More

Social Media

Light
Dark

অভিনব মনোহারের উত্থান

২০১৭ আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ট্রায়াল থেকে একরাশ হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। প্রস্তুতি ম্যাচে রান করতে না পারায় তাঁকে নিয়ে আর ভাবতে রাজি হয়নি ফ্যাঞ্চাইজি দলটি। কিন্তু কে জানতো বছর খানেক বাদেই হতাশাকে জেদে পরিণত করে আইপিএলে রাজকীয় আবির্ভাব ঘটবে অভিনব মনোহারের। গুজরাট টাইটান্সের হয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষেই বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে জানান দিলেন নিজের সামর্থ্যের। 

ছোটবেলায় পেস বোলারদের সামলাতে ভয় পেতেন। নিয়মিত একাডেমিতে অনুশীলন করলেও তাই মনোহারকে নিয়ে তেমন আশাবাদী ছিলেন না কেউই। কিন্তু সবকিছু বদলে দেয় একটি ঘটনা। সেবারে হায়দ্রাবাদ অনুর্ধব-১৪ দলের সাথে ম্যাচ ছিল মনোহারদের একাডেমির।

সেই ম্যাচেই বল মাথায় লেগে হাসপাতালে যেতে হয় তাঁকে, সবাই ভেবেছিলেন হয়তো ম্যাচে আর ফিরতে পারবেন না এই কিশোর। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাথায় চারটি সেলাই নিয়ে মাঠে নেমে যান তিনি, ফেরেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। সেদিনই সবাই বুঝে গিয়েছিল ধূমকেতু নয়, বরং নক্ষত্র হয়ে বাইশ গজে জায়গা করে নিতেই এসেছেন মনোহার। 

ads

যদিও প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের ন্যায় শীর্ষপর্যায়ের ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়াটা সহজ ছিল না মনোহারের জন্য। এমনকি রাজ্য দল কর্ণাটকের রিজার্ভ দলেও পাননি একটা সময়ে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি, বরং সেই সময়টাতে ব্যাঙ্গালুরুর স্থানীয় টুর্নামেন্ট খেলে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছেন, নিজেকে প্রস্তুত করেছেন শীর্ষপর্যায়ের ক্রিকেটের জন্য। 

করোনা মহামারীতে গোটা পৃথিবী স্থবির হয়ে পড়লেও মনোহার থামেননি। নিমগ্ন ঋষির ন্যায় ক্রিকেট সাধনা করে গেছেন নিজের মতো। অবশেষে ভাগ্যবিধাতা সহায় হন এই তরুণের। সেবারে সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফির আগে রীতিমতো ব্যাটসম্যান সংকটে পড়েছিল কর্ণাটক। ব্যাটে রান পাচ্ছিলেন না করুণ নায়ার, অন্যদিকে দেবদূত পাড্ডিকাল, লোকেশ রাহুল, মায়াঙ্ক আগারওয়ালরা ছিলেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। 

সবমিলিয়ে রাজ্য দলের দরজা খোলে যায় মনোহারের। সুযোগটা দুহাতে লুফে নিতে দুবার ভাবেননি এই তারকা, অভিষেক ম্যাচেই ৪৯ বলে ৭০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দেন নিজের সামর্থ্য। রানের ধারাটা বজায় রেখেছিলেন গোটা টুর্নামেন্টজুড়েই, চার ইনিংসে দেড়শো স্ট্রাইকরেটে করেন ১৬২ রান।

এরপর সময় যত গড়িয়েছে মনোহারের সাফল্যের পাল্লা ভারী হয়েছে। ক্রমেই রাজ্য দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, বনে গেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মারদের একজন। তাঁর উত্থান নজরে আসে আইপিএলের দলগুলোর, ২০২২ আইপিএলের নিলামে তাঁকে দলে ভেড়াতে রীতিমতো কাড়াকাড়ি লেগে গিয়েছিল। শেষপর্যন্ত কলকাতা এবং দিল্লীকে হারিয়ে ২.৬ কোটি রুপিতে তাকে দলে ভেড়ায় গুজরাট টাইটান্স। 

নিজের প্রথম মৌসুমেই আলাদা করে নজর কাড়েন মনোহার। শেষদিকে নেমে ঠান্ডা মাথায় ঝড় ব্যাটিংয়ে দলকে জয় এনে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। লখনৌর বিপক্ষে একা হাতে ম্যাচ জেতানোর পাশাপাশি গুজরাটকে শিরোপা জেতাতে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। 

খানিকটা নিচের দিকে ব্যাট করায় এবারের মৌসুমে ঠিকমতো সুযোগটা পাচ্ছিলেন না মনোহার। তবে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েই যেন ক্ষোভ মেটালেন। তাঁর মারমুখী ব্যাটিংয়ের কোনো জবাব ছিল না মুম্বাইয়ের বোলারদের কাছে।

সমান তিনটি করে চার এবং ছক্কা হাঁকিয়ে ২১ বলে ৪২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন এই তারকা। শুরুর দিকে খানিকটা ধুকতে থাকা গুজরাট তাঁর ব্যাটিং ঝড়েই শেষের দিকে রীতিমতো রান পাহাড়ে চড়ে বসে। 

ছোটবেলায় পেসারদের ভয় পেলেও আজকের দিনে কি অবলীলায় ১৪০ কিমির বলকে পাঠাচ্ছেন সীমানার ওপারে। মনোহার চাইবেন ফর্মটা ধরে রেখে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর স্বপ্নটা পূরণ করতে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link