More

Social Media

Light
Dark

ভুসি সিবান্দা ও দ্য মাইডাস টাচ

‘পৃথিবী আর স্বর্গের মাঝে আরো অনেক কিছু আছে হোরাটিও। তোমার দর্শনের জগতের চাইতেও বেশি কিছু।’

      -হ্যামলেট, উইলিয়াম সেক্সপিয়র।

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের জন্য ১৯৯০ সালটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সে বছরই গিভমোর ম্যাকোনি, ড্যানমোর প্যাডানো আর স্টিভেন ম্যাংগোংগো চেষ্টা করছিলেন একটা ক্রিকেট ক্লাব খোলার। কিন্তু কোনোভাবেই ক্লাবের জন্য জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তবে বহু চেষ্টার পর চার্চিল হাই স্কুল তাঁদেরকে নিজেদের ক্রিকেট মাঠ ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়।

ads

তবে একটা ঝামেলার ব্যাপার ছিল, তাঁরা চাচ্ছিল ক্লাবের নাম দেয়া হোক ওল্ড উইন্সটনিয়ান্স। এই ব্যাপারটাতেই মতানৈক্য ঘটে ম্যাকোনিদের সাথে, তাঁরা কেবল মাঠই চাচ্ছিলেন। ক্লাবের সব ব্যাপারে নাক গলানো কর্তপক্ষ নয়। 

শুরুতে মেনে নিলেও ২০০১ সালে ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় তাকাসিংগা ক্রিকেট ক্লাব, সংক্ষেপে তাকাসিংগা সিসি। নামের এই পরিবর্তনের ব্যাপারে ম্যাকোনির ব্যাখ্যা ছিল, ‘আমরা ক্লাবের নাম পরিবর্তন করেছি নিজেদের এবং নিজেদের গোত্রের স্বীকৃতি দিতে। আমরা কালো মানুষের ক্লাব আর উইন্সটন কোনোভাবেই আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাকাসিংগা মানে হলো আমরা সাহসী এবং আমরা লড়াই করে যাবো। এটা জিম্বাবুয়ের সেই সব হাল না ছাড়া কালো মানুষেরই প্রতিনিধিত্ব করে যারা কোনো কিছু মনস্থির করলে শেষ দেখা না পর্যন্ত হাল ছাড়ে না।’

নিজেদের ক্লাবের দর্শন সম্পর্কে সেদিন বলেছিলেন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাকোনি, ‘আমরা ক্রিকেটটাকে জিম্বাবুয়ের জনমানুষের খেলা বানাতে চেয়েছি। আমাদের নিজেদের ছেলেরা যাতে ক্রিকেট খেলতে পারে। যারা অর্থের জন্য অন্য শহরে গিয়ে ক্রিকেট শিখতে পারে না তাঁদের জন্য। আমরা সকল স্তরের মানুষের কাছে ক্রিকেটটাকে পৌঁছে দিতে চেয়েছি।’ 

সে সময়টাতে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের বৃত্তি নিয়ে টাটেন্ডা টাইবু, স্টুয়ার্ট মাৎসিকেনেরি, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, ভুসিমুজি ‘ভুসি’ সিবান্দা উইন্সটন স্কুলেই পড়তেন। সিবান্দা পরবর্তীতে সিএফএক্স ক্রিকেট একাডেমিতেও ছিলেন। সেখানেই তাকাসিংগাতে এসে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের তত্ত্বাবধানে ক্রিকেটের প্রতি আরো অনুরক্ত হয়ে পড়েন সিবান্দা। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের অধীনেই সিবান্দা ধীরে ধীরে ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে আরো পরিণত হয়ে ওঠেন।

জিম্বাবুয়ের হয়ে ১২৫ ম্যাচে খেলে ১৮ শতকে ৩৩.৩৬ গড়ে ৭,৩৪১ রান করেন। এছাড়া বল হাতেও নিয়েছেন ৩৮ উইকেট। এর মাঝে লাল বলের ক্রিকেটে তিনি খেলেছেন ১৪ ম্যাচ, সংগ্রহ করেছেন ৫২১ রান। দুই ফিফটির পাশাপাশি সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ৯৩ রানের। সিএফএক্স ক্লাবের হয়েই লোগান কাপে ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক সিবান্দার। যদিও সে ম্যাচে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি, আউট হন যথাক্রমে ৫ এবং ১৮ রান করে।

এখনও পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে ১১ বার দল পরিবর্তন করেছেন সিবান্দা। সবচেয়ে বেশি সময় অবশ্য খেলেছেন, মিড ওয়েস্ট রাইনোস এর হয়ে। তাঁদের হয়ে পাঁচ বছরে ৪৫ ম্যাচ খেলে ৩৯.৪৭ গড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রান করেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই সময়টাতে ফিফটির চাইতে তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যাই বেশি। ১০ ফিফটির বিপরীতে করেছেন ১৪ সেঞ্চুরি। 

মার্ক ডওসন তাঁর বই ‘ইনসাইড এজ’ এ লিখেন, সিবান্দা হঠাৎ করে ২০০৯-১০ মৌসুমে মাইডাস টাচ পেয়ে যান। লোগান কাপে ১৪ ম্যাচে অতিমানবীয় গড়ে রান করে ১৬১২। জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিনি এক মৌসুমে হাজার রানের কোটা পূরণ করেন। ২১৫ রানের সর্বোচ্চ ইনিংসের পাশাপাশি হাঁকান নয়টি সেঞ্চুরি।

এক মৌসুমে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড অবশ্য ভাঙতে পারেননি, ১৭ সেঞ্চুরি নিয়ে সে রেকর্ডের অধিকারী ইংলিশ কিংবদন্তি ডেনিশ কম্পটন। ১৯৪৭ সালেই এই রেকর্ড গড়া কম্পটন অবশ্য ম্যাচ খেলেছিলেন ৩০ টি, যা কিনা সিবান্দার চাইতে বেশি। ১৮ সেঞ্চুরির বেশিরভাগই এসেছিল চ্যাম্পিয়নশিপের বিভিন্ন ম্যাচে।

তবে, সিবান্দাই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার প্রথম যিনি সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির এই তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছিলেন। ২৬ বছর বয়সী এই ব্যাটার অবশ্য পরবর্তীতে ফর্মটা ধরে রাখতে পারেননি, কিছুটা নীরবে-নির্ভৃতেই হারিয়ে গেছেন। 

সিবান্দা তাঁর ক্যারিয়ারের সর্বশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ২০১৫ সালে। মাউন্টেইনার্সের হয়ে সে ম্যাচে একমাত্র ইনিংসে ব্যাট করে খেলেন ৫৯ রানের ইনিংস। ৩৩ বছর বয়স হলেও সিবান্দার এখনো জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে দেবার মতো অনেক কিছু আছে।

অন্তত কোচ হিসেবে হলেও তিনি জিম্বাবুয়েকে অনেক কিছু দেয়ার সামর্থ্য রাখেন। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের কাছে থেকে পাওয়া ক্রিকেটের আলোটা তিনি ছড়িয়ে দিতে চাইবেন জিম্বাবুয়ের ভবিষ্যত ক্রিকেটারদের মাঝে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link