More

Social Media

Light
Dark

ধন্যবাদ, লিটল ম্যান!

লাল-সবুজের ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের হাতে তলোয়ার হিসেবে গ্লাভসের চেয়েও ব্যাট টাই যে বেশি শোভা পায় তা নি:সন্দেহে প্রমাণিত। তারপরেও প্রমাণ খুঁজলে সবশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজ আর ডিপিএলের সবশেষ ম্যাচে মুশির ম্যাচ বাঁচানো অর্ধ-শতক তা প্রমাণ দিবে আরেকবার।

উইকেটের পেছনের মুশফিক দেশের ক্রিকেটে রেকর্ডধারীও বটে, তবে ফসকে যাওয়া ক্যাচ আর স্ট্যাম্পিং কিংবা রানআউটের সুযোগ গুলোয় তা মলিন হয়ে যায় ফ্লাড লাইটের উজ্জ্বল আলোতেও। তবে মুশি থেমে থাকেন না! এখন পর্যন্ত জীবনে প্র‍্যাকটিস মিস করেননি একটির বেশি, প্রতিম্যাচেই বাড়তি প্রস্তুতি নিতে ম্যাচ ভেন্যুতে পৌঁছান বেশ কয়েকঘন্টা পূর্বেই। নিয়ম মেনে পরিপাটি হয়ে চলা মুশফিকেই তাই বাংলাদেশ আস্থা খুঁজে বেড়ায়।

মুশফিকের এই নিয়মতান্ত্রিকতার ফলাফল মিলেছেও ভুরিভুরি। ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্যারিয়ারে অর্জনে মুশি রঙিন তো হয়েছেন, পাশাপাশি নিজ দলের গায়ে শক্তিশালী তকমা লেপ্টে দিতেও তার ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। ক্রিকেট যে রেকর্ড গড়া আর ভাঙার খেলা তা মুশফিকের মত ক্রিকেটারদের জন্যেই। তারা রেকর্ড কেবল ভাঙেন-গড়েন নদীর দু-কূলের মত।

ads

বিশ্বক্রিকেটে চার নম্বর পজিশনে মুশফিক এক আদর্শ উদাহরণ। চাপের মুহূর্তে দলকে টেনে তোলা কিংবা স্লগ ওভারে নেমে বড় শট খেলা, সবদিকেই সমান পটু আমাদের এই লিটল ম্যান। মুশফিক একজন যোদ্ধাও বটে! এর প্রমাণ খুঁজলে তা মিলবে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ পুরোনো পাতায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তামিমের এক হাতের বীরত্ব গাঁথার দিনে পাঁজরের ভাঙা হাড় নিয়ে যিনি খেলেছিলেন ম্যাচ বাঁচানো ১৪৪ রানের ইনিংস।

কথিত আছে অভিজ্ঞদের দিকনির্দেশনা প্রয়োজন হয়না, তারা নিজেরাই খুঁজে নেন নিজেদের পথ, নিজেরাই দেন নিজেদের নির্দেশনা। মুশফিকেরও বোধহয় তাই কোচের প্রয়োজন হয়না। নিজেই নিজেকে শুধরে নিতে পারেন, সেভাবে হয়তো উইকেট কিপিংয়ে নিজের সকল ভুল শুধরে নিবেন একদিন। ঝাঁপিয়ে পড়ে লুফে নিবেন অধরা কোনো ক্যাচ, বিরাট দূরত্ব থেকেও রান আউট করে হতবাক করে দেবেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে।

চলতি বছরের শুরুতে লঙ্কানদের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১ শতক আর ১ অর্ধশতকে ২৩৭ রান ছিলো যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যেই ঈর্ষা জাগানিয়া। মুশফিকের উইকেট কিপিংয়ের সমালোচনা ঢাকা পড়ে যাক তার মূল তলোয়ার ব্যাট নিখুঁত চালানোর ক্ষমতায়। ক্যারিয়ার শেষে এই মুশফিক হয়তো চার নম্বর পজিশনের ওয়ান অব দ্য গ্রেটেস্ট আর স্লগ সুইপের দ্য গ্রেটেস্ট এভার হয়েই বিদায় নেবেন, এই প্রত্যাশা তো আমার ২০১৩-১৪ থেকেই।

বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখে, তা সত্যি হতে হলে মুশফিককে রাখতে হবে বাড়তি ভূমিকা। ব্যাট হাতে মুশি জ্বলে উঠলেই ভেদ হবে প্রতিপক্ষের দূর্ভেদ্য প্রাচীর, যারও প্রমাণ মিলেছে বহুবার। মুশফিকের স্লগ সুইপ, স্কয়ার কাট, প্যাডেল সুইপ আর ডাউন দ্যা গ্রাউন্ড হিটে মেতে থাকুক দেশের ক্রিকেট, আর এভাবেই আসুক ঘরে বিশ্বকাপের ট্রফি।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজে তার পার্ফরম্যান্স আইসিসি প্লেয়ার অব দ্যা মান্থের মনোনয়নে নিয়ে গেছে। তাই আমার ভোট টাও মিস হয়নি। কারণ আমি তার উপর আস্থা রাখি, তিনিও রাখেন অবশ্যই আমাদের উপর। তবে মুশফিককে যা কখনোই বলা হয়নি তা হলো — ‘ধন্যবাদ, লিটল ম্যান!’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link