More

Social Media

Light
Dark

প্রোটিয়া দৈত্য বধের অধ্যায়

ওয়েস্ট ইন্ডিজে ২০০৭ বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশ গিয়েছিল লড়াই করতে। কেননা ততদিনে লড়াই করাটা শিখে গেছে হাবিবুল বাশার সুমনদের দলটা। মাঝেমাঝে সেই লড়াই থেকে জয়ও আসে। তবে সেই জয়গুলো তখনো অঘটন বলেই গন্য।

২০০৫ সালে আশরাফুলের সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ২০০৭ বিশ্বকাপেও ভারতকে হারিয়ে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। তারপর তখনকাল এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াই করেই জেতে বাংলাদেশ। আবারও সেই জয়ের নায়ক মোহম্মদ আশরাফুল।

২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইটে জায়গা করে নেয়া বাংলাদেশের অধিনায়ক তখন হাবিবুল বাশার সুমন। তখনকার বিশ্ব র‍্যাংকিং এর এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে হাবিবুল বাশারকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই ম্যাচে আপনাদের প্রত্যাশা কী? জেতা না লড়াই করা? অধিনায়ক উওর দিয়েছিলেন তাঁরা লড়াই করতে চান।

ads

সেরকম একটা পরিস্থিতে খেলতে নেমে দেখা গেল এক অন্য বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তাঁর আগে দু-একটা আপসেট ঘটিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ভারতকেও ওয়ানডে ক্রিকেটে হারিয়ে দিয়েছিল তখনকার বাংলাদেশ। তবে সবাই এমনকি সেই বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররাও বোধহয় একবাক্যে বলবেন সেগুলো অঘটনই ছিল। আজকের দিনে ঠিক চৌদ্দ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর আগে বাংলাদেশ যেই আপসেট গুলো ঘটিয়েছিল সেগুলোতে ছিল ভাগ্যের অনেক হিসাব-নিকাশ। সেই জয়গুলো এসেছিল ম্যাচের একদম শেষ প্রান্তে গিয়ে।

অবস্থা এমন ছিল যে জয়ের ঠিক আগ মুহুর্তেও মনে হতো এই বুঝি বাংলাদেশ হেরে গেলো। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই প্রথম পুরো ম্যাচেই ডোমিনেট করে খেললো বাংলাদেশ। প্রোটিয়া পেসারদের ১৮ বছর বয়সী তামিমের ডান্সিং ডাউন দ্যা উইকেটে এসে বল সীমানা পাড় করা দিয়ে শুরু।

তারপর সেই সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আশার ফুল এলেন। তাঁর সেই ৮৩ বলে ৮৭ রানের ইনিংসে যেনো অসহায় আত্মসমর্পন করলো আফ্রিকার বোলাররাও। সাথে আফতাব আহমেদের ৩৫ রানের ইনিংস বড় সংগ্রহের আভাসই দিচ্ছিল। শেষ দিকে মাশরাফির ১৬ বলে ২৫ রানের ক্যামিও তে সেদিন বিশ্বকাপে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ।

২৫২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম আঘাতটা হানেন সৈয়দ রাসেল। প্রোটিয়া অধিনায়ক গ্রায়াম স্মিথকে ফিরিয়ে জানান দেন এক নতুন বাংলাদেশের। এদিকে হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশের মানুষ তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিল আনন্দ মিছিলের।

তারপর রাজ্জাক-রফিকদের ঘুর্ণিতে একে একে ফিরে গেলেন জ্যাক ক্যালিস, এবি ডি ভিলিয়ার্সরা। ২৫২ রানের টার্গেটকে যেনো পাহাড়সম করে তুলেছিল বাংলাদেশি বোলাররা। পুরো ম্যাচে কখনোই জয়ের আশাও তৈরি করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।

সেই প্রথম বিশ্বের এক নম্বর দল আফ্রিকাকে হারালো বাংলাদেশ, এত বড় ব্যবধানেও সেই প্রথম। রাজ্জাকে বলে এনটিনির ব্যাটের কোণায় লেগে আকাশে ভাসতে থাকা সেই বল মাশরাফি পিছন দিকে দৌড়ে যখন তালুবন্দী করলেন তখন কফিনের শেষ প্যারেকটা দেয়া হলো। ১৮৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৬৭ রানের বড় জয় পায় বাংলাদেশ।

তারপর মাশরাফি, রাজ্জাক, আশরাফুলদের আর কে ছঁতে পারে। উইকেট গুলো তুলে নিয়ে মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটোছুটিতে সে কী আনন্দ! সেই আনন্দ মাঠ থেকে ছড়িয়ে পড়লো ড্রেসিং রুমে বসে থাকা বাংলাদেশের তৎকালীন কোচ ডেভ হোয়াটমোরের চোখে-মুখেও।

সেই আনন্দ ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকাশ বাতাস হয়ে বয়ে গেল এই ব-দ্বীপের উপর দিয়েও। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের সে কী উল্লাস। সেই তো আমাদের প্রথম বড় হয়ে উঠা, সেই প্রথম চোখে চোখ রেখে জেতা, অত:পর আমাদের ক্রিকেট উত্থান।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link