More

Social Media

Light
Dark

টিম ডেভিড, অস্ট্রেলিয়ার প্যান্ডোরার বাক্স

বাবা রড ডেভিড ছিলেন পেশায় প্রকৌশলী। কিন্তু খেলেছিলেন ক্রিকেটও। জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ান হলেও ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি খেলেছিলেন সিঙ্গাপুরের হয়ে। তবে ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ারটা ছিল ঐ ততটুকুই। সিঙ্গাপুরের হয়ে খেলেছেন, কিন্তু কখনোই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি। বাবার সেই আক্ষেপ মিটিয়েছেন পুত্র টিম ডেভিড। সিঙ্গাপুরের হয়ে তো খেলেছেনই, সাথে এই কিছুদিন আগেই বাবার দেশ অস্ট্রেলিয়ার হয়েও অভিষিক্ত হয়েছেন টিম ডেভিড।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে মাতিয়ে বেড়াচ্ছিলেন অনেক দিন ধরেই। বিগব্যাশ, আইপিএল থেকে শুরু করে পিএসএল, সিপিএল- সব জায়গাতেই দারুণ পারফর্ম করছিলেন। তাই অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকদের রাডারে টিম ডেভিড চলে আসেন দ্রুতই। গুঞ্জনও তৈরি হয়েছিল, বোধহয় এবারের বিশ্বকাপেই অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে দেখা যাবে টিম ডেভিডকে। গুঞ্জন অবশেষে সত্যি করেই অস্ট্রেলিয়া তাদের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ভেড়ায় ডেভিডকে।

বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে ভারত সফরে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই দলে ছিলেন টিম ডেভিডও। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কেমন পারফর্ম করেন ডেভিড তা দেখার জন্য মুখিয়ে ছিল পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। অবশ্য আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতার কারণে প্রায় সবাই টিম ডেভিডকে নিয়ে আশাবাদীই ছিল।

ads

কিন্তু, সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ১৮ আর ২ করায় শঙ্কা একটু জেগেছিল বটে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টিম ডেভিড হয়তো নিজেকে অতটা রাঙাতে পারবে না, এমন শোরগোলও শুরু হয়ে গিয়েছিল এর মধ্যেই। কিন্তু টিম ডেভিড পরের ম্যাচেই আবির্ভূত হলেন বিধ্বংসী রূপে।

সিরিজ নির্ধারণী এ ম্যাচে টিম ডেভিড যখন উইকেটে আসলেন তখন অস্ট্রেলিয়ার রান ৪ উইকেটে ৮৪। সাথে ক্রিজে ছিলেন জশ ইংলিস। ১৪ তম ওভারে এসে ইংলিস আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। কিন্তু ঐ একই ওভারে পরের ব্যাটার ম্যাথু ওয়েড আউট হয়ে গেলে চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। কারণ এরপরে স্বীকৃত তেমন ব্যাটারই নেই।

তার উপর ওপেনারদের ভাল শুরুর কারণে বড় ইনিংস সংগ্রহের দিকে চোখ ছিল অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু হঠাৎই দুই উইকেট পড়ে যাওয়ায় সে সম্ভাবনায় কিছুটা আশঙ্কা জমে। তবে উইকেটে ছিলেন টিম ডেভিড। আগের দুই ম্যাচে খুব একটা ভাল না করায় এ ম্যাচে ইনিংস বিল্ড আপ তৈরি করার কাজটা নিজের কাঁধেই নিয়েছিলেন তিনি।

ভারতীয় বোলারদের পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন টিম ডেভিড। একের পর এক বাউন্ডারিতে ২৫ বলেই তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। ২ চার আর ৪ ছক্কার খেলেন ২৭ বলে ৫৪ রানের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি, সাথে ক্যারিয়ারের ৪র্থ টি-টোয়েন্টি অর্ধশতক পূরণ করেন তিনি। আর টিম ডেভিডের ঐ ঝড়ো ইনিংসের কল্যাণেই ১৮৬ রানের বড় পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জিতে নেয় ভারত। একই সাথে প্রথম ম্যাচ জিতলেও টানা দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হারের স্বাদ নেয় অ্যারন ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া।

নিজের দুর্দান্ত ইনিংস খেলার দিনে ম্যাচ জেতা হয়নি। তবে ক্যারিয়ারে নতুন মোড় নেওয়ার জন্য যে ধরনের ইনিংস খেলা প্রয়োজন ছিল ঠিক তেমনটাই খেলেছেন টিম ডেভিড। এমনিতেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বহুদিন ধরেই নিজেকে আরো শাণিত এবং আরও পরিণত করে তুলছিলেন তিনি। সেটারই ফল পাচ্ছেন এখন। স্ট্রাইক রেট ঠিক রাখছেন, আবার অবলীলায় রানও করছেন নিয়মিত।

তাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনিই যে ‘দ্য নেক্সট বিগ থিং’ হতে চলেছেন সেটা দ্বিধাহীন কন্ঠেই বলা যায়। অস্ট্রেলিয়ার জন্য অবশ্য তিনি ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ যে বাক্সে জমা আছে হাজারো বিস্ময়।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link