More

Social Media

Light
Dark

মুছে যাক জরা

এবছর টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স কেমন? গত পাঁচ মাসে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে মুমিনুলদের পারফর্মেন্স শুধু ভালো বা খারাপ বলে রায় দেয়া যায় না। এই সময়ে খুব ভালো কিছু যেমন হয়েছে আবার ব্যর্থতারও দেখা মিলেছে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ ঠিক কেমন করছে এই প্রশ্নের চেয়েও জরুরি আসলে বাংলাদেশ ঠিক কী করতে চাইছে। পাঁচ দিনের ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনাটা ঠিক কী?

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বছরের শুরুতেই টেস্ট ম্যাচ জয়। টেস্ট চ্যাম্পিয়ন দলটাকে তাঁদের ঘরের মাঠে হারিয়ে দেয়াটাকে অনেকেই ফ্লুক বলে দাবি করেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমন একটা জয়ের পরেই আবার দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ভরাডুবি হয়েছে। সেখানে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা যেমন ছিল তেমনি ঘাটতি ছিল পরিকল্পনাতেও। তবে এই টেস্ট জয় সত্যিই অঘটন ছিল কিনা সেটা বুঝতে হলে আরেকটু বিস্তারিত আলাপ করা প্রয়োজন।

উপমহাদেশের যেকোন দলের জন্যই নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে গিয়ে টেস্ট ম্যাচ জেতা কঠিনতম কাজ। কিন্তু বাংলাদেশ সেই কঠিন কাজটা করতে পেরেছে, বলা ভালো মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বাংলাদেশ জয়টা আদায় করে নিয়েছিল। টানা পাঁচদিন প্রতিটা সেশন, প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। একাদশের প্রায় প্রতিটা ক্রিকেটার তাঁদের স্কিলের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছে।

ads

সবচেয়ে আশার ব্যাপার হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের পেস আক্রমণ। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের তাঁদের কন্ডিশনে বাংলাদেশের পেসাররা নাকানি চুবানি খায়িয়েছে। এই সময়টাতে বাংলাদেশের পেস আক্রমণে একটা বিপ্লব ঘটেছে। তাসকিন আহমেদ নতুন রূপে ফিরে এসেছেন, এবাদত হোসেন আস্থার প্রতিদান দিতে শুরু করেছেন, শরিফুল ইসলামের মত তরুণ সেনানীও যোগ হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্বের যেকোন ব্যাটিং লাইন আপকে চোখ রাঙানি দেয়ার মত পেস আক্রমণ আমাদের তৈরি হয়েছে।

ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই এই পেস আক্রমণের উপর দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ভরসা রাখতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশকে মূলত হারিয়ে দিয়েছিল মাঠে নামার আগেই। টেবিলের পরিকল্পনাতে। দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের জন্য তৈরি করলো স্পিনিং উইকেট। ফলে ম্যাচে স্পিনার সংকটে পড়লো বাংলাদেশ। এছাড়া টস জিতেও বোলিং নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও আছে নানা বিতর্ক।

তবে বাংলাদেশ শুধু এই পরিকল্পনায় হার মানলে খুব একটা চিন্তার কিছু ছিল না। সমস্যাটা হয় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ ধ্বসে পড়ায়। বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার একটা গড়পরতা স্পিন আক্রমণের সামনে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। অথচ এই মানের স্পিনারদের বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতে প্রতিদিনই খেলছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছিল বাংলাদেশ কী আসলেই স্পিনটা খেলতে পারে!

তবে এতকিছুর পরেও টেস্ট ক্রিকেটে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স আশা দেখাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল বটে তবে প্রথম টেস্টের চারদিন বাংলাদেশ দারুণ ক্রিকেটে খেলেছে। শুধু শেষ ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ম্যাচ হারতে হয়েছিল। এছাড়া পেসারদের পাশাপাশি ক্রিকেটার হিসেবে মিরাজ, লিটনরা অনেক উন্নতি করেছেন। সবমিলিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট যে বাংলাদেশের পক্ষে ভালো টেস্ট দল হওয়া সম্ভব শুধু নিজেদের দর্শনটা ঠিক করতে পারলে।

বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে বেশি ভুগছে ব্যাটসম্যানদের নিয়ে। মুমিনুল, মুশফিকরা টেস্ট ক্রিকেটে চাহিদা মেটাতে পারছেন না। তামিম ইকবালকেও টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছেনা। এছাড়া প্রায়ই ব্যাটিং লাইন আপ কলাপ্স করছে। এখন কাদের নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ সাজানো হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।

লিটন দাস গত একবছরে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান। এছাড়া মাহমুদুল হাসান জয় নিজেকে ওপেনার হিসেবে প্রমাণ করছেন। মিরাজ নিজের ব্যাটিংটাকে অনেক উন্নত করেছেন। ইয়াসির আলী রাব্বিও দেখাচ্ছেন বড় স্বপ্ন।

আবার টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরিকল্পনায় একটা বড় বাধা হয়ে উঠেছেন সাকিব আল হাসান। তিনি টেস্ট ক্রিকেট এখন খেলেনই না বলা চলে। তবে প্রতি টেস্টেরই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর খেলা, না খেলা নিয়ে আলোচনা হয়। এই যেমন আজ পর্যন্তও নিশ্চিত না আগামীকাল সাকিব খেলছেন কিনা। ফলে সাকিবের জায়গায় দীর্ঘমেয়াদী কাউকে দল পরিকল্পনা করতে পারছেনা। ইয়াসির আলী রাব্বি ভালো করলেও সাকিব ফিরলে তাঁকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়। এর রাব্বির মত তরুণ ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারেও বড় প্রভাব পড়ছে।

বাংলাদেশ কখন পেসার এবং কখন স্পিনারদের নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে সেটা বোঝাটাও খুব জরুরি। আবার মুমিনুল যেহেতু অধিনায়ক ফলে ব্যাট হাতে তাঁর ফর্মে ফেরাটাও এখন সময়ের দাবি। সবশেষে এবার বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটকে লিটন, তাসকিন, মিরাজ, জয়, শরিফুল, রাব্বিদের নেতৃত্ব দেয়ার সময়। তামিম, সাকিব, মুশফিকদের নিয়েও একটা স্থায়ী সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন। এখন আসলে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে মশাল তুলে দেয়া সময়। না হয়, মশালটা নিভেও যেতে পারে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link