More

Social Media

Light
Dark

গ্লেন ম্যাকগ্রা বনাম ওয়াসিম আকরাম, যে বিতর্কের নেই কোনো সমাপ্তিরেখা

কে সেরা, ম্যাকগ্রা নাকি আকরাম? এমন একটা প্রশ্নে মুহূর্তের মধ্যে দ্বিখন্ডিত হয়ে যেতে পারে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। কারো কাছে মনে  হয়ে গ্লেন ম্যাকগ্রা সেরা। আবার কেউ হয়ত বলবেন ওয়াসিম আকরামই ছিলেন সেরা। এই দুই মহারথীকে নিয়ে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতাও হতে পারে। এই মহীরুহুর মধ্যে থেকে একজন শ্রেষ্ঠ পেসার খুঁজে বের করা তবুও একটু কঠিনই বটে।

কি দুর্ধর্ষ একটা সময় পার করেছেন তারা দুইজনই। ব্যাটারদের ত্রাস ছিলেন। প্রচণ্ড ধারাবাহিক আর বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের অনন্য উদাহরণই যেন ম্যাকগ্রা আর আকরাম। দুইটা দশক মাতিয়ে রেখেছিলেন এই দুইজন। একসাথেও দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা আরও এক দশক।

পরিসংখ্যানের পাতায় অবশ্য ম্যাকগ্রা এগিয়ে থাকছেন ওয়াসিম আকরামের চাইতে। বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে। ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করে  ওয়াসিম আকরাম। ওয়ানডে ফরম্যাট দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর তো রীতিমত বিশ্বকাপও জিতেছেন পাকিস্তানের হয়ে।

ads

ওয়াসিমের বিশ্বকাপ জয়ের পরের বছরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখেন। ওয়াসিম অবশ্য ওয়ানডের চাইতে টেস্ট ম্যাচ বেশি খেলেছেন। তবুও ওয়ানডেতে তার খেলা ম্যাচের সংখ্যা ৩৫৬টি। সেখানে তিনি ২৩.৫২ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৫০২টি।

ওয়াসিমের তুলনায় ওয়ানডে ম্যাচ কম খেলেছেন ম্যাকগ্রা। ২৪৮ ইনিংসে হাত ঘুরিয়ে তিনি উইকেট বাগিয়েছেন ৩৮১টি। নতুন ধারার ওয়ানডেতে তার গড় ছিল ২২.০২। এই একটা পরিসংখ্যানে অবশ্য এগিয়ে রয়েছেন ম্যাকগ্রা। উইকেট শিকারের আগে রান হজম করার বিষয়ে কৃপণতাই দেখিয়েছেন ম্যাকগ্রা।

একই ধরণের চিত্র অবশ্য টেস্ট ক্রিকেট। ২৪৩ ইনিংসে বল করেছনে ম্যাকগ্রা। ২১.৬৪ গড়ে তিনি উইকেট শিকার করেছেন। ৫৬৩টি টেস্ট উইকেট রয়েছে তার নামের পাশে। ওয়াসিম আকরামের নামের পাশে অবশ্য শোভা পাচ্ছে ৪১৪ উইকেট। ম্যাচের সংখ্যা কম বলেই হয়ত উইকেটের সংখ্যাটা কম। ১৮১টি টেস্ট ইনিংসে বল করেছেন ওয়াসিম। গড় তার ২৩.৬২।

এই দুই পরিসংখ্যানে ওয়াসিমের চাইতে খালি চোখে অন্তত ম্যাকগ্রাই অবশ্য এগিয়ে আছেন। তবে বাস্তবিক চিত্রটা হয়ত অনেকের কাছেই ভিন্ন ভাবে উপস্থাপিত হতে পারে। পাকিস্তানের ফিল্ডিং বরাবরই হাস্যরসের জন্ম দেয়। তাদের ফিল্ডিং দূর্বলতা বহুকাল ধরে চলা এক প্রথা। সেটা ওয়াসিম আকরামের আমলেও ছিল। ঠিক কারণেই হয়ত পরিসংখ্যানে খানিকটা পিছিয়ে রয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে তুখোড় অস্ট্রেলিয়ার দলের হয়ে খেলেছেন ম্যাকগ্রা। সতীর্থদের পূর্ণ সহয়তাই তিনি পেয়েছেন। ঠিক সে কারণে তার গড় কম ও উইকেট সংখ্যা বেশি। এমন একটা যুক্তি চাইলেই দাঁড় করানো যায়। সেদিক থেকে আবার অনেকেই ওয়াসিমকে দুর্ভাগাই ভাববেন।

তবে তিনি নিজের সেই দুর্ভাগ্যকে দূরে ঠেলে দিতে চেয়েছেন নিজের বোলিং বৈচিত্র দিয়ে। অন্তত এই দিকটায় তিনি এগিয়ে আছেন। আনপ্রেডিক্টেবল সুইং করা বলগুলো ব্যাটারদের জন্যে ছিল এক একটি কামানের গোলা। অবশ্য খুব বেশি বৈচিত্র্য না থাকলেও ম্যাকগ্রা ছিলেন প্রচণ্ড ধারাবাহিক। তার লাইন-লেন্থের সাথে অবাধ ধারায় বহমান ছিল তার পারফরমেন্সের নদী।

তাতে করে বিশ্বকাপে তিনি উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন। ৩৯ ইনিংসে স্রেফ ১৮.১৯ গড়ে উইকেট নিয়েছেন। যেখানে ওয়াসিমের গড় ছিল ২৩.৮৩। তিনি ৩৬ ইনিংসে বল করেছিলেন। উইকেট শিকার করতে পেরেছিলেন ৫৫টি। অন্যদিকে ম্যাকগ্রা উইকেট নিয়েছেন ৭১টি।

অতএব উনিশ-বিশের ফারাক ম্যাকগ্রা আর ওয়াসিমের মধ্যে। সময় আর সতীর্থদের সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে সেরা কে বের করাটা বেজায় কঠিন এক কাজ। সে কাজ স্তব্ধ করে দিয়ে, বিতর্ক অবশ্য চালিয়েই যাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link