More

Social Media

Light
Dark

কৈশোরের ভুলের মাশুল যৌবনে

বর্ণবাদ ব্যাপারটা নিয়ে সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রে একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর বর্ণবাদ বিষয়টা আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেই ছিল। এই ঘটনার পর ক্রিকেটেও বর্ণবাদ নিয়ে বেশ কিছু ইস্যু সামনে আসে। এরপর বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সিরিজে এবং ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগে ক্রিকেটাররা হাটু গেঁড়ে বর্ণবাদের প্রতিবাদ জানায়!

সম্প্রতি বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্যর কারণে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে পেসার ওলি রবিনসনকে। আট বছর আগে, তার কিশোর বয়সে তিনি নিজের ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বেশ কিছু মন্তব্য করেন যা ছিলো বর্ণবাদী এবং বৈষম্যমূলক। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দলে ডাক পাবার পর সম্প্রতি তার করা সেসব মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। আর সেটাই যেন রবিনসনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

সাদা পোশাকে তার অভিষেকের দিনই এই পেসারের ৮-৯ বছরের পুরনো কিছু বিতর্কিত টুইট প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে আসে। যেখানে তিনি সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে মুসলিমদের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত, এশিয়ান বংশোদ্ভূত ও নারীদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন।

ads

এরপর সিরিজের প্রথম টেস্টে অভিষেকেই প্রথম ইনিংসে শিকার করেন চার উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট সহ অভিষেক টেস্টে নেন মোট সাত উইকেট। সব মিলিয়ে প্রথম টেস্টে দলের সেরা বোলার ছিলেন তিনি। কিন্তু হায় দূর্ভাগ্য! কথায় আছে পাপ বাপকেও ছাড়েনা!

ওলি রবিনসনের বেলায়ও তাই হলো। প্রথম টেস্ট শেষ না হতেই ইংল্যান্ড ও ওয়ালস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) থেকে তাকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় এবং দ্রুতই ইংলিশ ড্রেসিং রুম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়! অবশ্য তিনি কিন্তু সেই টুইট ভাইরাল হবার সাথে সাথেই ক্ষমা চেয়েছিলেন।

রবিনসন হয়তো নিজেও কখনো ভাবেননি আট বছর পর তার করা মন্তব্য গুলো এভাবে ভাইরাল হবে! আর অভিষেক ম্যাচের নায়ক বনে যাওয়া তিনিই কিনা ম্যাচ শেষে হয়ে যাবেন ভিলেন। কত কাঠ খড় পুড়িয়েই না একটা খেলোয়াড় জাতীয় দলে আসে! আর দূর্দান্ত পারফরম্যান্স করার পরেও যখন অতীতের কোনো এক ভুলে বর্তমানটা শেষ হয়ে যায়, এর চেয়ে আফসোসের হয়তো কিছু নেই।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা পেয়ে মানসিক ভাবে নিজেকে হয়তো সামলে নিতে পারেননি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেলতে পারলেও যেহেতু তিনি ইসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেই, তাই যদি কাউন্টিতে কোনো দল চায় তাকে নিতে পারবে৷ তবে এর মধ্যেই রবিনসন নিয়ে নিলেন আরেক সিদ্ধান্ত। আসন্ন টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে সাসেক্সের হয়ে খেলার কথা ছিলো রবিনসনের। তবে এই সময়ে পরিবারের পাশে থাকতে কিছুটা সময় ক্রিকেট থেকে বাইরে থাকবেন তিনি। যার কারণে টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টের শুরুর দিকের বেশ কিছু ম্যাচে দেখা যাবে না তাকে।

সাসেক্স ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষ থেকেও বলা হয় রবিনসনের এই দুঃসময়ে পূর্ণ সাপোর্ট দিবে তারা। সাসেক্স ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘খুব কঠিন একটা সপ্তাহর পর, ওলি চিন্তা করেছে কিছু সময়ের জন্য ক্রিকেট থেকে বাইরে থাকতে যাতে করে পরিবারকে সময় দিতে পারে৷ যখন সে ফিরতে চাইবে, আমরা তাকে সাদরে গ্রহণ করবো। সে তার সাসেক্সের সব সতীর্থ খেলোয়াড়ের পূর্ণ সমর্থনই পাবে। ওলির সাথে আমাদের করা চুক্তিও ঠিক থাকবে।’

এছাড়া রবিনসনের টুইট নিয়ে সাসেক্স থেকে বলা হয়, ‘ও যেই বয়সেই টুইটগুলো করেছিলো সেই সময় থেকে আজকের ওলি একদমই আলাদা। সে এই কয়েক বছরে নিজেকে অনেক পরিবর্তন করেছে। সে তার কাজের জন্য লজ্জিত এবং ক্ষমা প্রার্থনাও করেছে।’

ক্রিকেটে বর্ণবাদী আচরণ কিংবা বৈষম্যমূলক মন্তব্য কিন্তু এটাই প্রথম নয় এর আগে হার্দিক পান্ডিয়া, হরভজন সিং, সরফরাজ আহমেদরাও এই কান্ডে জড়িয়ে শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন। তবে তারা খেলার মাঠেই এমন কান্ড ঘটালেও জরিমানা আর কয়েক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান! ব্যাস এটুকই। রবিনসনের ক্ষেত্রে তিনি যে অপরাধ করেছেন সেটা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য কিন্তু তিনি যে সময়ে বা যে বয়সে করেছেন সেটা বিবেচনায় নিজের ভুল স্বীকার করায় একবার ক্ষমার যোগ্যও হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link