More

Social Media

Light
Dark

রিগোবার্ট সং, ব্রাজিল বধ চিত্রনাট্যের পরিচালক

ক্যারিয়ারে চার চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। একই সাথে ক্লাব পর্যায়ে কাটিয়েছেন লিভারপুল, ওয়েস্টহ্যাম, গ্যালাতাসারের মতো প্রথম সারির ক্লাবগুলোর সাথে। বলছি ক্যামেরুনের রিগোবার্ট সংয়ের কথা। এবারের কাতার বিশ্বকাপ দিয়ে পঞ্চম বারের মতো বিশ্বকাপে আসরে নিজের পদধূলি দিচ্ছেন তিনি।

তবে, এবার আর খেলোয়াড় হিসেবে নয়, আফ্রিকার অদম্য সিংহদের গুরু হিসেবে। প্রথমবারের মতো কোচ হয়ে বিশ্বকাপে ক্যামেরুনকে সামলাচ্ছেন সং। আর প্রথমবারে এসেই দেখালেন চমক। ব্রাজিলকে হারানোর গল্পে আড়ালের নায়ক ছিলেন এই রিগোবার্ট সং।

তবে আজকের গল্পটা রিগোবার্ট সংয়ের ফুটবল ক্যারিয়ার কিংবা কোচিং নিয়ে নয়। স্যামুয়েল ইতো’র কাছের মানুষ হওয়ায় ক্যামেরুন ফুটবলে হঠাতই কোচ রূপে তার আবির্ভাব হওয়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে, বিতর্ক হতে পারে। এমনকি তার কোচিং ট্যাক্টিস নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে, আজকের গল্পটা সেসব বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে নয়। বরং মৃত্যু পথযাত্রী থেকে কিভাবে সং ফিরে আসলেন সেই গল্পই এ লেখার মূল উপজীব্য বিষয়।

ads

সালটা তখন ২০১৬। রিগোবার্ট সংয়ের বয়স তখন সবে চল্লিশ। এই চল্লিশেই কত ফুটবলারের মাঠে দাপিয়ে বেড়াবার উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু সে বছরের অক্টোবর মাসের শুরুর দিনেই হঠাতই অসুস্থ হয়ে পড়লেন রিগোবার্ট সং।

ছয় বছর আগেই, ২০১০ সালে বিশ্বকাপে ক্যামেরুনের হয়ে খেলেছিলেন। তাছাড়া বয়সও ততটা বেশি নয়। তাই সং তেমন আমলে নিলেন না। এমনিতে তিনি একাই থাকতেন। তাঁর পরিবার থাকতো প্যারিসে। সংয়ের একাকীত্বের একমাত্র সঙ্গী ছিল তাঁর কুকুর।

তো কোনো এক সকালে টেলিভিশন দেখতে বসেছিলেন রিগোবার্ট সং। দরজা খোলাই রেখেছিলেন। তবে টেলিভিশন দেখতে দেখতে একটা সময় খুব অস্বস্তি বোধ করলেন সং। একটা সময় অচেতন হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলেন। বাড়িতে কুকুর বলতে কেউ নেই। আর অমন সময়ে রিগোবার্ট সংয়ের সেই কুকুরই ত্রাতা হিসেবে হাজির হল।

নিজের মুনিবকে এভাবে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে ‘ঘেউ ঘেউ’ করে গর্জন করা শুরু করে। কুকুরের সেই শব্দ শুনে প্রতিবেশী একজন এসে দেখেন, রিগোবার্ট সং মেঝেতে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। এক মুহূর্ত দেরি না করে তিনি রিগোবার্টকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

হাসপাতালে সংকে নেওয়ার পর দেখা যায়, তাঁর স্ট্রোক হয়েছে। এর মাঝে তিনি কিছুদিনের জন্য কোমাতেও চলে যান। দিন তিনেক পর জ্ঞান ফিরে পান রিগোবার্ট সং। আবারো ধরণীর আলো বাতাস অবলোকন করেন তিনি। এ অদ্ভুত এক অনুভূতি। প্রায় নিস্তেজ হয়ে যাওয়া সং আবারো নিজেকে ফিরে পান। আর সেই প্রাণ ফেরানোর পিছনে ছিল তাঁর কুকুর।

রিগোবার্ট সং এরপর বহুবার সাক্ষাৎকারে তাঁর কুকুরের কথা বলেছেন। সত্যিকার অর্থেই, সেদিন তাঁর কুকুরটি না থাকলে সংয়ের জীবনযাত্রা সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কাতারে্র সবুজ ঘাসে ক্যামেরুনের সাইডলাইন থেকে বাহারি চুলের রিগোবার্টকে হয়তো আর দেখাই যেত না।

রিগোবার্টের এমন ফিরে আসার পিছনে তিনি আরেকজনকে কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করেন। তিনি তৎকালীন ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট পল বিয়া। রিগোবার্ট স্ট্রোক করার পর তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য সব ধরনের সাপোর্ট তিনি দিয়েছিলেন। এ নিয়ে রিগোবার্ট অনেক সময় প্রকাশ্যে বলেছেনও যে, ‘ঐ সময় পল বিয়া আমার পাশে না থাকলে আমি আজ এখানে থাকতে পারতাম না।’

২০১৬ সালের সেই ঘটনার ৬ বছর পরে আজ রিগোবার্ট সং ক্যামেরুনের কোচ। তবে শীর্ষ পর্যায়ের কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা তাঁর কখনোই ছিল না। কিন্তু এক সময়ের বন্ধু স্যামুয়েল এতো ক্যামেরুন ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান হওয়ার পর রিগোবার্ট অনেকটা আচমকাতেই কোচ হয়ে যান।

তাঁকে আফ্রিকার অদম্য সিংহদের পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। আর তাঁর হাত ধরেই অনেকটা নাটকীয় ভাবেই কাতার বিশ্বকাপে সুযোগ পায় ক্যামেরুন। প্লে-অফে শেষ মুহূর্তের গোলে আলজেরিয়াকে হারিয়ে তারা এ সুযোগ নিশ্চিত করে।

১৯৯০ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল ক্যামেরুন। গোল করে কর্নার ফ্ল্যাগের সামনে রজার মিলার সেই নাচ তো এখন বলতে গেলে বিখ্যাতই হয়ে গেছে। প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল রজার মিলার ক্যামেরুন। তবে এরপর আর কখনোই গ্রুপ পর্বের বাঁধা টপকাতে পারেনি আফ্রিকার এ দলটি।

এবারও তারা গ্রুপ পর্বের বাঁধা পেরোতে পারেনি। তবে ঠিকই নিজেদের শেষ ম্যাচে একটা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে তারা হারিয়েছে ব্রাজিলকে। আর এ জয়ের মধ্য দিয়েই বিশ বছর পর আবারো বিশ্বকাপে জয়ের মুখ দেখলো তারা। আর এই দৃশ্যপটের চিত্রনাট্যে পরিচালক ছিলেন রিগোবার্ট সং।

কী এক বিচিত্র জীবন! ৬ বছর আগে নাটকীয়ভাবে জীবন ফিরে পেয়েছিলেন রিগোবার্ট সং। আর আজ তাঁর অধীনেই ক্যামেরুন পেল ঐতিহাসিক এক জয়। ব্রাজিলকে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে হারানো নিশ্চয় সাধারণ ঘটনা নয়। অনেক ক্ষেত্রে সেটার সাথে অসম্ভব, অবিশ্বাস্য শব্দগুলোও জুড়ে দেওয়া যায়। আসলে জীবন নামক গল্পের মতো এ লৌকিক পৃথিবীতে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। সব কিছুই মূলত লৌকিকতার ভিন্ন ভিন্ন আবরণে পূর্ণ।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link