More

Social Media

Light
Dark

স্ট্রাইক রোটেশন, বিশ্বকাপের ‘ট্রাম্প কার্ড’

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মেরে খেলার, অতি অবশ্যই এখানে হার্ড হিটারদের প্রাইয়োরিটি থাকবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আমার ধারণা ‘শুধু’ পাওয়ার হিটিং কাজে আসবে না। খেলাটা ১২০ বলের এখানে আপনি প্রতি ছয় বলে একটা বাউন্ডারি হিসেব করে বাকি বলে অন্তত এক করে ধরলে অনেক হিসেব সহজ হয়ে যায়।

ভানুকা রাজাপাকশা প্রতি পাঁচ বলে একটা বাউন্ডারি মেরেছেল এশিয়া কাপে, এমনকি ফাইনালেও, কিন্তু বাকি বলগুলোতে এক বা দুই নেয়ার কথা মাথায় রেখেছেন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আপনি প্রচুর গ্যাপ পাবেন, ১-২ রান আপনি সুযোগসন্ধানী হলেই নিয়ে নিতে পারবেন। ১২০ বলের খেলা- আপনি ৩০টা ডট বল (স্বাভাবিক) দিয়েও ভালো অবস্থানে যেতে পারেন, বাকি ৯০ বলে যদি অন্তত ১৫ টা বাউন্ডারি থাকে, অন্তত ১০ চার- ৪০, ৫ টা ছয় থাকে- ৩০!

এই ১৫ বলে ৭০ রানের বাইরেও আপনার হাতে ৭৫ বল থাকবে। এটারে একদম বিপদের মুহূর্তে ন্যুনতম ক্যালকুলেশন ধরে নিতে হবে, কারণ একটা ম্যাচে মাত্র ১৫টা বাউন্ডারি আসলে ন্যুনতম, অবশ্যই এর বেশি হতে হবে। ওই ৭৫ বলে আরও ১০০ রান খুবই সম্ভব কারণ আপনি আগেই ৩০ বল ডটের হিসাব করে ফেলেছেন! যে কারণে আমার বিশ্বাস ভারত খুব বাজেভাবে রাভিন্দ্রা জাদেজাকে মিস করবে, শুধু রান নেয়ার ক্ষেত্রে না রান ঠেকানোর ক্ষেত্রেও সার্কেলে জাদেজা সেরাদের একজন।

ads

প্লাস তার আউটফিল্ড ক্যাচিং, ক্রিকেটে এমন সব ক্যাচ গোটা দলের স্পিরিট নিয়ে আসতে পারে। ২০১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বেন স্টোকসের ক্যাচ। ২০০৯ সালে টি টোয়েন্টি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শাহীদ আফ্রিদির উলটা দৌড়ে ক্যাচ ও আইকনিক সেলিব্রেশন।

অস্ট্রেলিয়ায় ফিটনেসে সেরা দল ও চতুর দলগুলো ভালো করবে, যারা স্নিক ইন করতে পারে, পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় খুব যে বেশি রান হবে তা কিন্তু না, বিগ ব্যাশের ইতিহাসে দুই দল মিলে এক ম্যাচে চারশো বা তার বেশি রান করেছে সাত আট বার।

আবার রান একেবারে কমও হবে না। অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে কম রান হয় মেলবোর্নে, ওখানে এভারেজ ফার্স্ট ইনিংস টোটাল ১৫৩। সবচেয়ে বেশি হয় গ্যাবায় ওখানে ১৭০।
যেখানে গড় ১৫০ এর বেশি সেখানে ১৮০ স্বাভাবিক স্কোর, প্রথমে করার জন্যও চেজ করার জন্যও।

এক্ষেত্রে যেসব দল স্কোর দেখে ভড়কে না গিয়ে খেলা চালিয়ে নেবে তারাই সিকান্দার! আরেকটা বড় ব্যাপার হবে টসে জিতে নিজের শক্তিমত্তা অনুযায়ী এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাট বা বল নেয়া!

আরেক দল নিয়েছে তাই নিলাম, ব্যাপারটা কখনোই তা না। এখানে মানে অস্ট্রেলিয়ার নানা মাঠে বিগ ব্যাশ লিগে আগে ব্যাট করে ৪৭% ম্যাচ জিতেছে, আর রান তাড়া করে ৫৩%!
তাই কোনও সিদ্ধান্তেও আসতে পারবেন না।

তবে চারটা বড় ফ্যাক্টর কাজ করবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে, যেখানে আমি বাংলাদেশের শক্তির জায়গা অনুযায়ী যদি দেখি তাইলে কাজে লাগানো যেতে পারে, মিরাজ-আফিফের মতো দ্রুত রান নিতে পারেন এমন ব্যাটসম্যানরা উপযোগী ভূমিকা পালন করতে পারবেন। কোনও ঝুঁকি না নিয়েও এরা ১৫০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করতে পারবেন, যদি গ্যাপ সম্পর্কে সচেতন থাকেন।

দ্বিতীয় আর তৃতীয় জায়গা বাংলাদেশের নাই, পেস বোলিং অলরাউন্ডার (যার নাম বলবেন তার খেলা দেখসি, আর বইলেন না) এবং লেগস্পিনার। চতুর্থত এখানে তাসকিন আহমেদের ভালো প্রসপেক্ট থাকবে- যদি যদি তিনি শুধু জোরের ওপর বল না করে, অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ওয়াইড ইয়র্কার, স্লো বাউন্সার- এগুলাতে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন তাইলেই একমাত্র তার প্রথম দুই ওভারের সাথে শেষের দুই ওভার তাল মেলাতে পারবে।

খুব আর্লি টু জাজ- আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড-সাউথ আফ্রিকার মধ্যে কোনও দল কাপ নেবে!

ইংল্যান্ডের বোলিংটা দুর্বল- এখানে পাকিস্তানও বসতে পারে, পাকিস্তানের জন্য দুবাইয়ের মাটিতে যেটা ছিল দুর্বলতা, সেটা অস্ট্রেলিয়ায় শক্তির জায়গা হতে পারে- যাই হোক, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলায় আমি কজন সাবেক ক্রিকেটারকে খুবই মিস করবো। দক্ষিণ  আফ্রিকার অ্যালবি মরকেল ও ইয়োহান বোথা, ইংল্যান্ডের কেভিন পিটারসেন ও ফ্লিনটফ,
অস্ট্রেলিয়ার ক্যামেরন হোয়াইট-কে বিশেষ করে মিস করি আমি, অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা যিনি জাতীয় দলে তেমন খেলতেই পারেননি, সেই ভিক্টোরিয়া বুশরেঞ্জার্স যুগে তাকে ফলো করতাম যদিও আমি নিউ সাউথ ওয়েলস ফ্যান ছিলাম!

পাকিস্তানের আব্দুল রাজ্জাককে মিস করি, শ্রীলঙ্কার মালিঙ্গা, নিউজিল্যান্ডের ঠিক আগের যুগের পেস বোলিং অলরাউন্ডারদের যে ঘরানা ছিল সেটা- ওরাম, ফ্রাঙ্কলিন, স্টাইরিস, কেয়ার্নস!

মিস করবো, মোহাম্মদ কাইফ, জন্টি রোডসের মতো ক্রিকেটারদের যারা নিজের সামর্থ্যকে পরিবর্তন করে বিশ্বের জন্য স্ট্যান্ডার্ড সেট করে দিয়ে গেছেন!
তবে সবচেয়ে বেশি মিস করবো এমএস ধোনিকে! অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ধোনি ফিল্ডিং সাজাচ্ছেন একটা চোখের শান্তি ছিল, অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য, হাত সামনে নিয়ে নির্লিপ্ত চোখে ধোনি ট্রুপ সাজাতেন। রোহিত শর্মা এবারে খাবি খাবেন ফিল্ডিং সাজাইতে, এটা চিন্নাস্বামী নয় – এটা তার মাথায় রাখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link