা। এই পারফরম্যান্স দিয়ে তাঁকে টি-টোয়েন্টির ‘অটোমেটিক চয়েজ’ বলা যায় না।

মুশফিক নিজেও বিশ্বকাপে থাকবেন ভয়াবহ চাপের মধ্যে। একে তো তাঁর সাম্প্রতি ফর্ম নেই বললেই চলে, যেটা প্রভাব ফেলবে তাঁর আত্মবিশ্বাসে। অন্যদিকে, টিম ম্যানেজমেন্টের ভরসার পাত্র তিনি – ফলে প্রত্যাশার চাপ থাকবেই। আবার, চার নম্বরের সেরাও তিনি নন – ফলে অনেক আলোচনা-সমালোচনা ও চাপ জয় করে পারফরম করতে হবে মুশফিককে।

তবে, এটা ঠিক যে – মুশফিক বরাবরই এরকম চাপ জয় করতে জানেন। প্রচণ্ড পরিশ্রমী এই ক্রিকেটারের মূল শক্তি ক্রিকেটের প্রতি তাঁর নিবেদন। আশেপাশের আলোচনা ভুলে যদি, মাঠে তিনি মনোনিবেশ করতে পারেন – তাহলে বাঁধাটা ভাঙতে পারেন তিনি।

আর মুুশফিকের ব্যাটসম্যানশিপ নিয়ে তো কখনোই কোনো প্রশ্ন নেই। শুধু সমস্যা হল সম্প্রতি তিনি টি-টোয়েন্টির মেজাজটা ধরতে পারছেন না – তবে পরিশ্রম আর নিবেদন দিয়ে যদি এই সংকটটা কাটিয়ে উঠতে পারেন – তাহলে লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হয় মুশফিক বাংলাদেশের জন্য বড় সংকট হবেন, কিংবা হবেন বড় আশা-ভরসা। কোন দিকে যাবে মুশফিকের ভবিষ্যত? – সেটা জানতে সময়ের অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link