More

Social Media

Light
Dark

আগামীর গল্পে ইতিহাস গড়বে উনিশের এই তরুণরা!

এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এখন টাইগার যুবাদের দখলে। প্রায় ৪ বছর আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তকমা পেলেও মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা এশিয়া কাপের ট্রফিটা এত দিন ধরা দেয়নি বাংলাদেশের হাতে। সেই অপূর্ণতাও অবশেষে ঘুচে গেল। দুবাইয়ের ফাইনালে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে প্রথমবার এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব-১৯ দল।

মরুর দেশে এমন আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দিলেন শিবলী থেকে আরিফুল কিংবা মারুফ মৃধারা। পুরো টুর্নামেন্টেই বাংলাদেশ যে ছিল দলগত সাফল্যে মহীয়ান। ব্যাটে-বলে ছিল অপ্রতিরোধ্য। অপরাজেয় হয়েই তাই শিরোপা এসেছে টাইগার শিবিরে। আর সেই জয়ের নেপথ্যে কখনও ছিলেন শিবলী, কখনও মারুফ আবার কখনওবা জীবন-রাব্বিদের স্পিনঘূর্ণি শিরোপার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

ব্যাট হাতে পুরো আসরেই আলো ছড়িয়েছেন আশিকুর রহমান শিবলী। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ৭ রান বাদ দিলে বাকি চার ইনিংসেই পেরিয়েছেন পঞ্চাশের কোঠা। এর মধ্যে দুই সেঞ্চুরি সহ ছিল দুই হাফ-সেঞ্চুরিও।

ads

শুরুটা করেছিলেন জাপানের বিপক্ষে ৭১ রানের ইনিংস দিয়ে। এরপর আরব আমিরাতের বিপক্ষে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে করেছিলেন ৫৫ রান। টানা দুই ফিফটির পর তিনি অবশেষে পান শতকের দেখা।  শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর ১১৬ রানের অপরাজিত ইনিংসই বাংলাদেশকে জয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল।

সেমিফাইনালে  ব্যাট হাতে এক অঙ্ক পেরোতে পারেননি। তবে সব কিছু জমিয়ে রেখেছিলেন ফাইনালের জন্য। একদম রাজসিক প্রত্যাবর্তন যাকে বলে ১২৯ রানের ইনিংসে বলতে গেলে একাই আরব আমিরাতকে হারিয়ে দিয়েছেন এই ব্যাটার। পুরো আসরে শিবলী করেছেন ৩৭৮ রান।  এমন ধারাবাহিকতা স্বরূপ ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কারটাও তাই তাঁরই হাতে উঠেছে।

ব্যাট হাতে শিবলীর পাশাপাশি আরেক সেনানীর নাম আরিফুল ইসলাম। টুর্নামেন্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৮৪ রান করেছেন। তবে সেমি ও ফাইনাল দুই ম্যাচেই এ ব্যাটারের ব্যাট হেসেছে একদম মোক্ষম সময়ে। ভারতের বিপক্ষে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশের ছন্দচ্যুতি হতে পারতো যে কোনো সময়েই। তবে সেখান থেকে বাংলাদেশকে জয়ের পথ দেখিয়েছিলেন আরিফুল। সেঞ্চুরি না পেলেও খেলেছিলেন ৯৪ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। এরপর ফাইনালে এসে খেলেন ৪০ বলে ৫০ রানের সময়োপযোগী এক ইনিংস।

আরিফুল অবশ্য শুধু ব্যাট হাতেই অবদান রাখেননি, প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের বোলিং দিয়ে চেপে ধরতেও মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি। ৫ ম্যাচে ২ উইকেট পেলেও মাত্র ২.২৫ ইকোনমিতে পুরো টুর্নামেন্টে বল করেছেন তিনি। যা এবারের আসরে ইকোনমি বোলিয়ের দিক দিয়েও দ্বিতীয় সেরা।

বোলিং লাইনআপে আরিফুল ছাড়াও বাকিরা ছিলেন আরো দুর্দান্ত। পুরো টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ উইকেট নিয়েছেন মারুফ মৃধা। মৃধার মতো ১০ উইকেট নিয়েছেন শেখ পারভেজ জীবনও। এ ছাড়া অধিনায়ক মাহফুজ রাব্বি ৯ এবং রোহানাত দৌল্লাহ বর্ষণ ৭ উইকেট নিয়েছেন। অর্থাৎ পুরো টুর্নামেন্টে স্পিন কিংবা পেস, দুই আক্রমণেই প্রতিপক্ষকে ভুগিয়েছে বাংলাদেশি বোলাররা।

শুরুতে মৃধা, বর্ষণরা দারুণ সূচনা এনে দিয়েছেন। মাঝে ওভারে বাংলাদেশে স্পিনারদের সামনে খাবি খেয়েছে প্রতিপক্ষরা। আর এ কারণেই কোনো ম্যাচেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০ পেরোতে পারেনি প্রতিপক্ষ দলগুলো। ৫ ম্যাচের মধ্যে আবার ১০০ এর নিচেই প্রতিপক্ষকে দুইবার অলআউট করেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের এই বোলিং লাইনআপই ছিল এশিয়া শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম নির্ধারক।

ব্যাটাররা সাবলীল ব্যাট করেছেন। আর বোলাররা রীতিমতো টুর্নামেন্ট জুড়ে ত্রাস ছড়িয়েছেন। আর এমন আধিপত্যের মধ্য দিয়েই অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। দলগত এই নৈপুণ্য নিয়ে কাঁটাছাড়া করা যায় অনেক।

প্রশংসার জোয়ারেও চাইলে ভাসিয়ে দেওয়া যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের আগামীর গল্পে তারাই হতে যাচ্ছেন মূলনেতা। এই প্রক্রিয়ায় এমন সব শিরোপা তাই নতুন দিগন্তে দুয়ার খুলে দেয়। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে সব মূল শিরোপার স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।

কিন্তু সেটি পেরিয়ে জাতীয় দলে আসলেই যেন ভর করে শূন্যতা। সম্ভাবনার অধ্যায়ে এবার অন্তত বাস্তব করা লক্ষ্যে ছুটে চলুক এই তরুণরা। কে জানে, বাংলাদেশের সব ‘অধরা’র অবসান ঘটবে আজকের এই তরুণদের হাত ধরেই।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link