More

Social Media

Light
Dark

স্পট ফিক্সিং ২০১০, ঘোরতর আঁধার বন্দীশালা

স্পট ফিক্সিং ও পাকিস্তান- ক্রিকেটে এই দু’টো শব্দ সম্ভবত বেশিবার এক সাথে শোনা যায়। ক্রিকেটের বানিজ্যিক প্রসারের পাশাপাশি ফিক্সিং এর প্রসারও হচ্ছে দিনকে দিন। আর সেটার শুরুও হয়েছে পাকিস্তান থেকেই।

স্পট ফিক্সিং এর কথা উঠলে সর্বপ্রথম মাথায় আসে লর্ডসে ঘটে যাওয়া ফিক্সিংয়ের ঘটনা। হ্যাঁ, অবশ্যই সেখানে আসবে পাকিস্তানের নাম – যেখানে জড়িত ছিলেন তিন পাকিস্তানি ক্রিকেটার মোহাম্মদ আসিফ, মোহাম্মদ আমির এবং সালমান বাট।

এরমধ্যে সালমান বাট তখন পাকিস্তানের অধিনায়ক। আসিফ ছিলেন বিশ্বের সেরা স্যুইং বোলারদের একজন। আর আমির এতটাই প্রতিভাবান হিসেবে ক্রিকেটে এসেছিলেন যে – মনে করা হচ্ছিল আসছে দিনগুলোতে পেস বোলিংয়ের সব রেকর্ডই তিনি নিজের করে নিতে পারবেন। যদিও, নিজের নামের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে না পেরে, জড়িয়ে গেছেন ক্রিকেটের অন্ধকার দুনিয়ার সাথে।

ads

ঘটনাটি প্রায় ১১ বছর আগের। ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড এবং পাকিস্থান। পুরো টেস্টে আসিফ এবং আমির মিলে তিনটি নো বল করেন। আর তিনটিই ছিল ইচ্ছে করে করা ‘নো বল’। টেস্টের প্রথম দিনে যখন আমির নো বল করেন তখন কেউ ধারণা করতে পারেনি এটা ফিক্সিংয়ের ফল।

ম্যাচের তৃতীয় দিনে এসে এই অভিনব ফিক্সিংয়ের কথা প্রকাশ্যে চলে আসে। যেখানে মোট তিনটি নো বল হয়েছিলো। এর মধ্যে আসিফ করেছিলেন একটি এবং আমির দুইটি। আর জন্য নির্দেশদাতা ছিলেন তখনকার পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান বাট। যিনি ধরা পড়েছিলেন মাজহার মাজেদ নামে এক বুকির কাছে।মাজেদ ছিলেন বুকি রুপি একজন সাংবাদিক। যিনি স্ট্রিং অপারেশন করার জন্য এই ফাঁদ পেতেছিলেন।

এই ঘটনা প্রকাশ করা হয়েছিলো বৃটিশ ট্যাবল্যেড পত্রিকা নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ডে। এই খবর সারা বিশ্বের ক্রিকেট মোদীদের মধ্যে এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করে।

এটা শুধু হোম ক্রিকেটের জন্যই কলঙ্ক জনক ছিল না। পুরো পৃথিবীর ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক শোক। এই ফিক্সিং এর জন্য এই তিন ক্রিকেটারকে শুধু ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত হতেই হয়নি, তাদেরকে যেতে হয়েছে জেলে। রায় দেওয়ার সময় বিচারক জেরেমি কুক বলেন, ‘জুয়া বা বাজি এক সময় ছিল একটি খেলা যা এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই তিনজন ক্রিকেটারকে যারা বীর হিসেবে বিবেচনা করেছেন তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এর মধ্য দিয়ে।’

এই ঘটনা পাকিস্তান ক্রিকেটকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। এর আগে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের আক্রমণের জন্য ঘরের মাটিতে কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে পারছিলো না। ফলে, তখন স্পট ফিক্সিংয়ের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ায় পাকিস্তান ক্রিকেট দুনিয়ায় মোটামুটি একঘরে হয়ে যায়।

লর্ডস কেলেঙ্কারির পরও পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেটার ফিক্সিং এর অভিযোগে বিভিন্ন শাস্তি পেয়েছেন। এরমধ্যে সালমান বাট ও মোহাম্মদ আসিফ ১০ বছর ও মোহাম্মদ আমির পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন।

তিনজনের মধ্যে মোহাম্মদ আমির সারাবিশ্বের কাছে প্রচুর সমবেদনা পেয়েছে। কারণ তার বয়স ছিল ১৮ বছরের কম এবং দলের সিনিয়রের চাপে পড়ে ফিক্সিং এ জড়িত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে জাতীয় দলে ফিরেছেন। ফিরে পাকিস্তান দলকে ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপাও জিতেছেন।

সালমান বাট ছিলে এই কেলেঙ্কারির মূল হোতা। তাঁর প্ররোচনায় আমির এবং আসিফ ফিক্সিংয়ে জড়িত হয়েচ্ছেন। বাট জাতীয় দলে ফেরার আশা করেছেন ২০২০ সাল অবধি। তবে, ৩৬ বছর বয়সে এসে তিনি টের পান ‘পাকিস্তান দলে তাঁর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’। তাই তিনি খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টেনেছেন।

পাকিস্তান ক্রিকেটে বরাবরই ফিক্সিং একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে পাকিস্থান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) নিয়মিতই ক্রিকেটার এবং টিম অফিসিয়ালদের মধ্যে দুর্নীতি বিরোধী সেমিনার আয়োজন করে থাকে। স্পট ফিক্সিংয়ের সেই কেলেঙ্গারির পর পিসিবি নতুন করে নড়েচড়ে বসে।

পিসিবি চেয়ারম্যান এহসান মনি বলেন, ‘আমাদের উচিত ফিক্সিংকে একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা। আমরা সরকারের সাথে কথা বলছি এই বিষয়ে একটি আইন করার জন্য।’

পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা বার্তাসংস্থা এএফপি বলেন, ‘পাকিস্থানের উচিত ফিক্সিং এর নিষিদ্ধ হওয়া ক্রিকেটারদের জাতীয় দলে না ফেরানো। আমরা এর আগেও ফিক্সিং এ জড়িত ক্রিকেটারদেরকে জাতীয় দলে ফিরিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছি।’

সালমান বাটের পর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন মিসবাহ উল হক। যিনি কিনা ঐ ইংল্যান্ড সিরিজে দল থেকে বাদ পড়ার পর অবসর নেয়ার চিন্তা করেছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে দলকে টেস্ট রাংকিং এ শীর্ষ স্থানে তুলেছেন। এই ঘটনার ১০ বছর পর রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের মাটিতে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার গৌরব অর্জন করেন।

পাকিস্তান দল স্পট ফিক্সিংয়ের ভুত ভুলিয়ে দিতে পারলেও পাকিস্তানে সেই সংকট এখনও কাটেনি। প্রায়ই পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) শোনা যায় নানা রকম স্পট ফিক্সিং কিংবা ফিক্সিংয়ের খবর। খেলোয়াড়রা নানা মেয়াদে সাজাও পান। তবে, দীর্ঘমেয়াদে এই সংকটের কোনো সমাধান আসে না।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link