More

Social Media

Light
Dark

দুর্বার এক হৃদকম্পন

একটা চাপা আক্ষেপ নিশ্চয়ই পুড়িয়েছে তৌহিদ হৃদয়কে। সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল তাঁর সামনে। তবে তিনি তো চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। তিনি তো জানেন ফিরে আসতে হয় কি করে। ফিরে আসার ফলটা ঠিক কতটা মধুর, সেটা খুব ভাল করেই জানেন। তাইতো তিনি আগুনে পুড়ে নিজেকে স্বর্ণ হিসেবে পরিণত করেছেন। সুযোগ পেয়েই আলো ছড়াচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে।

তৌহিদ হৃদয়, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয় করা দলের টপ অর্ডারের ব্যাটার ছিলেন তিনি। শিরোপা জয়ের দীক্ষাটা তিনি নিয়ে এসেছিলেন যুব পর্যায় থেকে। তবে জাতীয় দলের দরজাটা তাঁর জন্যে এখনই খুলে যায়নি। বাকিদের মত তড়িঘড়ি করে তিনি চলে আসেননি বাংলাদেশ জাতীয় দলের ডেরায়। তিনি বরং আলোচনায় ছিলেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম করে একটা বার্তা দিয়ে রাখছিলেন, তিনি প্রস্তুত।

তিনি ঠিক পরিণত হয়েই জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছেন। পরিণত হওয়ার এই যাত্রার শুরুটা সম্ভবত গেল আসরের বিপিএল ফাইনাল থেকে। সেবার হৃদয় খেলেছিলেন ফরচুন বরিশালে। সাকিবের নেতৃত্বাধীন দলটা উঠেছিল ফাইনাল অবধি। তবে মাত্র একটি রান দূরত্ব গড়ে দেয় শিরোপার। সেই দূরত্বটুকু তৈরি হতে সামনে থেকে দেখেছিলেন তৌহিদ হৃদয়। তিনি তখন ছিলেন বাইশ গজে। নয় বলের নয় রানের ইনিংসটিই কোন না কোন ভাবে দায়ী বরিশালের পরাজয়ের।

ads

সেই দায়ভারটা নিজের কাঁধে নিয়েই তিনি যেন নিজেকে বদলে ফেলার ব্রত করেন। আর সে বদলে যাওয়া তৌহিদ হৃদয়ের সুফলটা এবার ভোগ করছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। এবারের বিপিএলটাকে হৃদয় নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। নিজের মধ্যে থাকা প্রতিভার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন। তিনটি অর্ধশতকের দেখা ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছেন তরুণ এই ব্যাটার।

সিলেট স্ট্রাইকার্স এবারের বিপিএলে ছুটছে দুর্বার গতিতে। সেই গতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন তৌহিদ হৃদয়। প্রতিটা ম্যাচেই তিনি বিস্ফোরিত হচ্ছেন। সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয় তিনি সেই সব বিস্ফোরক ইনিংসগুলোকে খানিকটা লম্বা করতে পারছেন প্রতিনিয়ত। ঢাকা ডমিনেটরের বিপক্ষে ৮৪ রানের ইনিংসটি তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার সেরা। তবে এখানেই থেমে যাওয়ার কোন আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। তিন ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে তিনি তিন ইনিংসেই করেছেন অর্ধশতক।

তবে তিনি চিরায়ত বাংলাদেশি ব্যাটারদের মত ধীরগতির ইনিংস খেলেননি। বরং তিনি এখন পর্যন্ত নিজের বিধ্বংসী রুপটাই দেখিয়ে যাচ্ছেন বিপিএলের নবম আসরে। ১৬৭ স্ট্রাইকরেটে হৃদয় এখন পর্যন্ত রান তুলে রয়েছেন সবার উপরে। গড়টাও দুর্দান্ত তাঁর, ৬৫। এই ব্যাটারে রীতিমত মুগ্ধ গোটা বাংলাদেশ। উইকেটের চারিদিকেই নান্দনিক সব শট খেলতে পারদর্শী হৃদয়। এখন পর্যন্ত সাবলীল হৃদয়ের দেখা মিলছে।

বাংলাদেশি ব্যাটারদের মাঝে পেশি শক্তির ব্যবহারটাও ঠিকঠাক দেখা যায় না। সেদিক থেকেও ভিন্ন হৃদয়। দশখানা বল তিনি এখন অবধি মাঠ ছাড়া করেছেন। তিনি যেন এই বিপিএল দিয়েই তাঁর দিকে সব আলো কেড়ে নেওয়ার অপেক্ষায়। জাতীয় দলের জার্সিটা তিনি গায়ে চাপাতে প্রস্তুত, সে বার্তা তো রীতিমত স্পষ্ট। দেশ-বিদেশি বোলারদের বিপক্ষে দারুণ সব ইনিংসগুলোই তো তেমন আভাস দেয়।

তবে একটা শঙ্কা রয়েই যায়। এখন পর্যন্ত জাতীয় দলে তরুণদের বিকশিত হওয়ার মাত্রাটা অতীব ক্ষীণ। বিপিএলে পারফরম করে জাতীয় দলে যাওয়া বহু তরুণ খাবি খেয়ে তলিয়ে গেছেন অতলে। উদাহরণ, হৃদয়ের যুব দলের সতীর্থ শামীম হোসেন পাটোয়ারি। তবে হৃদয় মোটেও সময়ের আগে সুযোগ পেয়ে যাবেন, এমনটা বলবার সুযোগ নেই। কেননা ঘরোয়া ক্রিকেটেও তো তিনি নিয়মিত পারফরমার। ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বিপিএলের মঞ্চেও।

সুতরাং অতিদ্রুত হৃদয় একটি সুযোগের প্রত্যাশা করতেই পারেন। তবে এর আগে সিলেটকে নিয়ে তিনি নিশ্চয়ই ফাইনাল খেলতে চাইবেন। আর সেই ফাইনালে নিজের বীরত্বগাঁথা লিখবেন তাঁর ব্যাট দিয়ে। সেই প্রত্যাশা ফর্ম বিবেচনায় হৃদয় তথা বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা করতেই পারেন। ব্যাটার হৃদয়ের নামের পাশে থাকা কালিমা মুছে ফেলার এটাই তো মোক্ষম সুযোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link