More

Social Media

Light
Dark

বিরুদ্ধ কন্ডিশনে সফল যারা

গত কয়েক বছর থেকেই টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ কিছুটা গুছিয়ে উঠছে। এখন ঘরের মাঠ তো বটেই, বিদেশেও প্রতিপক্ষের বিশ উইকেট তুলে নেয়ার সামর্থ্যের প্রমান দিচ্ছেন বোলাররা। কিন্তু বিশ উইকেট তোলার মত পুঁজি স্কোরকার্ডে সংগ্রহ করতে পারছেন ব্যাটসম্যানরা? দুই-চারটা ম্যাচ বাদ দিলে, অধিকাংশ সময়েই সেই কাজটা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা।

বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে ব্যাটিং লাইনে ধ্বস নামা এখন নিয়মিত দৃশ্যে পরিনত হয়েছে। চলতি বছরের শুরুটা হয়েছিল উড়ন্ত, টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাঠেই হারিয়ে দিয়েছিল টিম টাইগার্স। কিন্তু এরপরের ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হার, দক্ষিন আফ্রিকায় লজ্জাজনক পরাজয়, ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও ভরাডুবি – এই টালমাটাল অবস্থার পিছনে সবচেয়ে বড় দায়টা ব্যাটসম্যানদেরই।

গত তিনবছরে অ্যাওয়ে আসলে কারা কারা পারফর্ম করেছেন ব্যাট হাতে? ব্যর্থতার তালিকায় সবাইকেই রাখা যায়। কিন্তু ব্যর্থদের মাঝেও মন্দের ভাল কোন ক্রিকেটার – সেই পরিসংখ্যানে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।

ads
  • নাজমুল হোসেন শান্ত

প্রথম নামটা দেখেই চমকে উঠেছেন নিশ্চয়ই, এমনটাই হওয়ার কথা। বাংলাদেশের ধারাবাহিক ব্যাটিং ব্যর্থতার পিছনে যে দুই তিনটি নাম সবার আগে আসে তার একটি নাজমুল শান্ত। তবে সত্যি বলতে বিদেশের মাটিতে দেশের সেরা রানসংগ্রাহক তিনিই। ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি বিদেশে মোট ২০ ইনিংস ব্যাট করেছেন। এসময় তার রানসংখ্যা ৬৯৩ যা বাংলাদেশের পক্ষে সর্ব্বোচ্চ।

৩৬.৪৭ গড়টা আহামরি না হলেও বর্তমান বাস্তবতায় একেবারে ফেলনা নয়। এছাড়া দুইটি সেঞ্চুরি এবং একটি ফিফটিও আছে তার নামের পাশে। তাছাড়া অনেক ইনিংসেই বেশ ভাল শুরু পেয়েছিলেন শান্ত, কিন্তু ক্ষনিকের ভুলে সেসব ইনিংস বড় করতে পারেননি। কিন্তু দেশের মাটিতে শান্তের ব্যাটিং একেবারে হতাশাজনক, গড়টা ১৫-এর নিচে। তবে কি নির্বাচকদের শান্তকে শুধু বিদেশের মাটিতেই ভাবা উচিত?

  • লিটন কুমার দাস

নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে থাকা লিটন দাসও অন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভাল ব্যাটিং করেছেন দেশের বাইরে। সর্বশেষ তিন বছরে ২০ ইনিংস খেলে ৬৯০ রান করেছেন এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান। গড়টা ৩৬.৩১, চারটা অর্ধশতকের সাথে শতক আছে একটি।

তবে আরেকটু মনোযোগী হলে শতক আরো দুই একটি বেশি হতে পারতো। শুধু দেশের বাইরেও নয়, ঘরের মাঠেও সমান তালে ব্যাট করছেন এই ডানহাতি। বলাই যায়, বর্তমানে দেশের সেরা ব্যাটসম্যান লিটন দাস – আইসিসির র‍্যাংকিংও তার পক্ষেই কথা বলে।

  • মুমিনুল হক সৌরভ

নাজমুল শান্তের মতই সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হকের নাম দেখে অবাক হওয়ারই কথা। ক্যারিয়ারের শুরুতে যিনি ছিলেন রানমেশিন তিনিই এখন ব্যাট হাতে দুই অঙ্কের ঘরে পৌছুতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে গত কয়েক বছরের হিসেবে ততটা খারাপ নয় সৌরভের পরিসংখ্যান। এই সময়টাতে ২১ ইনিংস খেলে ৩০.০৫ গড়ে ৫৭১ রান করেছেন তিনি। একটা সেঞ্চুরির পাশাপাশি দুইটি হাফ সেঞ্চুরিও আছে তার ঝুলিতে।

কিন্তু ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৮ রানের সেই ইনিংস খেলার পর থেকেই ফর্মের তলানিতে আছেন মিমি। কিছুটা বাধ্য হয়েই বিশ্রাম দেয়া হয়েছে তাকে; আপাতত দেখার বিষয় নিজেকে আবার ফিরে পেতে পারেন কিনা এই টেস্ট স্পেশালিস্ট।

  • তামিম ইকবাল খান

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কিছু ম্যাচ না খেলা সত্ত্বেও সেরা রানসংগ্রাহকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন তামিম ইকবাল খান। শান্ত লিটনের ২০ ইনিংসের বিপরীতে তামিম খেলেছেন মাত্র ১২ ইনিংস। আর রান করেছেন ৪৭৮। কোন তিন অঙ্কের ইনিংস না থাকলেও তিনটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছেন তিনি যার একটিতে নব্বইয়ের ঘরে গিয়েছিলেন।

সাদা পোশাকে তামিমের টেকনিক নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়। হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে রান করার ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞ ওপেনার অন্যতম সেরা ব্যাটারই বটে। ২০২০ সালের পর থেকে টেস্টে তার ৪৩.৪৫ ব্যাটিং গড় সেটিরই প্রমান দেয়।

  • মুশফিকুর রহিম

দেশের সবচেয়ে ভরসাযোগ্য ব্যাটসম্যানকে ছাড়া অসম্পূর্ণ থাকে এই তালিকা। গত তিন বছরে অ্যাওয়ে কন্ডিশনে ১৪ ইনিংস খেলা মুশফিকুর রহিমও তাই সেরা রান সংগ্রাহকদের একজনই। এইসময় ৩৪.৬৬ ব্যাটিং গড়ে ৪১৬ রান করেছেন তিনি। কোন সেঞ্চুরি করতে না পারলেও চারবার অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন। তাছাড়া দেশে কিংবা বিদেশে উভয় কন্ডশনেই বর্তমানে সেরা ব্যাটসম্যানের কথা বলতে গেলে লিটন দাসের সাথে মুশফিকের নামও বলা আবশ্যক।

বাংলাদেশের টেস্ট সংস্কৃতি নেই, বলেছেন সাকিব আল হাসান। তার সাথে সুর মিলিয়েছেন নাজমুল হাসান পাপনও। আর তাই টেস্ট ফরম্যাটে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশকে উদ্ধার করতে যেমন গড়ে তুলতে সংস্কৃতি, তেমনি তৈরি করতে হবে পারফেক্ট স্কোয়াড।

সেক্ষেত্রে শুধু সাংবাদিক কিংবা দর্শক নয়, এসব পরিসংখ্যান ভালভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে নির্বাচকদেরও। কাকে কোথায় খেলানো উচিত সেটি বুঝলে উত্তরনের একটা পথ মিললেও মিলতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link