More

Social Media

Light
Dark

খিড়কিতে আইরিশ আবেগ, সিংহদুয়ারে থ্রি লায়ন্স!

বর্তমানে তাঁকে বলা হয় ইংরেজ রুপকথার রাজপুত্র। দু’শো বছরের ক্রিকেট ঐতিহ্য যাদের, সেই ইংরেজদেরই ক্রিকেটের ক্ষুদ্র পরিসর টি-টোয়েন্টি বাদে নেই কোন বিশ্বকাপ শিরোপা। এর আগে একদিনের বিশ্বকাপে তিনবারের ফাইনালিস্ট দল, অধরা সোনালী রঙের ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা হয়নি একবারও!

স্বপ্নের ফাইনাল, রোমাঞ্চে ভরপুর পুরো লর্ডস! রোমাঞ্চের শেষ পর্যায়ে এসে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। পুরো ম্যাচে ব্যাট হাতে লড়াই করে যাওয়া দু’জন বেন আর জস মিলে নিলেন ১৫ রান। ৬ বলে যখন ১৫ রানের বিশাল চ্যালেঞ্জ তখন ইংরেজ দলপতি বল তুলে দিলেন সদ্যই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করা আনকোরা নতুন জোফরার হাতে। যেনো বিশ্বকাপটাই তুলে দিলেন তার হাতে!

সাহসী বিগ ‘বেন’! সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকার ফাইনাল বা হেডিংলি’র ঐতিহাসিক সেই টেস্ট। ইংরেজ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস নিজেকে ছাড়িয়েছেন বহুপথ, নিজেকে প্রমাণ করেছেন কিংবদন্তিতুল্য হিসেবে! রগচটা স্বভাবের বেন যখন মাঠের বাহিরে বিভিন্ন সময়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছিলেন ঠিক তখনই ছাঁয়ার মতো পাশে পেয়েছিলেন সীমিত ওভারে ইংল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দেয়া আইরিশ সেই রাজপুত্রকে!

ads

২০১৪ সালের একেবারে শেষ মুহুর্তে এসে অ্যালিস্টেয়ার কুকের স্থলাভিষিক্ত হয়ে অধিনায়কত্ব পান। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় তার দল। মূলত ১১, ১৫ বিশ্বকাপের পরেই নড়েচড়ে বসে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। পরবর্তী চারবছরে তাদের ক্রিকেটের কালচারটাই চেঞ্জ করে দেয়। যার নৈপত্যের কারিগর সাদা চামড়ার এই নিপাট ভদ্রলোক।

জন্ম আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। ডাবলিনের লিসন স্ট্রিটের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি স্কুলে পড়াশোনা। ছেলেবেলায় আইরিশদের জনপ্রিয় খেলা হার্লিং বিশেষ পছন্দ করতেন তিনি। হার্লিংই একদিন ক্রিকেটের রিভার্স সুইপে বদলে যায়। যেমন ভাবে তিনি আইরিশ থেকে ইংরেজ হয়ে গিয়েছিলেন। তখনকার অ্যাসোসিয়েট দেশ আয়ারল্যান্ডের যুব দলের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলেন। আয়ার‌ল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেছেন। ২০০৪ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়ারল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রান ছিল তারই।

কোনো একবার সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘১৩ বছর বয়স থেকেই আমি ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। এটা আমার জন্য লজ্জার কিছু নয়। আমার বাবা বা বড়রা যারা আছেন তারাও আমাকে সমর্থন দিয়েছেন৷’ তবু তিনি কি কোনও দিন ডাবলিনের রাস্তা ঘাট ভুলতে পারবেন? হয়তো না। চেষ্টা করলেও হয়তো ভুলতে পারবেন না একসময়ের সতীর্থ দুই সহোদর নিল ও’ব্রায়েন, কেভিন ও’ব্রায়েনদের।

২০০৬ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ আইরিশ দলকে নেতৃত্ব দেন। বেশ চলছিল, কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারকে পরবর্তী পর্যায়ে ভাবতে চেয়েছিলেন সদ্য বিশ্বকাপজয়ী ইংরেজ অধিনায়ক। সুযোগ আসছিল না। এদিকে আয়ারল্যান্ডের হয়ে একের পর এক মাইলস্টোন পেরিয়ে যাচ্ছিলেন। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর থেকে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ২০০৯ দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামেন।

ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসাবে দুই দেশের হয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন। আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ইংল্যান্ডের হয়ে ফ্রেডরিক ফেনের সেঞ্চুরি করার রেকর্ডে ভাগ বসান শতাধিক বছর পর।

ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক যিনি দুই ভিন্ন দেশের হয়ে মাঠে নেমেছেন এবং দুই দেশেরই অধিনায়কের দায়িত্ব সামলেছেন। বাইরে থেকে তিনি আজ হয়তো নীল সাগরে ভাসছেন। ভিতরে কোথাও হয়তো আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে সবুজ আয়ারল্যান্ডের দিনগুলি। তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি দুই দেশের জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ খেললেন। ইয়ান বেলকে ছাপিয়ে হয়েছেন ইংরেজদের হয়ে সর্বোচ্চ রানের অধিকারী।

ক্রিকেট ইতিহাসে তাঁর আগেও অনেক ক্রিকেটের জন্মভূমির হয়ে না খেলে খেলেছেন ভিন্ন দলে৷ এই ওয়ার্ল্ডকাপেই যেমন তারই সতীর্থ জোফরা আর্চার, আদিল রশিদরা, বেন স্টোকসরা আছেন উদাহরণ হিসেবে। তিনি এই তালিকার স্পেশ্যাল একজন, যাঁর খিড়কিতে আইরিশ আবেগ, সিংহদুয়ারে থ্রি লায়ন্স৷

আজ থেকে এক শতাব্দী বা তারও কয়েকবছর পর ইংরেজ গ্রীষ্মে আবার যখন তার মতো করে ওয়ার্ল্ডকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরবে তখন পাশ থেকেই কোন কেউ একজন বলে উঠবেন, ‘আমাদের একজন রাজপুত্র ছিলেন, ভিনদেশী। যার হাত ধরেই আমরা পেয়েছি প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি ছুঁয়ে দেখার স্বাধ।’

তিনি ইয়ন মরগান- আইরিশ রাজপুত্র, ইংরেজ রুপকথার বীর সেনানী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link