More

Social Media

Light
Dark

দ্য চ্যাম্পিয়ন্স লাক

হইহই রইরই করতে করতে এসে গেলো আরেকটা আইসিসি ইভেন্টের ফাইনাল, আবার ভারত ফাইনালে, এবং সাম্প্রতিক অতীতের রেকর্ড দেখলে, খুব আশাবাদী হবার কারণ নেই। যদিও অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডকে ছিটকে দেওয়া গেছে, তবুও, মনে আছে নিশ্চয়ই যে আইসিসি ইভেন্টের নক আউটে ভারত ২০১৪ সাল থেকে যেকোনো প্রতিপক্ষের কাছেই হেরে আসছে।

২০১৪ টি টোয়েন্টি ফাইনালে সেমিতে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েও শ্রীলঙ্কার কাছে অপ্রত্যাশিত হার। ২০১৫ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার। ২০১৬ সেমিফাইনালে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হার। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আনবিটেন হয়ে ফাইনালে উঠেও পাকিস্তানের কাছে লজ্জাজনক হার। ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে অপ্রত্যাশিত হার।

২০২১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার। ২০২২ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে লজ্জাজনক পরাজয় এবং আনবিটেন হয়ে ফাইনালে উঠেও ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে হার্ট ব্রেকিং লস অস্ট্রেলিয়ার কাছে। অর্থাৎ, বিপক্ষ যেই হোক, ফাইনাল হার্ডল পেরোতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছে টিম ইন্ডিয়া। এবং এর মধ্যে অধিকাংশ টুর্নামেন্টেই বিপক্ষ দলের তুলনায় ভারতের ফর্ম ও শক্তি বেটার ছিল।

ads

একটাই সান্ত্বনা, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে কোনোদিন নক আউট ম্যাচ হারেনি ভারত। ২০০০ আইসিসি নক আউট এবং ২০১৪ সেমিফাইনাল জেতার রেকর্ড আছে। কিন্তু একটা ক্রাঞ্চ ফাইনালে অতীতের রেকর্ড দিয়ে কিছু হয়না। যে নার্ভ ধরে রাখতে পারবে, অ্যাডভান্টেজ তার।

ভারত জিতলে আমরা কি করবো সেটা মোটামুটি পরিষ্কার। কিন্তু ক্রিকেট যেহেতু এক বলের খেলা, একটা দুর্দান্ত ক্যাচ যেমন ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে ( যেমন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অক্ষরের ক্যাচ) তেমনি একটা মিস হিট ( ২০২৩ ফাইনাল) বা একটা নো বল ( ২০১৬, ২০১৭) বা একটা বাজে বলেও খেলা ঘুরে যেতে পারে।

এখানে একটু অন্য খেলার উদাহরণ দিই। ফুটবলের গোল্ডেন জেনারেশন হিসেবে পরিচিত অনেক দল বিশ্বকাপ জেতেনি। যেমন ২০০০-২০০৬ এর পর্তুগাল। ডেকো, ফিগো,রুই কস্তা এবং তরুণ রোনাল্ডোকে নিয়ে গড়া এই দল কোনোদিন বিশ্বকাপ পায়নি। ১৯৫০-৫৬ সালের হাঙ্গেরি বিশ্বকাপ জেতেনি। বেকহ্যাম, রুনি, ওয়েন সম্বলিত ইংল্যান্ড কোনোদিন বিশ্বকাপ পায়নি। ৭০ এর দশকের নেদারল্যান্ড দুর্দান্ত টিম হয়েও বিশ্বকাপ জিততে ব্যর্থ।

এমনকি আর্জেন্টিনার মত দলকে ৮৬ থেকে ২০২২ অবধি অপেক্ষা করতে হয়েছে একটা বিশ্বকাপের জন্যে। বিশ্বকাপ জয় পুরোটাই খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব ও ব্যর্থতার উপর নির্ভর করে না। চ্যাম্পিয়ন্স লাক বলে একটা জিনিস হয়, যেটা অনেকসময় আপনার পক্ষে যায়, অনেকসময় বিপক্ষে। যেমন ৯২ বিশ্বকাপের রেন রুল নির্মমভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ছিটকে দিয়েছিল।

যেমন আম্পায়ারিংয়ের ভুল ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ নিউজিল্যান্ডের থেকে কেড়ে নিয়েছিল। মাইক গ্যটিংয়ের একটা ভুল শট ৮৭ সালে ইংল্যান্ডের স্বপ্ন শেষ করে দেয়। সবথেকে অবাক করা এবং হাস্যকর ব্যাপার হলো ব্রায়ান লারার কোনো বিশ্বকাপ নেই, কিন্তু ড্যারেন স্যামির দুটো বিশ্বকাপ। একটা সময় (২০১১ ফাইনালের আগে পর্যন্ত) বলা হতো যোগিন্দর শর্মারও বিশ্বকাপ আছে, কিন্তু শচিনের নেই!

ভারত আজকে বিশ্বকাপ জিতুক বা না জিতুক, আমরা যেনো ভুলে না যাই যে রোহিত কোহলি বুমরা কুলদীপ সুর্যকুমার সম্বলিত এই দল চ্যাম্পিয়ন হবার যোগ্য দাবিদার ছিল। হয়তো ভারতীয় জার্সিতে রোহিত এবং কোহলির এটাই শেষ বিশ্বকাপ। হয়তো ভারতীয় ক্রিকেটের এই দুই লিজেন্ডকে আমরা আর একসাথে দেখতে পাবোনা সাদা বলের ক্রিকেটে।

আজকের ফাইনাল না জিতলেও, তাদের লিগাসি, তাদের অবদান কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে থেকে যাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই দলটা অস্ট্রেলিয়ার থেকেও বেশিবার ফাইনাল খেলেছে আইসিসি ট্রফির। ধারাবাহিকতায় ভারত এখন বিশ্বের এক নম্বর ক্রিকেট দল। এবার শুধু ট্রফিটা জেতার অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link