More

Social Media

Light
Dark

দ্য মাইটি হ্যাশ

২০১০ সালের ভারত সফরের টেস্ট সিরিজে হাশিম আমলার গড় ছিল ৪৯০! যে তিন ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ মিলেছিল, তাতে করেছিলেন যথাক্রমে ২৫৩*, ১১৪ ও ১২৩*! দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের ভেন্যু ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স।

যেখানে আমলার অসামান্য ব্যাটিং বীরত্বে প্রায় অসম্ভব এক ড্রয়ের স্বপ্ন দেখেছিল প্রোটিয়া সমর্থকরা। ৩৯৪ বলে অপরাজিত ১২৩ রানের ‘ম্যারাথন’ ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বাঁচাতে ব্যর্থ হলেও টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম রোমাঞ্চকর ‘ফিফথ ডে ক্লাসিক’ হিসেবে ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে।

২০১২ সালের ইংল্যান্ড সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়ে যায় তাঁদের ইতিহাসের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ানের দেখা। হাশিম আমলার ৩১১ রানের ‘মহাকাব্যিক’ ইনিংসে ভর করে ওভাল টেস্টে প্রোটিয়াদের জয় ইনিংস ব্যবধানে৷ লর্ডসে তৃতীয় টেস্টে আবারও আমলা ম্যাজিক!

ads

দ্বিতীয় ইনিংসে উপহার দেন এক অমূল্য শতরান (১২১)৷ স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ৫১ রানে হারিয়ে সিরিজ তো বটেই, তৎকালীন টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানটাও নিজেদের করে নেয় গ্রায়েম স্মিথের দল। ১২০.৫ গড়ে ৪৮২ রান করে যথারীতি প্লেয়ার অব দ্য সিরিজের পুরস্কারটা ওঠে হাশিম আমলার হাতে।

একই বছর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটা ছিল রিকি পন্টিংয়ের বিদায়ী টেস্ট, ভেন্যু ছিল পার্থ। আর এই ম্যাচেই ক্যারিয়ারের অন্যতম ফাইনেস্ট নক উপহার দেন হাশিম আমলা।

মিশেল জনসন, মিচেল স্টার্ক, নাথান লায়নদের পিটিয়ে, উইকেটের চারপাশে বাহারি স্ট্রোকের পসরা সাজিয়ে খেলেন ২২১ বলে ১৯৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস; যেখানে বাউন্ডারি ছিল ২১টা! স্ট্রাইক রেট ৮৯! রিকি পন্টিংয়ের বিদায়ী টেস্টে প্রোটিয়ারা জিতেছিল ৩০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে।

আমার দৃষ্টিতে, টেকনিক, টেম্পারমেন্ট কিংবা রান ক্ষুধা নয়, ‘ব্যাটসম্যান’ হাশিম আমলার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল এডাপ্টিবিলিটি, অভিযোজন ক্ষমতা৷ পৃথিবীর সব রকম কন্ডিশনে, সব রকম প্রতিপক্ষ ও সব রকম বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে রান করেছেন৷

ম্যাচের ধরন ও পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজন মত গিয়ার বদলাতে পারতেন বলেই টেস্ট-ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই আমলা ছিলেন সমান ধারাবাহিক। স্ট্রাইক রেট নিয়েও কখনো প্রশ্ন ওঠে নি।

মজার ব্যাপার হল, আমলার টেস্ট গড়ের (৪৬) তুলনায় ওয়ানডে গড় (৪৯) বেশি! ওয়ানডের স্ট্রাইক রেটটাও দারুণ, ৮৮.৩৯! ক্যারিয়ারের শুরুতে রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য যাকে ভাবা হত শুধুই টেস্ট ব্যাটসম্যান, সেই তিনিই ক্যারিয়ার শেষ করেন একজন ওয়ানডে কিংবদন্তি হিসেবে৷ ইনিংসের হিসাবে ওয়ানডেতে তাঁর দ্রুততম ২ হাজার, ৩ হাজার, ৪ হাজার, ৫ হাজার, ৬ হাজার ও ৭ হাজার রানের রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেনি৷

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমলার সেঞ্চুরির সংখ্যা ৫৫। তাঁর চাইতে বেশি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন শুধুমাত্র ৫ জন; টেন্ডুলকার (১০০), পন্টিং (৭১), কোহলি (৭০), সাঙ্গাকারা (৬৩), ক্যালিস (৬২)।

এবারে হাশিম আমলার টেকনিক, পছন্দের শট এসব নিয়ে কিছু বলা যাক। ক্যারিয়ারের শুরুতে দুর্বল টেকনিক, ফুটওয়ার্ক, সীমিত স্ট্রোক রেঞ্জ আর ত্রুটিপূর্ণ ব্যাকলিফটের কারণে সমালোচিত হলেও আমলা কিছুতেই হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নন। একটু সময় বেশি লাগলেও টেকনিক শুধরে, স্ট্রোক রেঞ্জ বাড়িয়ে আবার ফিরে আসেন তিনি।

পিওর ক্লাসিকাল ঘরানার ব্যাটসম্যান আমলা ছিলেন মূলত ব্যাকফুট প্লেয়ার। ট্রেডমার্ক শট ছিল ব্যাকফুট পাঞ্চ। এই শট আরও অনেকে খেললেও আমলার মত এত নিখুঁত প্লেসমেন্ট আর ডেফট টাচ খুব কম ব্যাটসম্যানই দেখাতে পেরেছেন। পয়েন্ট থেকে এক্সট্রা কাভার এরিয়া পর্যন্ত সবুজ ক্যানভাসে ঠিক কতবার যে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই।

ন্যাচারাল রিস্ট প্লেয়ার আমলা ফ্লিক আর গ্ল্যান্স শটেও ছিলেন অদ্ভুত সাবলীল। এমনকি অফ স্টাম্পের বাইরের বলকেও শাফল করে অনায়াসে কব্জির মোচড়ে পাঠিয়ে দিতেন স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে। পূর্ব পুরুষ ভারতীয় বলেই হয়ত প্রকৃতি প্রদত্তভাবে পেয়েছেন এই ক্ষমতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link