More

Social Media

Light
Dark

দ্য সুপারম্যান ফ্রম কানাডা

ক্রিকেটের একদম গোড়ার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে কানাডার নাম। যদিও, ১৯৬৭ সালে আইসিসির সহযোগী দেশ হিসেবে সদস্যপদ লাভ করে কানাডা ক্রিকেট। তবে ১৯৭৯ বিশ্বকাপের পর প্রায় ২৪ বছর বিশ্বকাপের মঞ্চে আর জায়গা করতে পারেনি দেশটি। এরপর এক অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত অলরাউন্ডারের দাপুটে পারফরম্যান্সে ২০০৩ সালে ২৪ বছর পর আবারও খেলার সুযোগ পায় কানাডা। সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে কানাডা ক্রিকেটের মান তখন বেশ উপরেই ছিল।

সম্ভাবনাও ছিল পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ লাভের। ওই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় দিয়ে দারুন শুরু করে কানাডা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি কানাডা ক্রিকেটকে পুনরায় মাথা তুলে দাঁড় করিয়েছিলেন সেই অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত জন ডেভিসন। যাকে বলা হয় এক ম্যাচের বিস্ময়! মাত্র ৩২ ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ারে ওই এক সেঞ্চুরিতে তিনি বনে গেছেন কানাডার রেকর্ড বয়!

২০০৩ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়। ২৪ বছর পর বিশ্বকাপের মঞ্চে ফিরেই কানাডার জন্য দুর্দান্ত শুরু। তবে পরের ম্যাচে কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে ব্যাকফুটেই কানাডা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শুধু হারই নয় লজ্জাজনক এক পরাজয়!

ads

ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানে অল আউট হবার রেকর্ড গড়ে কানাডা! লঙ্কানদের বিপক্ষে মাত্র ৩৬ রানেই গুটিয়ে গিয়ে লজ্জাজনক রেকর্ডে নাম লেখায় আইসিসির এই সহযোগী দেশটি। এমন লজ্জার রেকর্ডের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে সকলের প্রত্যাশা ছিল আবারও হয়তো এমন কোনো রেকর্ডের জন্ম দিবে কানাডা! কানাডা ক্রিকেটের বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন!

তবে সেই লজ্জাজনক রেকর্ড ছাপিয়ে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে কানাডা ক্রিকেটের মান রক্ষা করেন ডেভিসন!

নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে নেমে জন ডেভিসনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ওপেনিং জুটিতেই আসে ৯৬ রান! এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও মাত্র ৬৭ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন ডেভিসন! আর এর মধ্যে দিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন এই কানাডিয়ান ওপেনার।

১৯৮৩ সালে ভারতীয় অলরাউন্ডার কপিল দেবের করা ৭২ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েন ডেভিসন। অবশ্য ২০০৭ বিশ্বকাপেই ৬৬ বলে সেঞ্চুরি করে এই রেকর্ড ভেঙে দেন ম্যাথু হেইডেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে, এই আসরের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক বনে যান কেভিন ও’ব্রায়েন (৫০)। এখন এই রেকর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার এইডেন মার্করামের দখলে।

ডেভিসনের সেঞ্চুরির পরেও বাকিদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় মাত্র ২০২ রানেই গুড়িয়ে যায় কানাডা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ক্যারিবিয়ানরা। ডেভিসনের সেঞ্চুরিটা যেন হজম কর‍তে পারেনি ক্যারিবিয়ানরা। লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে মাত্র ২০.৩ ওভারেই তাণ্ডব চালিয়ে জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা!

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার কানাডা অংশের ক্যাম্পবেল নদী বন্দর এলাকায় অস্ট্রেলিয়া বংশোদ্ভূত এক দম্পতির ঘরে জন্ম নেন জন ডেভিসন। অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত হওয়ায় দুই দেশেরই নাগরিকত্ব পেয়ে যান এই ব্যাটার। পরবর্তীতে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন ডেভিসন। ভিক্টোরিয়ার হয়ে শেফিল্ড শিল্ডে খেলার কথাও ছিল তাঁর!

এরপর সেখান থেকেই কানাডা ক্রিকেটের এক মেইলে পাড়ি জমান কানাডায়। নিজ জন্মভূমির ডাকে সাড়া দিয়ে গায়ে জড়ান কানাডা ক্রিকেটের জার্সি। ডেভিসন এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, ‘যখন আমার বয়স ১৮ বছর। আমি শুনেছিলাম নিল ম্যাক্সওয়েল ফিজির হয়ে ক্রিকেট খেলেছে। আমি বিস্মিত হয়ে ভাবছিলাম কানাডারও তো ক্রিকেট টিম আছে। আমি কানাডা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে একটা চিঠিও পাঠাই। তবে দশ বছর আমি এর কোনো উত্তর পাইনি। অবশেষে যখন আমি ভিক্টোরিয়ার হয়ে খেলছিলাম তখন তারা আমাকে জানায় আমি কানাডার হয়ে খেলতে ইচ্ছুক কিনা।’

কানাডার হয়ে খেলতে চান এই কথাটা অজি তারকা গ্রেগ চ্যাপেলকে বলার পর অবশ্য তিনি না বলেননি। বরং চ্যাপেলের ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়াতেই ডেভিসন পাড়ি জমান কানাডায়।

২০০১ আইসিসি ট্রফিতে কানাডার জার্সিতে দুর্দান্ত পারফর্ম করে কানাডাকে ২০০৩ বিশ্বকাপে পৌঁছাতে সাহায্য করেন ডেভিসন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরি ছাড়াও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ২৫ বলে ফিফটি করে বিশ্বকাপ ইতিহাসের তৃতীয় দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন ডেভিসন!

৬২ বলে ৭৫ রানের অসাধারণ ইনিংস উপহার দেন দলকে। এরপর ২০০৭ বিশ্বকাপেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩ বলে ফিফটি করেন ডেভিসন! এর প্রায় চার বছর পর ২০১১ বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় হোম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এই কানাডিয়ান তারকা।

কানাডার হয়ে ৩২ ওয়ানডেতে ২৭ গড়ে ১০৪ স্ট্রাইক রেটে ৭৯৯ রান করেছেন এই ওপেনার। আছে ১ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটি। এছাড়া ৫ টি-টোয়েন্টিতে ৯ গড়ে করেছেন মাত্র ৪৪ রান। ঘরোয়া ক্রিকেটে ১২৯ ম্যাচে করেছেন প্রায় ৩ হাজার রান। বল হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪০ ও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়েছেন প্রায় ২০০ উইকেট! তিন ফরম্যাট মিলিয়ে টানা সর্বোচ্চ ডাকের (৪) লজ্জার রেকর্ডেও নাম আছে ডেভিসনের।

উইন্টন ডেভিস, ট্রেভর চ্যাপেল, কলিস কিং, গ্যারি গিলমর, তারিক ইকবালরা যেমন কোনো একটি বিশেষ ম্যাচের জন্য ইতিহাসের পাতায় স্মৃতি হয়ে আছে! তেমনি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভরাডুবির পর জন ডেভিসনের সেই দাপুটে সেঞ্চুরিই কানাডা ক্রিকেটকে আবার মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link