More

Social Media

Light
Dark

বখে যাওয়া বিনোদ

শচীন রমেশ টেন্ডুলকার, ভারতে তার চেয়েও প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান কি আর এসেছিলেন কেউ? স্বয়ং কপিল দেব বলেছেন এসেছিলেন। তিনি হলেন – বিনোদ কাম্বলি। তিনি ক্রিকেটার হিসেবে যাই হন না কেন, ভারতের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা রূপকথার অংশ তিনি।

কাম্বলি হলেন শচীনের স্কুল ক্রিকেটের বন্ধু। দু’জনের বড় হয়ে ওঠাও একই সাথে। স্কুল ক্রিকেটে শচীন-কাম্বলি মিলেই ৬৬৪ রানের অবিস্মরণীয় জুটি গড়েছিলেন, তাতে বিনোদ কাম্বলির রানই ছিল বেশি। এমনকি এরপর বোলিংয়ে ছয় উইকেটও নিয়েছিলেন।

মানে শুরুতেই শচীনের চেয়ে বেশি প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখিয়েছিলেন তিনি! তাহলে, কেন শচীনের মত মহাতারকা না হয়ে, অন্তত গ্রেটদের একজন হতে পারলেন না বিনোদ?

ads

কাম্বলি যেভাবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, তাতে বড় তারকা না হওয়ার কোনো কারণই ছিল না তাঁর। ওই বিখ্যাত জুটির পরের বছরই রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক। প্রথম বলেই ছক্কা। ভারতীয় ক্রিকেট বুঝে, নতুন এক তারকার আগমন ঘটেছে।

১৯৯৩ সালে তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটাও ছিল রাজসিক। প্রথম দুই টেস্টেই পান ডাবল সেঞ্চুরি। টানা দুই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়ার নজীর এর আগে ছিল কেবল স্যার ডন ব্র্যাডম্যান আর ওয়ালি হ্যামন্ডের। এর পরে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে আরো দু’টো সেঞ্চুরি।

কিন্তু, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!

কাম্বলির সেঞ্চুরির মিছিল থেমে গেল এখানেই। ১৯৯৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভারত সফরেই বোঝা যায় তার দুর্বলতা। ক্যারিবিয়ান পেস বোলিংয়ে তিনি ধুঁকছিলেন। শর্ট বল গুলো খেলতেই পারছিলেন না। বিশেষ করে কোর্টনি ওয়ালশের বাউন্সারের সামনে রীতিমত শিক্ষানবিশ মনে হচ্ছিল কাম্বলিকে।

এর ঠিক পরের বছরই টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। চাইলে পরিশ্রম করে ফিরতে পারতেন, কিন্তু মাঠের বাইরের স্টারডমে এতটাই বুঁদ হয়ে ছিলেন যে, পরিশ্রম করে ‘সময় নষ্ট’ করার সময় ছিল না তাঁর।

১৭ টি টেস্ট খেললেও ওয়ানডেটা মোটামুটি নিয়মিতই খেলতেন। কিন্তু, অফফর্ম আর শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত কারণে নয় বার তিনি দল থেকে জায়গা হারিয়ে আবারো ফিরেছেন। সর্বশেষ খেলেন ২০০০ সালে। এর মধ্যে ১৯৯৩ সালে নিজের জন্মদিনে, ১৮ জানুয়ারি সেঞ্চুরি করে নাম লেখান টেন্ডুলকার, রস টেলরদের পাশে।

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইডেন গার্ডেন্স থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হন তিনি। ভারতীয় দর্শকরা সেদিন এতটাই বিশৃঙ্খল হয়ে উঠেছিল যে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই ম্যাচ রেফারির সিদ্ধান্তে ফাইনালে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। কাম্বলির সেই কান্নাটা যেন হয়ে ওঠে তাঁর গোটা ক্যারিয়ারের চিত্র!

কেন পারলেন না বিনোদ কাম্বলি? নারীসঙ্গ, মাদকের অন্ধকার ভূবন, রুপালি জগতের প্রতি আগ্রহ, বিশৃঙ্খল জীবন, পারিবারিক শাসনের অভাব, নৈতিকতার কোনো বালাই না থাকা – এমন অনেক কিছুই সামনে চলে আসে। তবে, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল পরিশ্রমের অভাব।

একটা সময় ক্রিকেটের চেয়ে ক্রিকেটের বাইরের জীবনেই বেশি মনোযোগী হন তিনি। রঙিন দুনিয়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। ২২ গজের চেয়ে তাঁর বিশৃঙ্খলার খবরগুলোই বেশি চাউর হতে থাকে।

বিনোদ কাম্বলির ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ব্যাখ্যাটা দিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে। তিনি বলেন, ‘জীবনের একটা পর্যায়ে প্রতিভা আর দক্ষতা – জীবনের সবচেয়ে বড় দু’টি গুণই অর্থহীন হয়ে যায়। প্রতিভাটাই মূল বিষয় নয়। আপনি কি করতে পারেন তাতে কোনো কিছু আসে যায় না। আপনি কি করেছেন, সেটাই আসল।’

প্রতিভা শচীন আর বিনোদ – দুজনেরই ছিল। কারো কারো চোখে বিনোদের একটু বেশিই ছিল। কিন্তু, শচীনের ছিল অসম্ভব পরিশ্রম আর অধ্যবসায়। এজন্যই তো, বাইশ বছর বয়সেই টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় বিনোদের, আর শচীন নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা ২২ বছর লম্বা করেন।

বাইশ গজের জীবন শেষ করে বলিউড, রাজনীতি অনেক ঘাটের জলই তিনি খেয়েছেন। কিন্তু, কোনোটাতেই ভাগ্য খোলেনি। বরং পারিবারিক অনটন, গৃহকর্মীকে মারধোর কিংবা শারীরিক অসুস্থতার খবরই গণমাধ্যমে বেশি আসতে থাকে।

এর বাইরে তিনি টেলিভিশনে এসে সতীর্থদের দুর্নাম করেছেন, ফিক্সিং নিয়ে স্পর্শকাতর কথা বলেছেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, তাঁর চেয়ে বড় প্রতিভাবান ‘ব্যাড বয়’ ভারতীয় ক্রিকেটে আর আসেনি বললেই চলে!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link