More

Social Media

Light
Dark

পরিশ্রম-সাফল্য ও একজন সরফরাজ

রঞ্জি ট্রফিতে একের পর এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলে যাচ্ছেন ২৪ বছর বয়সী সরফরাজ খান। গেল বছরের পর এবারও আছেন উড়ন্ত ফর্মে। সরফরাজের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম আর সাধনা অবশেষে যেন উজ্জ্বল আলোর রপে দেখা দিয়েছে পূর্ব দিগন্তে।

প্রতিদিন ভোর বেলায় ঘুম চোখে কাকডাকা ভোরে বেরিয়ে যেতেন অনুশীলনে। সঙ্গী হিসেবে কিট ব্যাগ, বাবা নওশাহ খান আর ভাই মুশির খান। এক সাক্ষাৎকারে দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম আর পুরনো সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করলেন আরও একবার!

সরফরাজ বলেন, ‘বাবা, ভাই ও আমি ভোর ৪.৫০ এ উঠি। এরপর ৪০-৫০ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে ৬.৪০ এ মাঠ পৌঁছে যাই। তখনো অনেকটাই অন্ধকার থাকে। আমি ওয়ার্ম আপ করি, এরপর ৭-৯ টা পর্যন্ত অনুশীলন করি। যদি মুম্বাইর অফিসিয়াল অনুশীলন থাকে তাহলে ১১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত করি। এরপ বিশ্রাম নিয়ে আবারও ৪-৬ টা পর্যন্ত অনুশীলন করি।’

ads

বাবা নওশাদই সরফরাজের কোচ, মেন্টর সবকিছুই! প্রতিদিন অনুশীলনে ৪০০-৬০০ বল খেলেন সরফরাজ। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এবং বাকিদের মধ্যে পার্থক্য হলো তাঁরা মনে করে যখন সময় আসবে তখন খেলবো এখন মজা করি। কিন্তু আমি মনে করি সবসময়ই অনুশীলনে থাকা উচিত, অভ্যাসটা তৈরি করতে পারলে সেটা লম্বা সময় ধরে রাখা যাবে। এবং যখন কোনো ম্যাচে ব্যাটিংয়ে যাবেন দেখবেন খুব একটা পার্থক্য দেখা যাবে না। আমি এমনটা অনুভব করি না কারণ আমি প্রতিদিনই ব্যাট করতে থাকি।’

২০১৯-২০ রঞ্জি ট্রফিতে মধ্যপ্রদেশের বিপক্ষে ১৭৭ রান করার পর ২০২১-২২ মৌসুমে স্বরাষ্টের বিপক্ষে খেলেছেন ২৭৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। এরপর উড়িষ্যার বিপক্ষে খেলেন ১৬৫ রানের ইনিংস! মুম্বাইয়ের হয়ে শুরুর পর থেকে এই মৌসুমে ৯ ম্যাচে প্রায় ১৪৮ গড়ে করেছেন ১৪৭৯ রান! আছে ৫ সেঞ্চুরি ও ১৩ ফিফটি! সর্বোচ্চ ৩০১ ও সেঞ্চুরি পাওয়া সর্বনিম্ন রানের ইনিংস ১৬৫।

গেলো নভেম্বরে ভারত এ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান সরফরাজ। সেখানে মারকো জানসেন, ব্যুরো হেন্ডরিকস, লুথো সিপামলাদের বিপক্ষে খেলেন ৭১ রানের অপরাজিত এক ইনিংস।

সরফরাজ বলেন, ‘আব্বু বলেন যে তোমার ফোকাস ভালো লেংথে রাখতে হবে, বল সেখানে আসবেই। আর সেখান থেকেই তোমাকে রান বের করতে হবে। আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা শুধু ক্রিকেট নিয়েই ভাবি। ঘুমাতে গেলেও! আব্বু আমাকে ৫ মিনিট না দেখলেই খোঁজ করে! এমনকি আমি টয়লেটে থাকলেও!’

প্রতিদিন প্রায় একশো বল খেলার পর নিজের অনুশীলনের ভিডিও দেখন সরফরাজ। চেষ্টা করেন ভুল ত্রুটি বের করে তা সমাধান করার। এক্ষেত্রেও সরফরাজকে পরামর্শ দেন বাবা। রাতে যতই ম্যাচ থাকুক না কেনো ৭.৩০ বাজতেই ডিনার শেষ! এরপর ৯টা বাজে ঘুমাতে যেতে হবে। ২৪ বছর বয়স হলেও এখনো স্কুলজীবনের মতোই বাবার আদেশে রুটিন মানতে হয় মুম্বাইর এই ব্যাটারকে।

করোনার মাঝেও বন্ধ ছিলো না অনুশীলন। বাড়ির মধ্যেই নেট ও বিছানার চাদর দিয়ে চারপাশ ঢেকে অনুশীলন করতেন সরফরাজ। উইকেট হিসেবে ব্যবহার হতো টেবিল! তখনো ৩০০-৪০০ বল অনুশীলন করতেন তিনি! পায়ের লিগামেন্ট ছিড়ে গেলেও ছেলের জন্য রোজ ভোর বেলা উঠে অনুশীলনে নিয়ে যেতেন নওশাদ।

সরফরাজ বলেন, ‘আব্বুর সাথে কেউই পারবেনা, প্রতিযোগিতায় আসলেও আব্বু জিতবে। রঞ্জি ট্রফি অনেক বড় টুর্নামেন্ট। সেখানে ভালো কিছু করলে সবাই মনে রাখে। আমি মনে করি আব্বু সফল। মুশির (সরফরাজের ভাই) সেও ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং ভালো করছে। আমি মনে করি আমার চেয়েও ভালো করবে।’

সরফরাজ মনে করেন ফিটনেসের চেয়ে পারফরম্যান্সটাই মূখ্য। তিনি বলেন, ‘আমি একদম শুরু থেকে দুই দিন টানা ব্যাট করতাম আবার ফিল্ডিং করতাম, এটা সহজ না। আমি রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও দ্রুত। কিন্তু মানুষ চায় একটা পাতলা শরীর!’

২০২০ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলেছেন মাত্র তিন ম্যাচ। এরপর ২০২১ আইপিএলে খেলেছেন দুই ম্যাচে। এবার দল পেয়েছেন দিল্লিতে! দিল্লী ক্যাপিটালসের একাদশে জায়গা অনিশ্চিত হলেও কোচ রিকি পন্টিংয়ের কাজ থেকে অনেক কিছু শিখতে চান এই তরুণ ক্রিকেটার।

মুম্বাইয়ের কোচ অমল মজুমদারের মাঝে বাবার ছায়া দেখতে পান সরফরাজ। তিনি বলেন, ‘অমল স্যারের সাথে থাকলে মনে হয় আব্বুর সাথেই অনুশীলন করছি। কারণ এই মানুষটাই সকালে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অনুশীলন করিয়েছে।’

সাদা বলের ক্রিকেটে মাঠের চারদিকেই শটস খেলতে পারার অ্যাবিলিটির কারণেই লাইমলাইটে আসেন সরফরাজ। এরপর লাল বলেও নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেন এই তরুণ সম্ভাবনাময়ী তারকা। প্রতিভা আর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আইপিএলে ম্যাচ পান খুব কমই। সরফরাজ মনে করেন তার উপর আস্থা দেখালে তিনি সেরাটা দিবেন, ‘আমি সুযোগ পেলে সেরাটা দিবো। আমি লাল বলের ক্রিকেটে ৪-৬ বছর ধরে পরিশ্রম করছি। আমি মনে করি আইপিএলেও ভালো খেলবো এমন সময় আসবে।’

রঞ্জি ট্রফি থেকে ফেরার পরই আইপিএলের আগে নেটে নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন এই তরুণ তুর্কি। র‍্যাম্পস, কাটস, পুলস, হুইপ্স, ড্রাইভস, স্ট্রেইট ড্রাইভসে শেষ সময়ে নিজেকে প্রস্তুত করছেন সরফরাজ। দল আস্থা রাখলে হয়তো রঞ্জি ট্রফির মতো এবারের আইপিএলটা তিনি রাঙাতে পারবেন আপন রঙে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link