More

Social Media

Light
Dark

সায়িম আইয়ুবের গল্পটা শুধুই উত্থানের

গল্পটা উত্থানের। আর সেই উত্থান যাত্রার নায়ক হচ্ছেন সায়িম আইয়ুব। পাকিস্তানি এ ক্রিকেটারের বয়স তখন ১৬। অনূর্ধ্ব-১৬ বয়সভিত্তিক সিরিজের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দিয়েছিল পাকিস্তান। সেই দলে ছিলেন সাইম আইয়ুবও। কৈশোর মন তখন অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক স্টেডিয়াম গুলোতে পদচারণায় ব্যাকুল।

কিন্তু বিধিবাম! ছোট বাউন্ডারির স্টেডিয়ামেই সেবার খেলতে হয়েছিল পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৬ দলকে। সায়িম আইয়ুব হয়েছিলেন সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার। কিন্তু আশৈশব যে তিনি মেলবোর্ন, সিডনি স্টেডিয়ামের গল্প শুনে বড় হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়াতে এসেও খেলতে পারলেন না সেই সব ঐতিহাসিক মাঠে। শুধু অজি সফরেই তাই তৃপ্ততা ভর করেনি আইয়ুবের মনে।

তবে, সেদিনের সেই কিশোরেরই স্বপ্ন পূরণ হলো ৫ বছর বাদে। সায়িম আইয়ুবের টেস্ট অভিষেক হলো অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। একেই বুঝি বলে ভাগ্যবদল। এক দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে উপমহাদেশের অনেক ক্রিকেটারের যেখানে অস্ট্রেলিয়ায় খেলার সাধই পূরণ হয় না। সেখানে সায়িম আইয়ুব অস্ট্রেলিয়ার পা রাখলেন দুই বার। একবার বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দলের ত্রাতা হিসেবে, আরেক বার সিনিয়র দলের সবচেয়ে জুনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে।

ads

পিএসএল দিয়ে আলোচনায় সায়িম আইয়ুবের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকও টি-টোয়েন্টি দিয়ে। পাকিস্তানের হয়ে সব মিলিয়ে ১১ টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। খুব একটা ভালো করেননি। কিন্তু তাঁর আক্রমণাত্বক ব্যাটিং ঠিকই আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ডাক পেয়েছেন বিপিএলেও। এবারের আসরে খেলছেন দুর্দান্ত ঢাকার হয়ে।

সায়িম আইয়ুবের ক্রিকেটের হাতেখড়ি তাঁর বড় ভাইয়ের হাত ধরে। বড় ভাই নিজেও ছিলেন ক্রিকেটার। তবে সেই ক্রিকেটটা তিনি খেলতেন শখের বশে। ইচ্ছা ছিল ক্রিকেট বলেও ক্যারিয়ার গড়ার। কিন্তু পরিবারের বাধ্যবাধকতায় সেটি আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু বড় ভাইয়ের সেই সাধ পূরণ করছেন ছোট ভাই সাইম আইয়ুব। মজার ব্যাপার হলো, তাঁর বড় ভাই ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে পরিবার থেকে নিষেধাজ্ঞা পেলেও, সাইম আইয়ুবের ক্ষেত্রে হয়েছিল ঠিক উল্টোটা।

কনিষ্ঠ পুত্রের মাঝে ক্রিকেটের প্রতি প্রবল নেশা খুঁজে পাওয়ায় তাঁর বাবা তাঁকে লাহোরের একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেয়। এরপর থেকেই সায়িম আইয়ুবের বাইশ গজ মাতানো শুরু। শুরুর দিকে টেপ টেনিসে ক্রিকেট খেলে পরিচিতি পেয়েছিলেন। এরপর খেলেছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট। আর সেই স্রোতে পিএসএলেও দল পেয়ে যান বাঁ-হাতি এ ব্যাটার।

তবে পিএসএলের শুরুর দিকে কিন্তু সায়িম আইয়ুব অতটা সফল ছিলেন না। কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করায় তাঁর প্রতি আস্থা ছিল দলের। আর সেই আস্থারই প্রতিদান একসময় দিতে শুরু করেন তিনি। এরপর জাতীয় দলেও ডাক পেয়ে যান দ্রুতই। এখন পর্যন্ত যদিও ওয়ানডেতে অভিষেক হয়নি। টি-টোয়েন্টিতেও যেভাবে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন, তাতে খুব একটা আলোচনায় তাঁর থাকার কথা না।

তবে সাইম আইয়ুবের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচই মূলত তাঁকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। অনেকে বলে থাকেন, তাঁর ব্যাটে পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার সাঈদ আনোয়ারের অবিকল ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত হয়নি সায়িম আইয়ুবের। তবে তারপরও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি সুযোগ পাচ্ছেন ভিনদেশি ক্রিকেট লিগেও।

সায়িম আইয়ুবের বয়স মাত্র ২১। ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় এখন পড়ে রয়েছে। যে সম্ভাবনার গল্প তাঁকে নিয়ে লেখা হচ্ছে, সেই সম্ভাবনাকে নিশ্চয়ই একদিন বাস্তবে প্রমাণ করবেন তিনি।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link