More

Social Media

Light
Dark

মেসি ও মিরাজ, একই সুতোয় বাঁধা

বুয়েন্স আয়ার্স থেকে ঢাকার দূরত্ব ১৬ হাজার ৭৬৩ কিলোমিটার। ঐ দূর প্রান্তের দেশের জন্য বাংলাদেশের মানুষের আবেগ অভাবনীয়। সেই অভাবনীয় আবেগটার নাম হচ্ছে ফুটবল। বিশ্বকাপ আসলেই ঐ আকাশি নীল জার্সিতে সয়লাব হয়ে যায় গোটা দেশ। দেশটা ভরে যায় আর্জেন্টিনার পতাকায়। কী এক চৌম্বকীয় আকর্ষণ! দূরত্বকে ছাপিয়ে অনেকের কাছে বাংলাদেশের পরে প্রিয় দেশের তালিকাতেও চলে আসে আর্জেন্টিনার নাম।

বাংলাদেশ থেকে এই সমর্থনটা সব সময়ই নি:স্বার্থ ছিল। বছরের পর বছর আর্জেন্টিনা কোনো শিরোপা জেতেনি। বিশ্বকাপটাও জিতেছে সেই তিন যুগ আগে। তারপরও বিশ্বকাপ আসলেই আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষের ভালবাসার যেন অন্ত নেই। হতাশা আর হৃদয়ভঙ্গের বেদনা নিয়েও তারা বছরের পর বছর ঐ লাতিন আমেরিকার দেশটাকেই সাপোর্ট করে।

এই যে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার এত বড় একটা সাপোর্ট গ্রুপ আছে তা কি আর্জেন্টিনার নাগরিকরা জানে? এতদিন ধরে অজানার মধ্যেই সেটা বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এবার এসে যেন সেই পরিস্থিতিটা পাল্টে গেছে। বাংলাদেশ নামক একটা দেশে যে আর্জেন্টিনার নিরঙ্কুশ সমর্থকগোষ্ঠী আছে, তা আর এখন তাদের চোখের আড়ালে নেই।

ads

শুরুটা হয়েছিল মেসির হাতে একটা বাংলাদেশের পতাকা এডিট করে। সেই ছবি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় অনলাইন পাড়ায়। দৃষ্টিগোচর হয় আর্জেন্টিনার কাছেও। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাদের অফিশিয়াল পেজ থেকে সেই ছবি আপলোডও করে।

ব্যাস। সেখান থেকেই দুই দেশের মধ্যে একটা আত্মিক বন্ধনের একটা সূত্রপাত হয়ে যায়। বাংলাদেশের আর্জেন্টিনার ফ্যানরাও এমন কিছুতে বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। আর্জেন্টিনার প্রতি ভালবাসার সুতোর টান আরো দৃঢ় হতে থাকে।

মেক্সিকো, পোল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার জয়ের পর বাংলাদেশিদের তুমুল উচ্ছ্বাসের মুহূর্ত ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। সেই ভালবাসা পৌঁছে যায় আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্ক্যালনির কাছেও। স্ক্যালনিও সেই ভালবাসা দু’হাত ভরে নিলেন। এমনকি নিজে বাংলাদেশিদের ধন্যবাদও জানালেন।

এতক্ষণ পর্যন্ত ঠিক ছিল। বাংলাদেশিদের ভালবাসা সেই দূর দেশে পৌঁছেছে। এতটুকু পর্যন্তই যথেষ্ট ছিল বাংলাদেশের জন্য। তবে আর্জেন্টিনা বাসীরা চমকে দিলেন ভিন্ন আঙ্গিকে। ফুটবলে বাংলাদেশের র‍্যাংকিং ১৯২ তে। কিন্তু ক্রিকেটে তো ৭। তাই সেই ক্রিকেটেই বাংলাদেশের দলের ভক্ত বনে গেল আর্জেন্টিনার মানুষরা।

উপলক্ষ্যটা এলো দ্রুতই। ভারতের বিপক্ষে দারুণ এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আর সেই মিরাকল ইনিংস খেলা মিরাজের নামটা ছড়িয়ে গেল সেই আর্জেন্টিনায়। আর্জেন্টিনার বেশ কিছু সাংবাদিকও এ ম্যাচ জয়ের পরে ভিডিওবার্তায় অভিনন্দন জানালেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বাংলাদেশের জয়ে আর্জেন্টিনার মানুষদের উচ্ছ্বাসের প্রতিক্রিয়া দেখা গেল।

যেমনটি করে লিওনেল মেসিকে নিয়ে এ দেশের মানুষ উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে, ঠিক তেমন করে মিরাজকে নিয়েও সেই আর্জেন্টিনায় দেখা গেল একই দৃশ্য। হ্যা। বাংলাদেশিদের মতো দল বেঁধে উচ্ছ্বাস নয়। তবে আর্জেন্টাইনদের প্রতিক্রিয়ায় বারবার উঠে আসলো বাংলাদেশ আর মিরাজের নাম।

আর্জেন্টাইনদের এমন উন্মাদনা যে নিজকই কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না, তা বুঝা যায় তাদের আরেকটি কার্যক্রমে। বাংলাদেশে বহু আর্জেন্টিনার ফ্যান ক্লাব আছে। ফেসবুকে সে সব গ্রুপের দেখা মেলে প্রায়শই। তবে এবার বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে একটি গ্রুপ খুলে ফেলে আর্জেন্টাইন ফ্যানরা।

স্প্যানিশ ভাষায় সে গ্রুপের তারা নাম দেন, ফ্যানস আর্জেন্টিনোস ডি লা সিলেকশন ডি ক্রিকেটে ডি বাংলাদেশ। বাংলায় রূপান্তর করলে যেটি দাঁড়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে আর্জেন্টাইন ফ্যান। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, গ্রুপ খোলার পর দিন চারেকের মধ্যেই সে গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৫৯০০০ ছাড়িয়ে গেছে।

বিষয়টা দিনশেষে একটু চমকপ্রদই। কারণ বছরের পর বছর, এই দেশটার সমর্থন বাংলাদেশের বহু মানুষ একদম নি:স্বার্থভাবে করে গেছে। এত বছর বাদে, সেই উচ্ছ্বাস এবার তাদের কান পর্যন্ত গেছে। এর আগেও হয়তো গিয়েছিল। তবে এবারের মতো শোরগোল আর কখনোই হয়নি।

আর বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়েও সম্ভবত এর আগে কখনোই কোনো দেশে সমর্থক দল তৈরি হয়নি। যেটা এবার অপ্রত্যাশিতভাবে আর্জেন্টিনায় হয়েছে। বাংলাদেশি আর্জেন্টাইন ভক্তদের জন্য এ ভালবাসা বলতে গেলে জলোচ্ছ্বাসের মতোই ভেসে যাওয়ার মতন। হোক সেটা সহস্র মাইল দূরের কোনো দেশ। কিন্তু এমন ভালবাসায় কোনো মিথ্যে নেই। একই ভাবে, এমন আবেগকে ঠুনকো বলেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

– উইজডেন অবলম্বনে

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link