More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

তাওহিদ হৃদয়, সম্ভাবনা থেকে শঙ্কা

শেষের শুরু নিশ্চয় নয়। তবে শঙ্কার শুরু নিশ্চিতভাবেই। বিশ্বকাপ শুরুর ঘন্টা এই বাজলো বলে। কিন্তু শুরুর আগেই যে বাংলাদেশি ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়ের আত্মবিশ্বাসে একটা মরিচীকা পড়েছে। দারুণ সম্ভাবনার গল্প লিখে যিনি বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের নজর কাড়তে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই যেন এক দমকা হাওয়ায় সাময়িক সময়ের জন্য এলোমেলো হয়ে পড়লেন। ফর্মহীনতার গোলকধাঁধায় পড়ে গেলেন। 

তাওহিদ হৃদয় যখন এশিয়া কাপের মঞ্চে পা দেওয়ার অপেক্ষায়, ঠিক তখন তাঁর সাথে অনুপ্রেরণা রসদও সঙ্গ দিচ্ছে। এমনিতে জাতীয় দলে ধারাবাহিক ব্যাটিংয়ে নজর তো কেড়েছিলেন। তবে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে (এলপিএল) এসে যেন নিজেকে নিয়ে গেলেন বৈশ্বিক মঞ্চেও। জাফনা কিংসের হয়ে দারুণ একটা মৌসুম পার করলেন। 

তরুণ এ ব্যাটারের ব্যাটিং দ্যুতিতে জাফনা কিংসের কোচ কান্দাবি এতটাই মোহিত হলেন যে হৃদয়ের বিদায় বেলায় টুইটে শুভকামনা জানালেন এভাবে, ‘এটি তোমার ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট। সামনেও তুমি অনেক রান করবে। তবে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কিন্তু করবে না।’

ads

জাফনা কিংসের কোচের সেই রসিকতায় শোয়েব মালিকও হৃদয়কে হাসি মুখে জানিয়েছিলেন, বলেছিলেন, ‘ওর ব্যাটিং অত্যাচারের ভূক্তভোগী যেন পাকিস্তান না হয়।’

কান্দাম্বি কিংবা শোয়েব মালিক— দুজনই হৃদয়ের মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা দেখেই মজাটা করেছিলেন। হৃদয়ের মধ্যে যে সম্ভাবনা দেখে সমগ্র বাংলাদেশও। তবে সম্ভাবনা ট্যাগলাইনের পাশেও যে সম্ভাবনার অপমৃত্যুও আছে। ক্রিকেট বিশ্ব কতশত সম্ভাবনার অপমৃত্যুর স্বাক্ষী। হৃদয়কে নিয়ে সেই শঙ্কার সময় হয়তো হয়নি। তবে শেষ কয়েকটি ম্যাচে হৃদয়ের ব্যাটিং হতাশার সর্বোচ্চ স্তরেই নিয়ে গেছে। 

এবারের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০ রান করেছিলেন। কিন্তু বল খেলেছিলেন ৪১ টি। গ্যাপ খুঁজে রান বের করতে সিংহভাগ ডেলিভারিতে ব্যর্থ ছিলেন। আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে এসে তো দাঁড়াতেই পারেননি। শূন্যতেই ফিরেছেন। 

এতটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিল। ফর্মে থাকা যেকোনো ব্যাটারেরই সাময়িক সময়ের জন্য ছন্দপতন ঘটতে পারে। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচে হারিস রউফের বলটাই যেন বুঝে উঠতে পারলেন না হৃদয়। সোজা বোল্ড। এবার অবশ্য শূন্য নয়, ফিরে যান ২ রান। 

ছোট্ট ক্যারিয়ারে কখনোই টানা ২ ম্যাচে এক অঙ্কে আউট হননি হৃদয়। এবার হলেন। চিন্তার ব্যাপারটা সেখানেও না। হৃদয় ব্যাট হাতে নিজের সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছেন আয়ারল্যান্ড আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে। 

দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আর কোনো টুর্নামেন্ট, ব্যবধানটা আকাশ-পাতাল। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে তেমন কোনো অসম চাপ থাকে না। কিন্তু টুর্নামেন্টে দলের জয় ছাড়া ভাবনায় থাকে রানরেট, দলের অবস্থান সহ আরো অনেক কিছু। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে দারুণ ব্যাটিং করা খেই হারিয়ে ফেলেছেন সেই টুর্নামেন্টেই, এশিয়া কাপে। শঙ্কাটা তাই তৈরিই হয়। বৈশ্বিক আসরে হৃদয় সবার হৃদয় কাড়তে পারবেন তো?

হৃদয় মিড উইকেট শট খেলতে পছন্দ করেন। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা সেই মিড উইকেটেই আলাদা ফিল্ডার রেখেছিলেন হৃদয়ের জন্য। হৃদয়ও পরে সেই অঞ্চল থেকে রান বের করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, অন্যান্য এরিয়াতেও শট বের করতে পারেননি। ফলাফল, টানা ডটবলে চাপে পড়ে এলবিডব্লুর ফাঁদে আউট। 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রযুক্তি কিংবা রিসোর্সের ব্যবহার এখন বেশ সমৃদ্ধ। দারুণ প্রতিভাবান কেউ নজর কাড়তে শুরু করলেই তাঁকে নিয়ে শুরু হয় পরীক্ষা নিরীক্ষাও। খুব স্বাভাবিকভাবে, হৃদয়কে নিয়েও প্রতিপক্ষ সেই রণকৌশল সাজাবে। আর এ জন্য প্রয়োজন সময়ের সাথে নিজের দুর্বলতার অনুপাতটা কমিয়ে আনা। হৃদয়কে পরিণত হতে হলে হাঁটতে হবে সেই পথেই।

তবে তাঁর আগে প্রয়োজন মানসিকভাবে ফিরে আসা। হৃদয় এখন যে অবস্থানে রয়েছেন, তাতে মানসিকভাবে চির ধরা স্বাভাবিক। পরিসংখ্যান বলছে, শেষ ৫ ওয়ানডেতে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে সব মিলিয়ে ৬০ রান। একই সাথে, ব্যাটিং স্ট্রাইকরেটও নেমে গিয়েছে ১০০ এর নিচে। 

সব মিলিয়ে হৃদয়কে ফিরে আসতে হবে এই এশিয়া কাপের মঞ্চেই। কারণ পুনরুজ্জীবিত হৃদয়কেই যে প্রয়োজন বিশ্বকাপে। তবে সেই পথে অনেক প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়েই আসতে হবে তাওহিদ হৃদয়কে। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link