More

Social Media

Light
Dark

আকাশের সমান সত্য

একটা তাণ্ডব! স্রেফ এতটুকুই। সুরিয়াকুমারের বিবরণে এর থেকে বেশিকিছু বলাটা সম্ভব নয়। তাঁকে পরিপূর্ণভাবে বিশ্লেষণ করা যাবে এমন কোন শব্দও সম্ভবত নেই। কি সাবলীল! প্রতিদিন যেমন সূর্য পূব আকাশে উঁকি দিয়ে ধীরে ধীরে প্রখর হয়। ঠিক তেমনি যেন সুরিয়া। নামটাও অবশ্য সূর্য্যের হিন্দি প্রতিশব্দ। তিনি সূর্য্যের মতই ধ্রুব, তিনি সূর্য্যের মতই প্রখর। তিনি সূর্য্যের মতই এক সুবিশাল অগ্নিকুণ্ড।

সুরিয়াকুমার যাদব, বর্তমান টি-টোয়েন্টির জামানায় তাঁর মত একজন ব্যাটার যেন আশীর্বাদ। না শুরু ভারত দলের জন্যে নয়। তিনি আশীর্বাদ গোটা ক্রিকেটের জন্যে। অবলীলায় অফ স্ট্যাম্পের বাইরের একটা বল স্কয়ার অব উইকেট অঞ্চল দিয়ে সীমানা ছাড়া করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। সুরিয়া সেটা পারেন। তাঁর ওই যে কব্জি, সেটা তিনি নিজের মত করেই চালনা করতে পারেন। আর তাতে যেন তাঁর ব্যাট থেকে মণি-মুক্তা ঝরে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যায় অনেকক্ষণ।

ঠিক কি করে এমন বিধ্বংসী এক রুপে পরিণত হলেন সুরিয়াকুমার যাদব? এমন প্রশ্নের উত্তপ্তি হয়নি কারও মনে সে কথা মেনে নেওয়া দুষ্কর। সবাই হয়ত অন্তত একদফা ভেবেছেন, ‘এই ছেলে কি খায়?’ সবকিছুর উত্তর আসলে একটাই। আর সেটা পরিশ্রম। ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠি’ ছেলেবেলা থেকে এই বুলি আওড়ায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে সুরিয়াকুমাররা বুলি আওড়ানোতেই সীমাবদ্ধ থাকেন না। তাঁরা পরিশ্রম করেন। প্রচণ্ড পরিশ্রম।

ads

যে পরিশ্রম তাদেরকে সময়ের সেরা বানায়। যে পরিশ্রম তাদেরকে জায়গা করে দেয় মানুষের অন্তরে। যে পরিশ্রমে অর্থ আসে, যশ আসে। আরও আসে আত্মতৃপ্তি। কিন্তু নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ক্ষুধার একটা তাড়নায় নিশ্চয়ই কখনো ওই আত্মতৃপ্তির জায়গাটা গড়তে দেয় না। সে কারণেই সুরিয়াকুমাররা নিজেদের প্রস্তুত করেন প্রতিনিয়ত। সমীহ আদায় করেন নিজ দলের কোচ থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের। তাইতো কিংবদন্তি ব্যাটার রাহুল দ্রাবিড় বলে ওঠেন, ‘অবিশ্বাস্য’।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৫ বলে ৬১ রানের দূর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন সুরিয়া। সে ইনিংসের শেষ ভাগে তিনি অকল্পনীয় দুইটি শট খেলেছেন। স্কয়ার অব দ্য উইকেটে আর উইকেট কিপারের মাথার উপর দিয়ে। তবে তা সবই পেসারের বিপক্ষে। সে ইনিংস নিয়ে রাহুল দ্রাবিড় বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য! ঠিক এ কারণেই সে বর্তমানের বিশ্বসেরা টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়। এমন দুরন্ত স্ট্রাইকরেটের সাথে ধারাবাহিকভাবে ভাল করে যাওয়াটা মোটেও সহজ কাজ নয়। কিন্তু সে করে যাচ্ছে। সে দুর্দান্ত ভাবে খেলে যাচ্ছে। তাঁর নিজের প্রক্রিয়া ও পরিকল্পনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে।’

তবে কয়েক বছর আগেও তিনি এমন ধারাবাহিক কিংবা বিধ্বংসী ছিলেন না। তিনি ছিলেন ভারতের আর দশটা ক্রিকেট খেলুড়ে একজন খেলোয়াড়। তবে তিনি নিজেকে বদলে ফেলেছে পুরো ৩৬০ ডিগ্রি। ঠিক যেমন করে তিনি খেলে থাকেন বাইশ গজে। মাঠের কোন একটি অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারি হাকাবেন না তিনি তা যেন প্রায় অসম্ভব। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটি হয়েছিল মেলবর্নে। সেখানের বাউন্ডারিগুলো বেশ বড়। তবুও তা সুরিয়াকুমারকে থামাতে পারেনি তাঁর তাণ্ডব থেকে। তিনি চার বার বল মাঠ ছাড়া করেছেন।

এই যে মেলবর্নের বড় বাউন্ডারিও বাঁধা হতে পারেনা। এটার পেছনেও রয়েছে তাঁর পরিশ্রমের অবদান। রাহুল দ্রাবিড় তাঁর সেই পরিশ্রমের প্রশংসাও করেছেন বহুবার। সুরিয়াকুমার নিজের ফিটনেসের উপর কাজ করেছেন প্রচুর। নেট অনুশীলনে ঘাম ঝড়িয়েছেন। নিজেকে পোক্ত করেছেন। হাতের সাথে চোখের সমন্বয়টা করেছেন শতভাগ নির্ভুল। তাইতো তিনি এবি ডি ভিলিয়ার্সকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। তাঁর সতীর্থরাও তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুরিয়াকুমার ভারতের এক্স-ফ্যাক্টর হিসেবেই প্রমাণিত হয়েছেন। নিশ্চয়ই গোটা ভারত দল ফর্মের তুঙ্গে থাকা সুরিয়ার ব্যাটে ভর করে দেড় দশকের শিরোপা খরা কাটাতে চাইবে। নিজের সবটুকু নিশ্চয়ই উজার করে দেবেন ভারতের নিজস্ব ‘স্কাই’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link