More

Social Media

Light
Dark

কেন ইউরোপে ব্রাত্য রোনালদো?

ট্রান্সফার উইন্ডোতে এখন সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ইস্যু। বর্তমান ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়তে চান, তার এমন বার্তার পরেই নড়েচড়ে বসেছিল ইউরোপীয় ফুটবল। কিন্তু রেড ডেভিলরা আবার তাকে ছাড়তে চায় না, বর্তমান কোচ এরিক টেন হ্যাগ রোনালদোকে নিয়েই নতুন মৌসুমের পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া দলটি নতুন কোন স্ট্রাইকার কিনতেও আগ্রহী নয় ৷

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর এজেন্ট জর্জ মেন্ডেস অবশ্য ইতোমধ্যে চেলসি, বায়ার্ন মিউনিখসহ আরো দুই একটি ক্লাবের সাথে আলোচনা করেছেন রোনালদোর সম্ভাব্য ট্রান্সফার নিয়ে। কিন্তু সে-সব ক্ষেত্রে আলোচনা খুব একটা এগোয়নি। আবার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব না পেলেও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে পর্তুগিজ তারকাকে দলে নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে ইউরোপের সেরা ক্লাব। 

রোনালদো ক্লাব ছাড়তে চাওয়ার মূল কারন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা, অথচ এই টুর্নামেন্টের শীর্ষস্থানীয় দলগুলো এই বর্ষীয়ান ফরোয়ার্ডকে দলে ভেড়াতে আগ্রহী নয়৷ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রেকর্ডের ঝড় তোলা কিংবদন্তিকে নিজেদের করে নিতে দলগুলো অনিচ্ছুক হওয়ার কারন কি হতে পারে, জানার চেষ্টা করা যাক।

ads
  • জুভেন্টাস

২০১৮ সালে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। কিন্তু উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পারফর্ম করা সত্ত্বেও কেন যেন জুভেন্টাসের হয়ে সফলতার মুখ দেখতে পারেননি পর্তুগাল অধিনায়ক। এরপর ২০২১ সালে নতুন মৌসুম শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে ক্লাব ছাড়েন তিনি৷

ইতোমধ্যে তুরিনের ওল্ড লেডি নাম্বার নাইন হিসেবে দুসান ভ্লাহোভিচের উপর ভরসা করছে। এছাড়া ক্লাবের বেতন কাঠামো ঠিক রাখতে পাউলো দিবালার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি জুভেন্টাস, আবার ম্যাথুজ ডি লিটের মত তরুণ ডিফেন্ডারকে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে তারা।

আপাতত তাই বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ বেতনধারী ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্য পুরোনো ঠিকানায় ফেরার কোন সম্ভাবনা নেই।

  • রিয়াল মাদ্রিদ

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ক্লাব পরিবর্তন করতে চান এমন খবর প্রকাশ হওয়ার পরেই তাঁর সাবেক ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে। এছাড়া জর্জ মেন্ডেসের প্রাইভেট জেট নিয়ে মাদ্রিদ সফর সেই গুঞ্জনের আগুনে আরো ঘি ঢেলেছে। রিয়াল মাদ্রিদ এই মৌসুমে আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দলে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু ফরাসি তরুণকে স্বাক্ষর করাতে ব্যর্থ হওয়ার পরে রিয়াল নতুন ফরোয়ার্ড কেনার ভাবনা আনছে না।

এছাড়া করিম বেনজেমা এখন বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকার হয়ে উঠেছেন। এর পাশাপাশি ভিনিসিয়াস জুনিয়র লেফট উইং ধরে রোনালদোর রেখে যাওয়া শূন্যতা পূরণ করেছেন। সবমিলিয়ে তাই রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে আসবে এমনটা ভাবার কোন কারন নেই। এমনকি রোনালদো গত বছর স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদে তাঁর ইতিহাস ইতোমধ্যে লেখা হয়ে গিয়েছে।

  • প্যারিস সেইন্ট জার্মেই

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মত উচ্চ বেতনের ফুটবলারকে দলে নিতে কোন সমস্যা হওয়ারই কথা না প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের। কিন্তু পিএসজিতে লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমার জুনিয়রের মত তারকার উপস্থিতি থাকায় রোনালদোর জন্য একাদশে কোন জায়গা খালি নেই বললেই চলে।

অবশ্য নেইমারের ক্লাব ছাড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারের অনিচ্ছা এবং অতিরিক্ত বেতনের কারনে অন্য যেকোনো ক্লাবের জন্য তাকে দলে ভেড়ানো বেশ কঠিনই বটে। তারপররও যদি নেইমারকে পিএসজি ছাড়তে হয় তাহলে হয়তো ফরাসি জায়ান্টরা রোনালদোকে কিনতে আগ্রহী হবে।

আর সেটি না হলে ইতিমধ্যেই খেলোয়াড়দের বিশাল অংকের বেতন দিতে থাকা পিএসজি নিজেদের স্কোয়াডে আরেকজন বড় মাপের তারকাকে অন্তর্ভূক্ত করতে পারবে না৷ 

  • বায়ার্ন মিউনিখ

২০২২ সালের আসন্ন মৌসুমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর গন্তব্য হিসেবে অনেক বেশিবার বলা হয়েছে বায়ার্ন মিউনিখের নাম। এছাড়া ক্লাবটির মূল তারকা রবার্ট লেওয়ানডস্কি বার্সেলোনাতে চলে যাওয়ায় গুঞ্জনে আরো হাওয়া লেগেছে ৷ কিন্তু জার্মান ক্লাবটির সিইও অলিভার কান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন রোনালদোকে দলে নেয়ার কোন পরিকল্পনা নেই তাদের।

এমনকি বাভারিয়ানদের কোচ কিংবা ম্যানেজম্যান্টের কেউই রোনালদোর ইস্যুতে কোন ইতিবাচক কথা বলেননি। আর এর মূল কারন বায়ার্ন তাদের দল সাজায় ভবিষ্যতের জন্য, তাই ৩৭ বছর বয়সী রোনালদোকে দলে নেয়াটা তাদের দর্শনের সঙ্গে যায় না।

  • চেলসি

২০২২/২৩ মৌসুমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দল হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার আলোচনা করা হয়েছিল চেলসি এফসির নাম। এমনকি কিছু সময়ের জন্য মনে হয়েছিল রোনালদোর চেলসিতে যোগ দেয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু এরপরই দৃশ্যপটে হাজির হয় চেলসি কোচ টমাস টুখেলের মনোভাব। বুড়ো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর চেয়ে তাঁর পছন্দ কম বয়সী কোন খেলোয়াড়।

ইতোমধ্যে রোমেলু লুকাকু কে ছেড়ে দেয়া ব্লুজরা রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে ম্যানচেস্টার সিটির ২৭ বছর উইঙ্গার রহিম স্টার্লিংকে কিমে নিয়েছে যে কি বেশ আক্রমণাত্বক ভাবে প্রেস করতে পারতো। তাই টুখেলের পরিকল্পনায় সাথে না মেলায় রোনালদোর চেলসিতে আসাটা প্রায় অনিশ্চিত।

এছাড়া অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, ইন্টার মিলানের মত বড় ক্লাবগুলোও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে নিতে ইচ্ছুক নয়। একটা ব্যাপার প্রায় সব ক্লাবের বেলায় সত্যি যে, তাদের প্লেয়িং সেটআপের সঙ্গে রোনালদোর উপস্থিতি মানায় না। এছাড়া পর্তুগিজ তারকার বড় অংকের বেতনও ক্লাবগুলোকে পিছিয়ে দিয়েছে। 

অবশ্যই ট্রান্সফার মার্কেট পুরোপুরি অনিশ্চয়তায় ভরপুর থাকে। তবে অদ্ভুত কিছু একটা এখানেও ঘটতে পারে। রোনালদোকে হয়ত শেষ সময়ে ইউরোপের এলিট কোন দল নিজেদের করে নিবে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত এটা প্রায় অসম্ভব যে, তিনি পরের মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জন্য ফেভারিট কোন দলে খেলার সুযোগ পাবেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link