More

Social Media

Light
Dark

হিমবাহ ভেঙেচুরে তীব্র স্রোতের তুষারঝড়

বয়সটা যখন ৩৭ হয়ে যায় তখন বুঝে নিতে হয় পেশাদার ক্রিকেট খেলার জন্য আর বেশি সময় নেই। এই বয়সে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই টাইমিংয়ে গড়বড় হতে শুরু করে, রিফ্লেক্স নষ্ট হতে শুরু করে। নিজের সেরা ফর্ম ধীরে ধীরে অতীত হয়ে উঠে। বিদায় বলার ক্ষণ গণনা করতে হয়।

কিন্তু দীনেশ কার্তিক বোধহয় সাধারণ কেউ নন, তাইতো ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে আরো বেশি ছন্দময় হয়ে উঠেছেন। মনে হতেই পারে, এই বয়সে এসে দীনেশ কার্তিকের প্রমাণ করার কিছু নেই। কিন্তু ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার আগে শেষবারের মত নিজের সামর্থ্যের প্রতিফলন দেখাতে চেয়েছিলেন এই ব্যাটসম্যান। সেই ইচ্ছেও পূরণ হয়েছে তাঁর।

ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির ছায়াতেই ছিলেন দীনেশ কার্তিক। নিজের ভাগ্যকে দোষ দেয়া ছাড়া কি-ই বা করার ছিল তখন; কিন্তু এখন করার অনেক কিছু আছে। তাই কঠোর পরিশ্রমের বদৌলতে তামিল নাড়ুর এই ক্রিকেটার নিজের ক্রিকেটীয় অধ্যায়ের উপসংহার নিজ হাতে লিখে যাচ্ছেন।

ads

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়েছিলেন দীনেশ কার্তিক। এরপর দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় পর ২০২২ সালের মে মাসে পুনরায় আকাশি-নীল জার্সি গায়ে জড়ানোর সুযোগ পান না। তখনও কিন্তু দলে কার্তিকের জায়গাটা নড়বড়েই ছিল। সেসময় তাঁর জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ২০২২।

পুরোনো ক্লাব কলকাতা নাইট রাইডার্স ছেড়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙালুরু যখন যোগ দিয়েছিলেন দীনেশ কার্তিক তখন বোধহয় পুরোনো অফ ফর্মটাও রেখে এসেছিলেন সেখানেই। বিরাট কোহলির দলে জায়গা পেতেই দেখা মিলেছিল অন্য রকম কার্তিকের। ব্যাঙ্গালোরের হয়ে ১৬ ম্যাচে করেছিলেন ৩৩০ রান, স্ট্রাইক রেটটা ১৮৩.৩৩। পুরো আসরে সবমিলিয়ে ২২টি ছয় আর ২৭টি চারের দেখা মিলেছিল কার্তিকের ব্যাটে, যার অধিকাংশ এসেছিল স্লগ ওভারে অথবা রান তাড়া করার সময়।

পরিসংখ্যান দূরে সরিয়ে থেকে সরাসরি বলা যায় যে, দীনেশ কার্তিক এর আগে কখনো এতটা ভাল ব্যাটিং করেন নি। স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় নির্বাচকদের নজরে চলে আসেন এই অভিজ্ঞ উইকেট রক্ষক। আইপিএলের পর থেকে ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত মুখ হয়ে গিয়েছেন কার্তিক। আপাতত এই ডানহাতির লক্ষ্য এবারের এশিয়া কাপে ভাল কিছু করে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলে স্থান করে নেয়া।

দীনেশ কার্তিকের এমন প্রত্যাবর্তন হুট করেই হয়নি। বরং এর পিছনে আছে অর্ধ যুগের পরিশ্রম আর অনুশীলন – এমনটাই বলছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের সহকারী কোচ অভিষেক নায়ার।

তিনি আরো বলেন, ‘ভারতের হয়ে খেলার এবং বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখতো সে (দীনেশ কার্তিক)। অনেক লোক এটি বিশ্বাস করেনি যে এমন স্বপ্ন পূরণ হবে না। এমনকি সে নিজেও শুরুতেও ভাবেনি আবারো জাতীয় দলে ফিরতে পারবে। তবে আমি মনে করি, শৃঙ্খলা এবং অনুশীলনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে সে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে এটি সম্ভব।’

ভারতীয় এই কোচ জানান, ‘আমি এবং কার্তিক ব্যাটিংয়ের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করেছি; বিশেষ করে টেকনিক্যাল ব্যাপার এবং মানসিকতার দিকে জোর দিয়েছিলাম। যা তাঁর ব্যাটিংকে আরো অনেক বেশি সাবলীল এবং বৈচিত্র্যময় করেছে।’

আর এই কারণেই দীনেশ কার্তিকের ইনিংসগুলোতে পেশি শক্তির চেয়ে বুদ্ধিমত্তা বেশি ফুটে উঠেছে। কখনো ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসে সুইপ খেলছেন, কখনো আবার রিভার্স সুইপ বা স্কুপের সাহায্যে বাউন্ডারি বের করে নিচ্ছেন। আন্দ্রে রাসেল কিংবা কায়রন পোলার্ডদের মত ফিনিশারদের চেয়ে এই দিক দিয়ে ভিন্ন দীনেশ কার্তিক। তিনি চাপের মুখে ব্যাট করতে জানেন; ক্যালকুলেটিভ রিস্ক নিয়ে দ্রুত রান তোলার সক্ষমতা আছে তাঁর।

ভারত প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সেদিন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার উঠেছিল তরুণ দীনেশ কার্তিকের হাতে। এরপর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর; ধ্রুব আছেন এই উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। দেশের হয়ে খেলার সুতীব্র আকাঙ্খা-ই তাকে এতটা পথ পাড়ি দিতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link