More

Social Media

Light
Dark

উত্তাল পদ্মার ঢেউ

নিয়মিত অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের ইনজুরির সুবাদে দ্বিতীয় পালায় পেয়েছিলেন নেতৃত্বের ভার। এর আগে প্রথমবারের অধিনায়কত্বের স্বাদও মোটেই সুস্বাদু ছিল না। সিরিজগুলোতে চূড়ান্ত লজ্জাজনক পরাজয়ের পর, দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছিল ২০০৩ বিশ্বকাপও। যাচ্ছেতাই ভাবে হেরেছিলেন কেনিয়া ও কানাডার বিপক্ষে। সেবার বিশ্বকাপে মাঠের বাইরের আচরণ নিয়েও উঠেছিল সন্দেহ। হারিয়েছিলেন নেতৃত্বও। বছর তিনেক পর যখন কাঁধে আবার সেই নেতৃত্বের ভার টের পেলেন তাঁর কি অনুভূতি হয়েছিল, কে জানে!

কি আশ্চর্য দেখুন, তাঁর নেতৃত্বের প্রত্যাবর্তনের সেই ম্যাচেই ঘটনাবহুল এক ম্যাচের জন্ম দিয়েছিল বাংলাদেশ! শাহাদাত হ্যাট্রিক করেছিলেন, পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন, মাশরাফির শেষ বলে ছয় মেরে ব্রেন্ডন টেলর ইতিহাস গড়েছিলেন… আনন্দ-বেদনার মহাকাব্য যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল! শেষ বলে ভিলেন বনে যাওয়া সেই মাশরাফিকেই তিনি ‘নায়ক’ করে ছেড়েছিলেন পরের সিরিজে। তাঁর পরিণত মস্তিষ্কের প্রখরতার প্রথম প্রমাণও বুঝি দিয়েছিলেন।

নতুন বলে বল করে যাওয়া মাশরাফিকে তিনি বোলিংয়ে এনেছিলেন, পরিবর্তিত বোলার হিসেবে। রাসেল-রেজাকে দিয়ে বোলিং ওপেন করিয়েছিলেন। কেনিয়ার বিপক্ষে সেই সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে, পুরনো বলেই মাশরাফি নিয়েছিলেন ছয় উইকেট, যা কি না এখনও মাশরাফির ক্যারিয়ার সেরা।

ads

তবুও সে বছরই শেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর রঙিন পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। পরের বছর শেষ হয়ে গিয়েছিল সাদা পোশাকের ক্রিকেটও। যদিও আনুষ্ঠানিক বিদায় বলেননি, তবুও মাত্র একত্রিশেই ইতি ঘটে গিয়েছিল, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের। ‘বুড়ো’ হয়ে গেছেন অপবাদ দিয়ে ক্রিকেট নিয়ন্ত্রকেরা তাঁকে আর দলের হয়ে খেলার সুযোগ দেননি।

শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৫-এ এশিয়া কাপে, ভারতের বিপক্ষে। তখন উনিশ বছরের টগবগে তরুণ। সেই যে শুরু করেছিলেন আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি, পরের একযুগ। বাংলাদেশকেও ভাবতে হয়নি স্ট্যাম্পের পেছনের নির্ভরতা নিয়ে। তর্ক-সাপেক্ষে বাংলাদেশের সেরা উইকেট রক্ষকের খেতাব পেয়েছিলেন বহু আগেই।

অবসরের এই এত বছর পরও, এখনও তিনিই বাংলাদেশের সেরা উইকেটরক্ষক। নিজের সময়ে ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের পরও বছর চারেক খেলেছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেট। সেখানে রাজশাহী বিভাগকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য উচ্চতায়।

ক্রিকেটে তাঁর মেধার স্বার্থক ব্যবহার বুঝি সেখানেই দেখিয়েছিলেন। রাজশাহী বিভাগের সব ক্রিকেটারকে এক সুতোয় বেঁধে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছিলেন তিনি।

‘আমরা পদ্মা পাড়ের উত্তাল ঢেউ হারতে শিখিনি।’ স্লোগানে উজ্জীবিত করে পরপর চার বার শিরোপা জিতিয়েছিলেন রাজশাহীকে, দেখিয়েছিলেন তাঁর পরিকল্পনার সফল রূপায়নও। তাই জুনাঈদ-জহুরুলরা ‘মাসুদ ভাই’ এর কথা বলতে গিয়ে সম্মান আর ভালোবাসায় কেঁপে ওঠেন। জাতীয় দলের খেলোয়াড় সুলভ অহমিকা একপাশে রেখে, অকপটে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন মাঠকর্মীদের মতো যে কোনো কাজে। তাদেরকে যে মাসুদ ভাই এমন শিক্ষাই দিয়েছেন।

বিভাগীয় পর্যায়ের ক্রিকেটকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন তিনি। তাই রাজশাহীও হয়তো তাঁর কাছে অনেকটা ঋণী। তবে জাতীয় দলকেও কি তিনি কম দিয়েছিলেন? ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই টেস্ট সেঞ্চুরির কথা না-হয় বাদই দিলাম। খালেদ মাসুদের সেই দুটি ছক্কার কথা মনে আছে তো?

বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরেক উচ্চতায় তুলে দেয়া আইসিসি ট্রফি জয়ে, কেনিয়ার বিপক্ষে ৭ বলে ১৫ রানের ছোট্ট ইনিংসে ‘অমূল্য’ দুটি ছক্কা যে মেরেছিলেন তিনি। সেমিফাইনালে, স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭০ রানের ইনিংসটিও বা পিছিয়ে থাকে কিভাবে? ওই সময় অমন ইনিংসগুলো খেলে ‘ভিত’ গড়েছিলেন বলেই না বাংলাদেশ ক্রিকেট আজকের উচ্চতায় পৌছতে পারলো!

তাঁর মস্তিষ্ক প্রসূত থিওরি অনুসরণ করে, রাজশাহী বিভাগ পেয়েছে নিজস্ব জিমনেশিয়াম, তৈরী করেছে নিজস্ব অনুশীলন ব্যবস্থাও। প্রয়োজন মেটাতে তিনি স্বল্প খরচেই বাতলেছেন, যথাযোগ্য অত্যাধুনিক অনুশীলন কাঠামো। কি রকম? নেটের প্রয়োজন সামলেছেন নাইলনের দড়ি কিনে, জেলেদের দিয়ে বুনে নিয়ে! কি বুদ্ধি, তাই না?

ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিও তাঁর অধীনে চলছে সুন্দর এক স্বপ্নকে লালন করে, সঠিক পথ ধরে। তাঁর এমনতর অভিনব চিন্তা-ভাবনা ও শুভ পরিকল্পনা দিয়ে তিনি একদিন হয়তো বাংলাদেশ ক্রিকেটেও কোনো বৃহত্তর কর্মযজ্ঞে অংশ নিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link