More

Social Media

Light
Dark

গাবি অ্যালেন, লর্ডসে ইতিহাস গড়া এক দোকানির গল্প

১৫ জুন, ১৯২৯ সাল। ইংল্যান্ডের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে লর্ডসে সেদিন মিডলসেক্সের মুখোমুখি হয়েছিল ল্যাঙ্কাশায়ার। মিডলসেক্সের অধিনায়ক নাইজেল হেইগ ম্যাচ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে চরম চিন্তিত। 

ম্যাচের টস হয়ে গিয়েছে। টসে জিতে ল্যাঙ্কাশায়ার ব্যাটিং করবে। কিন্তু ল্যাঙ্কাশায়ারের পেস আক্রমণের প্রাণভোমরা গাবি অ্যালেন তখন পর্যন্ত মাঠে এসে পৌঁছাতে পারেননি। জরুরি কোনো একটা কাজে হয়তো আটকে গিয়েছেন। সে সময়ে যোগাযোগাযোগের তেমন মাধ্যমও নেই যে, গাবি অ্যালেনের খোঁজ নেওয়া যাবে। তাই অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও বোলার গাবিকে বাদ দিয়েই মাঠে নামলো মিডলসেক্স। 

তবে গাবি অ্যালেনকে সেদিন ঠিকই একাদশে রেখেছিলেন মিডলসেক্সের অধিনায়ক নাইজেল হেইগ। ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষণ বাদে অবশ্য অধিনায়কের সব চিন্তা দূর করে গাবি অ্যালেন মাঠে পৌঁছে যান। মূলত গাবি অ্যালেনের লন্ডনে একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ছিল। আর সেখান থেকে আসতেই দেরি হয়ে যায় তাঁর। 

ads

যাহোক, এর কিছুক্ষণ বাদেই জার্সি, ট্রাউজার পরে ফিল্ডিংয়ে নেমে পড়েন গাবি অ্যালেন। অধিনায়ক নাইজেল হেইগও গাবির হাতে বল তুলে দিতে আর বেশি দেরি করেননি। ল্যাঙ্কাশায়ারের স্কোরবোর্ডে যখন ২৩ রান, তখন বোলিং প্রান্তে আসেন গাবি। 

এসেই পেলেন উইকেট। নিজের প্রথম উইকেট, একই সাথে মিডলসেক্সের হয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দিলেন গাবি অ্যালেন। মূলত লর্ডসের মাটিতে সেদিন অনন্য এক কীর্তির পিছনেই ছুটেছিলেন ডানহাতি এ পেসার। যে কীর্তি আজ অবধি লর্ডসের মাটিতে গাবি অ্যালেনের পর আর কেউ ছুঁতে পারেননি।    

মিডলসেক্সের হয়ে সেদিন নিজের প্রথম স্পেলে ৮ ওভার করেছিলেন গাবি অ্যালেন। ৩ মেডেনে ১৮ রান দিয়ে ঐ একটি মাত্র উইকেটই পেয়েছিলেন। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে এসে দুই উইকেট নিলেও তখন পর্যন্ত ল্যাঙ্কাশায়ারের ব্যাটারদের সামনে তেমন একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না গাবি।

অবশ্য গাবি অ্যালেন ছাড়া তখন পর্যন্ত মিডলসেক্সের হয়ে উইকেটই নিতে পারেননি কোনো বোলার। মজার ব্যাপার হলো, মিডলসেক্সের বাকি বোলারদের এই চিত্র অব্যাহত ছিল ইনিংস শেষেও। কারণটা ঐ গাবি অ্যালেনই। 

৩ উইকেটে ল্যাঙ্কাশায়ারের সংগ্রহ তখন ২১৫। এ সময়ে আবারো বোলিং প্রান্তে আসেন গাবি অ্যালেন। নিজের তৃতীয় স্পেলে বোলিংয়ে রীতিমত ল্যাঙ্কাশায়ার ব্যাটারদের উপর একটা ঝড় বইয়ে দেন গাবি। গাবি অ্যালেনের ঐ এক স্পেলেই বদলে যায় পুরো ম্যাচের দৃশ্যপট। ২১৫-৩ থেকে ২৩৯-৬। এরপর ২৪১ রানে অল আউট হয়ে যায় ল্যাঙ্কাশায়ার। ৭ টি উইকেটই নেন গাবি অ্যালেন। অর্থাৎ আগের ৩ টি উইকেটসহ ইনিংসের ১০ টি উইকেটই নেওয়ার কীর্তি গড়েন গাবি অ্যালেন!

লর্ডসের ইতিহাস বলে, ৩৮ রানে ১০ উইকেট নিয়ে সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড স্যামুয়েল বাটলারের। সেখানে গাবি অ্যালেন ৪০ রানে নিলেন ১০ উইকেট। আর একটুর জন্য ছোঁয়া হলো লর্ডসের মাটিতে সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড। কিন্তু তাতে কি! মিডলসেক্সের হয়ে ততক্ষণে সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড ছোঁয়া হয়ে গেছে তাঁর। আগের যে রেকর্ডটি ছিল আলবার্ট ট্রটের। ১৯০০ সালে টন্টনে মিডলসেক্সের হয়ে ৪২ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট ট্রট। 

মজার ব্যাপার হলো, ৯৪ বছর আগে গাবি অ্যালেনের সে কীর্তিটিই ছিল লর্ডসের মাটিতে এক  ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার সর্বশেষ ঘটনা। এরপরে আর কেউ লর্ডসের মাটিতে এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিতে পারেননি।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link