More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

ভুবনমোহিনী বিজয়ের অতিমানবীয় মঞ্চায়ন

বিদেশের কন্ডিশন। তাও আবার অস্ট্রেলিয়া। সেটাও আগের বারের মত খর্বশক্তির নয়, রীতিমত প্রতাপশালী এক অজি বাহিনী। এই দলের যেমন ব্যাটসম্যান, তেমন দারুণ সব দানবীয় বোলার – সময়ের অন্যতম সেরা।

সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রথম ম্যাচে ভারত অল আউট হল মাত্র ৩৬ রানে। একাদশ নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন। অ্যাডিলেডের সেই বিপর্যয়ের পরই সন্তান সম্ভবা স্ত্রী আনুশকা শর্মার পাশে থাকতে বিমানে উঠলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। দল এমনিতেই নাজেহাল, এই সময়ে জাহাজ ছাড়লেন নাবিক – এই দলের ওপর তাই ভরসা করতে পারে – তেমন কেউ তখন অবশিষ্ট ছিল না।

তবে, ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে রীতিমত ‘দেখিয়ে দেওয়া’র লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন মেলবোর্নে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ব্যাটে-বলে অনন্য এবং অন্য এক ভারতকে দেখা গেল। ভারত জিতলো আট উইকেটের বিরাট ব্যবধানে। ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার দু:স্বপ্ন তখন মরে ভুত।

ads

ভারত তখন নিজেদের হারানো ‘জোশ’ ফিরে পেয়েছে। না, এর পরেও কিছু যদি-কিন্তু আছে।

সিডনিতেও দু:স্বপ্ন ডানা মেলার অপেক্ষায় ছিল। এক গাদা ইনজুরি এসে ভর করেছিল দলের মধ্যে। চতুর্থ ইনিংসে এক গাদা ব্যাটসম্যান পেইনকিলার খেয়ে – ইনজেকশন নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু, কোনো কিছুই তাঁদের দমাতে পারেনি।

চেতেশ্বর পূজারা, ঋষভ পান্ত, রবিচন্দ্রন অশ্বিন কিংবা হনুমা বিহারিদের অতিমানবীয় নির্ভরতা হয়ে ওঠার সুবাদে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড থেকে ড্র নিয়ে ফেরে ভারত। শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, প্রতিপক্ষ ছিল গ্যালারির বিদ্রুপও। দর্শকরা তো মোহাম্মদ সিরাজকে আপত্তিকর বর্ণবাদী মন্তব্য করতেও ছাড়েনি।

ভারতীয় দলটা সব মুখ বুজে সহ্য করে, পাল্টা আক্রমণ করে তাঁর জবাবও দিয়েছে। আর সেই জবাবের চূড়ান্ত মঞ্চায়ন হল ব্রিসবেনে। গ্যাবায় কেবল ভারত কেন, কোনো সফরকারী দলেরই আহামরি কোনো ইতিবাচক সাফল্য ছিল না।

গ্যাবা হল অস্ট্রেলিয়ার দুর্গ। ঐতিহাসিক ভাবেই এই মাঠে তাঁরা অজেয়। সেই অজেয় দলের বিপক্ষে এবার ভারত আরো অপরিচিত এক দল নিয়ে মাঠে নামলো। কেবল ইনজুরি ও অনান্য কারণে যারা দলের বাইরে আছেন – তাঁদের নিয়েও একটা টেস্ট একাদশ করা যায়। বাধ্য হয়ে দু’জনের অভিষেক করানো হল।

সেই সীমিত সামর্থ্য নিয়ে ভারত দুই ইনিংসেই অল আউট করে অস্ট্রেলিয়াকে। ৩২ বছরের ইতিহাসে যে ঘটনা ঘটেছে মাত্র তিনবার। এটুকু হলেই আজিঙ্কা রাহানের এই দলটাকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো যেত।

কিন্তু, সিরিজের শেষ দিন যা হল সেটা জানার জন্য প্রস্তুত ছিল না গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। চতুর্থ ইনিংসে ৩২৮ রানের প্রায় অসম্ভব এক লক্ষ্য, গ্যাবার উইকেট, বোলিংয়ে এক ঝাঁক অজি দানব। বিরাট আশাবাদী কেউও এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখে না।

কিন্তু, দেখেতে পেরেছিল ভারতের এক ঝাঁক তরুণ। পঞ্চম দিন সকালে রোহিত শর্মা মাত্র সাত রান করে আউট হয়ে গেলেও ছিলেন ‘ভবিষ্যতের সম্ভাবনা’ খ্যাত শুভমান গিল ও ‘একালের রাহুল দ্রাবিড়’ চেতেশ্বর পূজারা। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তাঁরা যোগ করলেন ১১৪ রান।

আত্মবিশ্বাসের সুবাস ছড়ানো শুরু করলো তখন থেকেই। এরপর অধিনায়ক রাহানে ২২ বলে ২৪ রান করে বার্তাটা দিয়ে দিলেন দলের মধ্যে। হিসাবটা পরিস্কার – জয়ের জন্যই খেলবে ভারত।

বাকিটা সময় ভারত ভাসল ঋষভ পান্তের ভেলায়। আগের ম্যাচে চেষ্টা করেছিলেন সিডনিতে। কিন্তু, তার ৯৭ রানের ইনিংসটা জয়ের সুবাস ছড়াতে পারেনি। তবে, এবার ৮৯ রানের ইনিংসটা আগের মত আক্রমণাত্মক না হলেও আগের চেয়ে বেশি কার্যকর হল। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে তিনি অনেকগুলো সুযোগ পেয়েছেন, অনেকবার মিস টাইমিং হয়েছে, বলের লাইন ধরতে পারেননি অনেকবারই, কিন্তু তিনি যে সাহস দেখিয়েছেন – তা পঞ্চম দিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে অনন্য ব্যাপার।

পান্তের সাথে যোগ হন এই টেস্টেই অভিষিক্ত ওয়াশিংটন সুন্দর। তার এক ছক্কা আর দুই চারে করা ২২ রানের ইনিংসটাই মোটামুটি নিশ্চিত করে দেয় ভারতের বিজয়। বাকি সময়টা ছিল কেবলই চাহিদামাফিক ব্যাট করে যাওয়া।

পান্ত সেটা করতে পেরেছেন। ‘টেস্ট ক্রিকেটে রোমাঞ্চ নেই’ – বস্তাপচা এই কথার মুখে কুলুপ এটে দিয়েছেন। শেষ বলটা লং অফের বাউন্ডারি পার হওয়ার পর ভারত যে বিশ্বজয়ের উল্লাস করলো  সেটা কেবল একটা কথাই বললো – আমরা রূপকথা লিখতে জানি, আমরাও টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য্য দেখাতে জানি।

ইতিহাসের পাতায় এই টেস্ট ম্যাচ, এই টেস্ট সিরিজ লেখা হয়ে থাকবে। বলা হবে – এক সময় একটা আনকোড়া দল নেমেছিল গ্যাবায়, ছিলেন না নিয়মিত অধিনায়ক, তাঁদের অস্ত্রশালায় ছিল না তেমন কোনো কার্যকর অস্ত্র, তাঁদের ওপর ছিল না কোনো প্রত্যাশা, কিন্তু তাঁদের ছিল লড়াই করার মানসিকতা, আর সেই মানসিকতা দিয়ে তাঁরা জাদুর সুতো বুনেছিল, আর তাতেই ভেঙেছিল অজি দুর্গ, সেই দুর্গ যেখানে টানা ৩১ টা টেস্ট অপরাজিত ছিল অস্ট্রেলিয়া। কেবল বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিই নয়, এই দুর্গ এখন ভারতের, এই দলটাকে ইতিহাসে সোনার হরফে ঠাঁই দিতে হবে!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link