More

Social Media

Light
Dark

অ্যাশেজ ১৯৯৭, ভিন্টেজ ম্যাকগ্রা

অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী ডেনিস লিলি নাকি প্রথম দর্শনে বিশেষ কিছু খুঁজে পাননি এই ছেলেটির মাঝে। তাঁর উচ্চতা আর লিকলিকে শারীরিক গঠনের জন্যে ধরেই নেয়া হয়েছে একে দিয়ে আর যাই হোক অন্তত পেস বোলিং হবে না।

অথচ এই ছেলেটিই পরবর্তীতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে পেস বোলিং দিয়ে বিশ্বব্যাপী নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। সতীর্থরা তাঁকে ভালোবেসে ডাকত ‘দ্য পিজিয়ন’ বা কবুতর নামে। গ্লেন ম্যাকগ্রা ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত চাটি বিশ্বকাপ খেলেছিলেন, এই সময় অস্ট্রেলিয়া চার বারই ফাইনালে পৌঁছেছিল। এর মধ্যে তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়! ম্যাকগ্রা বিশ্বকাপে ৭১ টি উইকেট নেন, যা বিশ্ব ক্রিকেটে রেকর্ড হয়ে টিকে আছে আজো।

নাহ, ম্যাকগ্রা অন্যসব আগ্রাসী পেসারদের মত ছিলেন না। নিজের সীমাবদ্ধতা জেনেই তাঁর বোলিংকে কিভাবে ভিন্নভাবে পরিণত করা যায়, ব্যাটারদের বধ করার জন্য নিত্যনতুন কৌশল রপ্ত করা যায় সেই চেষ্টায় মগ্ন থাকতেন তিনি।

ads

গ্লেন ম্যাকগ্রার বিশেষত্ব ছিল বলকে দুই দিকেই সুইং করতে পারতেন তিনি। আর টানা স্পেলে একের পর এক স্টাম্প লক্ষ্য করে বল করার ধরণটা সহজাত ছিল তাঁর জন্য। ম্যাকগ্রার বড় শক্তি ছিল নিখুঁত লাইন আর লেংথের মিশ্রণ। সাথে ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার সুবাদে উইকেট থেকে পাওয়া অতিরিক্ত বাউন্স তাঁর বোলিংকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল।

১৮৮২ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া ক্রিকেট ইতিহাসের পুরনো এবং মর্যাদাকর অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজটি ‘অ্যাশেজ’ নামে পরিচিত হয়। সহজ কথায় ছাইদানির দখল নিয়ে যে লড়াই তাই অ্যাশেজ।

এক টেস্টের প্রথমঅ্যাশেজ টেস্ট সিরিজটি জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল ইংলিশরা। মজার ব্যাপার হল অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের সাথে হারবে এই ব্যাপারটি মেনে নিতেই পারতেন না গ্লেন ম্যাকগ্রা। এই দিকটিতে বড্ড গোড়ামি কাজ করতো তাঁর মাঝে। ১৯৯৭ সালের অ্যাাশেজ সিরিজটি ছিলো ছয় টেস্টের সিরিজ।

ছয় টেস্টের মধ্যে ইংল্যান্ড প্রথম ও শেষ টেস্টটিতে জয়লাভ করে, অস্ট্রেলিয়া জয়লাভ করে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম টেস্টসহ তিনটি টেস্ট এবং স্বিতীয় টেস্টটি বৃষ্টির কারণে ড্র হয়। অর্থাৎ সেবার অস্ট্রেলিয়া ৩-২ ব্যবধানে জিতে নেয় সিরিজটি।

ম্যাকগ্রার টেস্ট ক্যারিয়ারের একটি উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে রইবে ১৯৯৭ সালের অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটি। এই টেস্টে ম্যাকগ্রা প্রথম ইনিংসে মাত্র ২০.৩ ওভার বোলিং করে ৮ মেইডেন ওভারসহ মাত্র ৩৮ রানের বিনিময়ে নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের আটটি মূল্যবান উইকেট।

১৮৮৮ সালের পর লর্ডসে মাত্র ৭৭ রানে অলআউট হওয়ার ঘটনাটি ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বনিম্ন টেস্ট ইনিংস। যার নেপথ্যের নায়ক ছিলেন লিকলিকে সেই গ্লেন ম্যাকগ্রা নামের ছেলেটি। ৩৮ রানে ৮ উইকেট নিয়ে নাম ওঠান লর্ডসের অনার্স বোর্ডে এবং বৃষ্টি-বিঘ্নিত দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আরেকটি উইকেট নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের এই লজ্জাজনক ম্যাচে কোনরকমে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ার জন্য তাঁদের বৃষ্টির কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। নইলে ম্যাকগ্রা ঝড়ে সেই টেস্টটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর কোন সুযোগই ছিল না তাঁদের জন্য।

ম্যাকগ্রা’র টেস্ট ক্যারিয়ার ছিল অসাধারণ, তিনি ৮০টির উপরে টেস্ট ম্যাচ জয় করেন ও ৫৬৩টি উইকেট নেন। শেন ওয়ার্ন, ব্রেট লি ও জেসন গিলেস্পির সাথে ম্যাকগ্রার বোলিং জুটি খুবই জনপ্রিয় ছিল। ১৯৯০ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিশ্ব ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃত্বে বোলিং সাইডে নেতৃত্বদানকারী কিংবদন্তি হলেন ম্যাকগ্রা। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করার কাণ্ডারি গ্লেন ম্যাকগ্রার নাম পেস বোলিং ইতিহাসে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link