More

Social Media

Light
Dark

লম্বা, সরু ও দুরন্ত

মাত্র আঠারো বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে এসেই ঝড় তুলেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্টিভ ওয়াহ তখনই ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের ক্রিকেটের মহাতারকা হবে এই ছেলে। শুরুটা তেমনই হয়েছিল। মাত্র ২১ বছর বয়সেই ঝুলিতে ছিল ১০০ টেস্ট উইকেট। এরপর সেই আকাশে কালো মেঘও এসেছিল। হারিয়ে যাওয়ার রাস্তাও ছিল অনেক। তবে তিনি যে মহাতারকা হতে এসেছেন। ভারতের জন্য হলেও টেস্ট ক্রিকেটে তাঁকে যে ফিরতেই হতো। দেশ কিংবা দেশের বাইরে টেস্টে ইশান্ত শর্মাকে ছাড়া ভারতের চলবে কী করে!

১৯৮৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর দিল্লীর এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম ইশান্ত শর্মার। মাত্র সতেরো বছর বয়সেই দিল্লীর হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। সেবারই ১৪ ম্যাচে ৬৮ উইকেট নিয়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ ডাক আসে ভারতের অনুর্ধব-১৯ দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরের জন্য। এরপর পাকিস্তান সফরেও যান। এই দুই সফরেই ইশান্ত জানান দিয়েছিলেন তিনি জাতীয় দলের কতটা কাছাকাছি।

এরপর আর বেশি সময় নেয়নি ভারত। ১৮ বছর বয়সী ইশান্তকেই ২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের জন্য ডাকা হয়। তবে ইশান্ত নিজেকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পরিচয় করিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১৮ বছর বয়সী এক পেসার রীতিমত ঝড় তুলেছিলেন। ছয় ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার এই পেসারকে খেলতেই হিমসিম খেয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ। অ্যাডিলেড টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১১৫ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। ওই ইনিংসে মোট ৪০ ওভার বল করেছিলেন ইশান্ত।

ads

এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ পারফর্ম করেন তিনি। ২০১১ সালে বিশ্বের পঞ্চম তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ১০০ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ওই বছর বক্সিং ডে টেস্টে রিকি পন্টিং কে ১৫২.২ গতিতে বল করেছিলেন। ফলে তখন ভারতের হয়ে নিয়মিত টেস্ট খেলছেন ইশান্ত। এছাড়া দেশের বাইরে টেস্ট হওয়া মানেই বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে থাকতেন এই পেসার। অতিরিক্র চাপ নেয়ার প্রভাবটাও পড়ে খুব দ্রুতই।

২০১২ সাল থেকে ইশান্ত তাঁর মূল অস্ত্র গতিটাই হারিয়ে ফেলেন। ফলে তাঁর বোলিং এর কার্যকারিতাও কমে যায়। ২০১২ সালে ভারতের হয়ে খেলা ৫ টেস্টে উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র ৭ টি। সে বছর তাঁর বোলিং গড় ছিল ৭৫.৫৭। ২০১৩ সালেও ৬ টেস্টে ১২ উইকেট নিয়েছেন ৪৮ গড়ে। ফলে সেই সময় হারিয়ে যাওয়ার সব রাস্তাই খোলা ছিল ইশান্তের সামনে। তবে কে জানতো ইশান্ত মনে মনে এঁকেছিলেন ভিন্ন ছক।

এর মাঝে ওয়ানডে ক্রিকেটেও ভারতের পঞ্চম দ্রুততম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন। ২০১৩ সালে ২২ টি ওয়ানডে খেলে নিয়েছিলেন মোট ৩৫ টি উইকেট। তবে এরপর থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটেও নিজের জৌলুষ হারান। ২০১৬ সালে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলা ইশান্ত ভারতের হয়ে মোট ৮০ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। সেখানে ৩০.৯৮ গড়ে তাঁর ঝুলিতে আছে ১১৫ উইকেট।

এই সবকিছুর পর ভারতের ক্রিকেট ১৪৫-১৫০ গতিতে বল করা ইশান্তকে তখন ভুলতে চলেছে। ১৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঝড় তোলা ইশান্ত প্রায় ৩০ ছুঁই ছুঁই বয়সে এসে আরেকবার আগুন ঝড়ালেন। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে নিয়ে গেলে ভারতের সর্বকালের সেরাদের কাতারে।

২০১৮ সালে ভারতের হয়ে মোট ১১ টি টেস্ট খেলেছেন। সেখানে ২১.৮০ গড়ে নিয়েছেন ৪১ উইকেট। পরের বছর ৬ টেস্টে ১৫.৫৬ গড়ে ইশান্ত তুলে নিয়েছিলেন ২৫ উইকেট। মনে হচ্ছিল আবার ১৮ বছর বয়সী সেই ইশান্তই ফিরে এসেছেন ভারতের হয়ে। ক্যারিয়ারের সেরা ছন্দে থাকা ইশান্ত ২০২০ সালে মাত্র একটি টেস্ট খেলেছেন করোনার কারণে। সেখানেও ১৫.২০ গড়ে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট।

কপিল দেবের পর ভারতের দ্বিতীয় পেসার হিসেবে খেলেছেন ১০০ টেস্ট। এই বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে টেস্টে পূরণ করেন ৩০০ উইকেট নেয়ার রেকর্ড। এই মুহুর্তে ১০৪ টেস্টে ইশান্তের ঝুলিতে আছে ৩১১ উইকেট। এর মধ্যে ১১ বার পাঁচ উইকেট ও ১ বার দশ উইকেট নেয়ার কীর্তিও গড়েছেন।

মজার বিষয় হচ্ছে ইশান্ত টেস্টে তাঁর ২০৭ টি উইকেটই নিয়েছেন দেশের বাইরে। দেশের বাইরে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন মোট ৯ বার এবং একমাত্র দশ উইকেটও নিয়েছিলেন দেশের বাইরেই। ইংল্যান্ডের মাটিতে এই পেসারের ঝুলিতে আছে ৫১ টি উইকেট। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজে মাত্র ১৮.৬০ গড়ে নিয়েছেন ৪১ উইকেট। অস্ট্রেলিয়াতেও নিয়েছেন ৩১ টি উইকেট।

ফলে দেশের বাইরে ভারতের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম ইশান্ত শর্মা। ওদিকে স্টিভ ওয়াহর ভবিষ্যৎ বানীকে সত্যি করে তিনি আজ নির্দ্বিধায় ভারতীয় ক্রিকেটের মহাতারকা। ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে এসেও যেভাবে টেস্টে পারফর্ম করে গিয়েছেন, সেটা সত্যিই অনন্য। তিনি ক্রিকেটে ফিরে আসার কাব্যেরও এক মহানায়ক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link