More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

রুপান্তর গল্পের আর্জেন্টাইন অধ্যায়

ডিয়েগো ম্যারাডোনার যুগ থেকেই বিশ্বজুড়ে আর্জেন্টিনার ভক্তদের উন্মাদনা ঈর্ষনীয়। কিন্তু ওই রেশ, মাঠের খেলায় আর্জেন্টিনাকে খুঁজে পাওয়া শক্ত ছিল। প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে কোন ট্রফি জিততে পারেনি তারা। বিশ্বকাপ তো দূরে থাক, কোপা আমেরিকার শিরোপাও জেতা হয়নি দলটার। একজন লিওনেল মেসি বারবার টেনে নিয়েছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিরতে হয়েছিল একরাশ হতাশা নিয়ে।

২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে তো আর্জেন্টিনার অংশগ্রহণ শঙ্কার মুখে পড়েছিল। শেষপর্যন্ত কোয়ালিফাই করলেও মূল পর্বে ব্যাপক ভরাডুবি হয় লাতিন আমেরিকার দেশটির। সেসময় তৎকালীন কোচ হোর্হে সাম্পাওলি-কে বিশ্বকাপে ব্যর্থতার অজুহাতে ছাটাই করা হয়। এরপর আর্জেন্টিনা ফুটবলের নীতি-নির্ধারকরা নিয়ে আসেন অখ্যাত একজনকে।

সেই অখ্যাত একজন হচ্ছেন আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের বর্তমান কোচ লিওনেল স্কালোনি। কোচ হিসেবে স্কালোনি’র তেমন খ্যাতি না থাকায় ভক্তদের প্রত্যাশার পারদ খুব একটা উঁচুতে ওঠেনি শুরুর দিকে। কিন্তু তার হাত ধরেই অনেকটা নীরবে শুরু হয় আলবিসেলেস্তাদের পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়া।

ads

পরিবর্তন আনার জন্য দল বাছাই এবং পরিকল্পনায় কোচ তার প্রজ্ঞার ছাপ রাখতে শুরু করেন। আর্জেন্টিনা থেকে ইতালি, স্পেন থেকে ফ্রান্স, এমনকি নেদারল্যান্ডস — কোনো আর্জেন্টাইন আশা জাগানিয়া পারফরম্যান্স দেখাতে পারলেই তাকে দলে ডেকে নিয়েছিলেন।

তবে পুরোনো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের তিনি একেবারে বাদ দিয়ে দেয়া হয়নি। দলের উন্নতির এই চলমান প্রক্রিয়াতে বর্ষীয়ান খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতার সদ্ব্যবহার করেছেন কোচ স্কালোনি। ফলে অভিজ্ঞতা আর তারুন্যের মিশ্রনে আর্জেন্টিনা দলে এসেছে ভারসাম্য। দল বাছাই এবং স্কালোনি’র ফুটবল কৌশলের কার্যকারিতার ফলাফল হাতেনাতে পাওয়া গিয়েছে।

ট্রফি জয়ের দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটেছে লিওনেল স্কালোনি’র হাত ধরেই। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা’র ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপা খরা কাটায় লাতিন আমেরিকার দেশটি। তাছাড়া আন্তঃমহাদেশীয় লড়াইয়ে ইতালিকে হারিয়ে ফাইনালিসিমা ট্রফি জিতেছে লিওনেল মেসির দল। শুধু জয়-ই নয়, মাঠের খেলায় এতটা গুছানো আর্জেন্টাইন দল লম্বা সময় ধরেই আর দেখা যায়নি।

দুই দশকের ট্রফি আক্ষেপ ঘুচিয়েও আর্জেন্টিনা থেমে নেই। এখনও জয়ের ধারা বজায় রেখেছে স্কালোনির শিষ্যরা। দিনদিন আরও ক্ষুরধার হচ্ছে তাদের খেলার ধরন। তবে জিততে পারাই বর্তমান দলটির সবচেয়ে বড় পরিচয় নয়। বরং মেসি-নির্ভরতা কমিয়ে একটি পরিপূর্ণ দল হয়ে খেলতে পারাটাই তাদের বড় শক্তি।

পূর্বসূরিদের মতো কোচ স্কালোনি কখনোই স্রেফ মেসিকে ঘিরে আর্জেন্টিনার একাদশ সাজাননি; বরং তার একাদশে মেসি শুধুই দলের একজন সেরা খেলোয়াড়। মূলত এই ধারণা এবং খেলোয়াড়দের প্রত্যেকের উপর দায়িত্ব ভাগ করে দেয়ায় দলের পারফরম্যান্সে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।

এছাড়া মেসি-নির্ভরতা কমে আসায় আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকেও আলাদা চাপ নিতে হয়নি। স্কালোনি যখন যেভাবে চেয়েছেন, তিনি নিজেও মাঠে সেভাবেই খেলে যেতে পেরেছেন। চাপমুক্ত মেসির পারফরম্যান্সেও দেখা গিয়েছে উন্নতি।

তাছাড়া বর্তমান আর্জেন্টিনা দলের অন্যতম শক্তি প্রতিপক্ষকে রীড করতে পারা। বিপক্ষ দলের একাদশ, খেলোয়াড় বিবেচনা করে আর্জেন্টাইন কোচ নিজের দলের পরিকল্পনা নতুন করে তৈরি করেছেন। নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নিয়ে বারবার তিনি একাদশ সাজান নি। সবসময়ই ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষের খেলার ধরন বুঝে তার কৌশল পাল্টে ফেলেছেন। এমনকি বদল এনেছেন খেলোয়াড়দের মাঝেও।

যখন আক্রমনাত্মক ফুলব্যাক দরকার হয়েছে, তখন মাঠে নামিয়েছেন গঞ্জালো মন্তিয়েলকে। আবার রক্ষণভাগে মনোযোগী হওয়ার সময় ব্যবহার করা হয়েছে নাহুয়েল মলিনা। মিডফিল্ডেও একই কথা; কখনো বক্স-টু-বক্স হিসেবে খেলেছেন রদ্রিগো ডি পল এবং লো সেলসো।

আবার সৃজনশীলতার প্রয়োজন হলে মাঠে এসেছেন পাপু গোমেজ। আর ডিফেন্সে বাড়তি সাহায্যের দরকার হলে প্যারাদেস’কে ব্যবহার করা হয়েছে মাঝমাঠে। সময়ে সময়ে আবার ম্যাচের অবস্থা বুঝে ৪-৪-২ ডায়মন্ড শেপের ছকে আনহেল ডি মারিয়ার দুরপাল্লার শট আর ক্রস নেবার দক্ষতাও ব্যবহার করেছে টিম আর্জেন্টিনা।

দলীয় ভারসাম্য আর খেলোয়াড়দের সক্ষমতার সঠিক ব্যবহারই আলবিসেলেস্তাদের উন্নতির অন্যতম মূল কারণ। এছাড়া ডিফেন্স লাইন নিয়ে সর্বশেষ বড় টূর্নামেন্টগুলোতে বেশ ভুগতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। তবে সম্প্রতি ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো’র মত সেন্টার ব্যাক আর অ্যামিলিয়ানো মার্টিনেজের মত গোলরক্ষকের উঠে আসায় ডিফেন্স নিয়েও চিন্তা কমেছে দলটির।

অবশ্য এই নতুন আর্জেন্টিনা লাতিন আমেরিকার বাইরের কোনো দেশের বিপক্ষে এখনও নিয়মিত মুখোমুখি হয়নি। তারা অধিকাংশ ম্যাচই খেলেছে নিজেদের মহাদেশের দেশগুলোর বিপক্ষে। তাই আগামী বিশ্বকাপের ময়দানে তারা যখন খেলতে আসবে, তখন সেখানে থাকবে ভিন্ন পরিবেশের মাঠ এবং অন্য মহাদেশের দল।

মাস্টারমাইন্ড লিওনেল স্কালোনি হয়তো এদিকটাও ভেবে রেখেছেন। শিষ্যদের নিয়ে বিশ্ব মঞ্চের লড়াইয়ে জেতার ছক নিশ্চয়ই এঁকে ফেলেছেন মাথায়। এখন শুধু মাঠে প্রয়োগের অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link