More

Social Media

Light
Dark

ক্রনিয়ে ক্রনিকাল

একসাথে নায়ক ও খলনায়কের ভূমিকায় খুব কম মানুষকেই দেখা গিয়েছে। এই গুটি কয়েকের মাঝে একজন ছিলেন হ্যানসি ক্রনিয়ে। ক্রিকেট মাঠে তিনি যেমন অন্যতম সেরা এক নায়ক, তেমনি একজন খলনায়কও। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়কদের নাম বললে যেমন তিনি থাকবেন তেমনি ক্রিকেট দুনিয়ার খলনায়কদের তালিকাতেও সবার উপরের দিকে থাকবেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রনিয়ে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অনেক খ্যাতি অর্জন করলেও ক্রনিয়ের জীবনের শেষটা ছিল কুখ্যাত আর কলঙ্কময়!

  • এপ্রিল ৭, ২০০০

ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ফিক্সিং সন্দেহে হ্যান্সি ক্রনিয়েকে জেরা করে দিল্লী পুলিশ। ক্রনিয়ের সাথে এক ভারতীয় ব্যবসায়ীর স্পট ফিক্সিং সংক্রান্ত আলাপনের প্রমাণও মেলে। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন ক্রনিয়ে।

  • এপ্রিল ৯, ২০০০

সংবাদ সম্মেলনে ক্রনিয়ে বলেন, ‘আমি এটা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই আমি ভারতের বিপক্ষে সিরিজে কোনো প্রকার অর্থই গ্রহণ করিনি কারো কাছ থেকে। এমনকি আমি এও পরিষ্কার করতে চাই যে আমি আমার দলের কাউকেই বলিনি ম্যাচ ছেড়ে দিতে।’

ads

  • এপ্রিল ১১, ২০০০

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) ক্রনিয়েকে বরখাস্ত করে অধিনায়কের পদ থেকে। কারণ বোর্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে ক্রনিয়ে জানান তিনি কিছু তথ্য দেওয়ার বিনিময়ে ১০-১৫ হাজার ডলার তিনি নিয়েছেন! তবে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ চলাকালীন তিনি কোনো ম্যাচেই ফিক্সিং করেননি।

  • এপ্রিল ১২, ২০০০

২০০০ সালের জানুয়ারিতে সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্টে দুই পক্ষেই দুই ইনিংস ব্যাট বা করেই স্বেচ্ছায় ইনিংস ঘোষণা করে! সিএসএ থেকে তখন জানানো হয় ক্রনিয়ের পরামর্শেই যেহেতু এমনটা করা হয়েছিল তাই ফিক্সিংয়ের অভিযোগ হিসেবে ওই টেস্ট নিয়েও তদন্ত করা হবে।

  • এপ্রিল ২৮, ২০০০

ভারত সরকার তাদের গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (সিবিআই) এই ম্যাচ ফিক্সিং ইস্যুতে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। এমনকি সেখানে কোনো ভারতীয় ক্রিকেটার জড়িত কিনা সে নিয়েও তদন্তের কথা বলা হয়।

  • জুন ৭, ২০০০

কিং কমিশন ক্রনিয়ের এই ইস্যুতে তখন তদন্ত করছিল। সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার প্যাট সিমকক্স সাক্ষ্য দেন যে, ১৯৯৪-৯৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার জন্য কক্সের সাথে আলাপ করেন ক্রনিয়ে। এমনকি ১৯৯৬ সালে মুম্বাইয়ে এক টিম মিটিংয়ে এক ওয়ানডেতে হারের বিনিময়ে ২৫০০০০ ডলার পাওয়ার প্রস্তাবও দেন ক্রনিয়ে।

  • জুন ৮, ২০০০

সাবেক প্রোটিয়া তারকা হার্শাল গিবস যেন কফিনের শেষ পেরেকটা ঠুঁকে দিলেন। তিনি জানান ভারতের বিপক্ষে এক ওয়ানডে ম্যাচে ২০ রানের কম করলে তাঁকে ১৫ হাজার ডলার দেওয়া হবে!

  • জুন ৯, ২০০০

দিল্লী পুলিশের তদন্তে উঠে আসে নিকি বোয়ের নাম। যদিও নিকি বোয়ে এতে অবাক হয়ে বলেন ক্রনিয়ে কখনোই আমাকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের জন্য কোনো প্রস্তাব দেয়নি। অপরদিকে, পেসার হেনরি উইলিয়ামস সাক্ষ্য দেন যে এক ম্যাচে খরুচে বোলিংয়ের জন্য তাকে ১৫ হাজার ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দেয় ক্রনিয়ে। পিটার সিনড্রক্স জানান ভারতের বিপক্ষে মুম্বাই টেস্টের আগে বড় রকমের অর্থের অফার দেন ক্রনিয়ে।

  • জুন ১০, ২০০০

তিনদিন পর ক্রনিয়েকে কিং কমিশন থেকে জানানো হয় যদি তিনি সব অভিযোগ স্বীকার করে নেন তাহলে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার ফৌজদারি মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হবে।

  • জুন ১৩, ২০০০

কিংবদন্তি প্রোটিয়া অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস বলেন মার্ক বাউচার ও ল্যান্স ক্লুজনার সহ তাদের তিনজনকে ২০০০ সালের মার্চে ভারতের বিপক্ষে ব্যাঙ্গালুরু টেস্টের আগে ফিক্সিং প্রস্তাব দেন ক্রনিয়ে।

  • জুন ১৫, ২০০০

প্রথমবার ক্রনিয়ে স্বীকার করেন ১৯৯৬ সাল থেকে জুয়াড়ির কাছ থেকে তিনি মোট ১ লাখ ডলার নিয়েছেন। তবে তিনি জানান তিনি কোন ম্যাচেই ফিক্সিং করেননি। একই সাথে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণাও দেন এই সাবেক অধিনায়ক। ক্রনিয়ে কিং কমিশনকে জানান ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন প্রথম তাঁকে ১৯৯৬ এর টেস্টে সিরিজের সময় এক জুয়াড়ির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। অবশ্য এই অভিযোগের পর ক্রনিয়েকে ‘রাবিশ’ বলেন আজহার!

  • জুন ২৩, ২০০০

ক্রনিয়ে গণমাধ্যমের সামনে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। তিনি অর্থ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং জানান ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ছিল আছে তাই কখনো ক্রিকেটের সাথে গাদ্দারি তিনি করবেন না।

  • জুন ২৬, ২০০০

কিং কমিশনের শুনানির প্রথম ধাপ শেষে ক্রনিয়ে ফিক্সিংয়ে অভিযুক্ত থাকায় ক্ষমা চান। ওইদিনই সাবেক পুলিশ কমিশনার স্যার পল কনডনকে আইসিসি দুর্নীতি ইউনিটের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

  • আগস্ট ২৮, ২০০০

ডিসেম্বর ৩১, ২০০০ পর্যন্ত হার্শেল গিবস ও হেনরি উইলিয়ামসকে নিষেধাজ্ঞা দেয় ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ)। অবশ্য ওই যাত্রায় মামলা থেকে খালাস পান পিটার স্ট্রাইডম।

  • অক্টোবর ১১, ২০০০

সিএসএ থেকে ক্রনিয়ের উপর আজীবন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সব ধরনের ক্রিকেটেই এই নিষেধাজ্ঞা পান তিনি।

  • জুন ১, ২০০২

৩২ বছর বয়সে বিমান দূর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যান হ্যানসি ক্রনিয়ে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে কোস্টাল টাউনের কাছে এক পর্বতে বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান ক্রনিয়ে। চার বছর পর তদন্ত রিপোর্টে জানা যায় পাইলটের অসতর্কতার কারণেই ক্রনিয়ের মৃত্যু হয়।

  • নভেম্বর ৩, ২০০৪

ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্ট সিরিজের দল থেকে নিজের নাম সরিয়ে নেন নিকি বোয়ে। কারণ গোপন সূত্রে তিনি খবর পান ভারতে গেলেই পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হবে তাঁকে।

  • অক্টোবর ১২, ২০০৬

২০০০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার ভারত সফর নিয়ে প্রায় ২ ঘন্টা গিবসকে জেরা করে দিল্লী পুলিশ। গিবস তখন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিনার ড্যারেক ক্রুকসের নাম নিয়ে বলেন সে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সাথে জড়িত ছিল। ক্রুকসকে অবশ্য নির্দোষ হিসেবে দাবি করে কিং কমিশন।

  • অক্টোবর ১৩, ২০০৬

কিং কমিশন আরোপ তুলে নেওয়ার পরেও দিল্লী পুলিশ তাঁর উপর অভিযোগ হানায় বেশ হতবাক হয়ে পড়েন ক্রুকস।

  • ডিসেম্বর ১১, ২০০৭

২০০০ সালের পর প্রথমবার ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ (আইসিএল) খেলতে ভারত যান নিকি বোয়ে। সেখানে সুযোগ পেয়ে পুলিশ তাকে জেরা করে। তবে বোয়ে বলেছিলেন তিনি ম্যাচ ফিক্সিং সংক্রান্ত কিছুই জানেন না।

  • মার্চ ১৭, ২০০৮

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না হ্যান্সি ক্রনিয়েকে এমনটাই জানানো হয় সিএসএর পক্ষ থেকে।

  • জুলাই ২২, ২০১৩

প্রায় ১৩ বছরের বেশি সময় পর ২০০০ সালের ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে শুধুমাত্র হ্যান্সি ক্রনিয়ের নামে চার্জশিট গঠন করে দিল্লী পুলিশ। ওই চার্জশিটে বেশ কিছু জুয়াড়ির নামও ছিল!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link