More

Social Media

Light
Dark

নতুন বাংলাদেশের ক্রিকেট প্যাকেজ

চাঁদপুর মানেই ইলিশ।

তিন নদীর মোহনা, পদ্মা-মেঘনার চর, ইলিশের রমরমা; অনেক কারণেই চাঁদপুর জেলার খ্যাতি আছে। কিন্তু ক্রিকেটের জন্য আগে কখনো খুব সুনাম শোনা যায়নি এই জেলার। কাগজে কলমে এই জেলা থেকে একজন ক্রিকেটার জাতীয় দলে এসেছেন-সামসুর রহমান শুভ। কিন্তু শুভ আসলে কুমিল্লা ও ঢাকায় বড় হওয়া মানুষ।

ফলে চাঁদপুর এখনও নিজের বুকে বেড়ে ওঠা একজন জাতীয় দলের তারকা দেখার অপেক্ষায় আছে। সেই অপেক্ষাটা কী এবার শেষ হবে?

ads

তেমন একটা সম্ভাবনা তৈরী করেছেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি।

 

হ্যাঁ, বিশ্বকাপজয়ী যুব ক্রিকেটার শামীম পাটোয়ারি। অনেকের হিসাবেই বর্তমান বাংলাদেশের সেরা ফিল্ডার শামীম পাটোয়ারি। অত্যন্ত কার্যকর সীমিত ওভারের বোলার শামীম পাটোয়ারি। এবং গত কয়েকটি ম্যাচে প্রমান হয়ে গেলো, দেশের এখন সবচেয়ে প্রয়োজনের লোয়ার অর্ডারের মারকুটে ব্যাটসম্যান শামীম পাটোয়ারি।

বাংলাদেশের ক্রিকেট সেই আদিকাল থেকেই ৬-৭ নম্বরে দারুন একজন ফিনিশার খোজ করে আসছে। একসময় সাকিব আল হাসান নিজে কিছুদিন এই দায়িত্ব পালন করেছেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কখনো কখনো এখানে ঝলক দেখিয়েছেন। নাসির হোসেন কয়েকটা ম্যাচে চমক দেখিয়ে ‘ফিনিশার’ তকমাও গায়ে লাগিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই পজিশনে একজন মহেন্দ্র সিং ধোনি বা মাইকেল বেভান কখনোই খুজে পায়নি বাংলাদেশ। খোজটা চলছে।

আর এই খোজাখুজির রাডারে এখন শামীম পাটোয়ারির নাম।

যুব বিশ্বকাপে এই ভূমিকায় খুব বড় কিছু করেছেন, তা বলা যাবে না। এমনকি করোনা কালে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতেও বড় কিছু করতে পারেননি। কিন্তু সেই অনুর্ধ্ব-১৪ থেকে শামীমকে দেখার সুবাদে জানা ছিলো যে, তিনি মিডল থেকে লোয়ার মিডল অর্ডারে ঝড় তুলতে পারেন। অবশেষে সেই ঝড়টা তুললেন আয়ারল্যান্ড এমার্জিং দলের বিপক্ষে।

গত তিন ম্যাচে তার স্কোর-২৬ বলে অপরাজিত ২২, ৩৯ বলে অপরাজিত ৫৩ এবং  ২৫ বলে অপরাজিত ৪৪! এর মধ্যে শেষ দুই ম্যাচে দলকে জিতিয়ে তবে মাঠ ছেড়েছেন।

শামীম এতে রাতারাতি ‘ফিনিশার’ হয়ে গেছেন, তা নয়। তবে এই ভূমিকাটা তিনি নিজে খুব উপভোগ করছেন। বলছিলেন, ‘আমি আগে তো মূলত ৫ নম্বরে ব্যাট করতাম। অনুর্ধ্ব-১৯ থেকে আমাকে এই রোলটা দেওয়া হয়েছে। শুরুতে মানাতে একটু কষ্ট হচ্ছিলো। তবে এখন খুব উপভোগ করছি। দল জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার অনুভূতিটাই আলাদা।’

এই ছয় নম্বরে ব্যাট করাটা খুব কঠিন একটা কাজ। ক্রিকেট ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে খুব সেন্সিবেল না হলে এখানে সফল হওয়াটা সম্ভব না। কারণ, এখানে আপনার কাছে একেক ম্যাচে একেক রকম ব্যাটিংয়ের চাহিদা থাকবে। কোনোদিন আপনার হাতে মাত্র ৪-৫ ওভার সময় থাকবে; দ্রুত রানের ঝড় তুলতে হবে। আবার কোনোদিন ৩০ ওভারের মধ্যে ৫ উইকেট পড়ে ‍যাবে; আপনাকে ইনিংস তৈরী করে পরে রানের গতি বাড়াতে হবে।

পজিশনের এই চাহিদাটা খুব ভালো বোঝেন শামীম। তিনি বলছিলেন, ‘আমি এখন এভাবেই নিজেকে তৈরী করছি। আমি জানি, এখানে আমাকে প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন সিচুয়েশনে ব্যাট করতে হবে। রোজ এরকম দ্রুত রান তুললেই চলবে না। আমি আসলে ইনিংস তৈরীও করতে পারি; আস্তে ধীরে খেলতে পারি। ফলে আমি মনে করি, এই রোলটা আমার জন্য ঠিক আছে। আমি সেভাবেই তৈরী হচ্ছি।’

সেভাবে শামীম নিজেকে তৈরী করতে পারলে সেটা বাংলাদেশের জন্যই সুখবর হবে।

শামীমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চাঁদপুরে। বড় চাচাতো ভাইদের সাথে টেপ টেনিসে হাত পাকিয়ে ক্রিকেট শুরু। ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক পাঠ চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। আর সেখান থেকেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে উত্থান এই অলরাউন্ডারের।

তাহলে শামীম সম্পর্কে আমাদের বলা শেষ?

আজ্ঞে না, শামীম সম্পর্কে আসল কথাটাই বলা হয়নি-ফিল্ডিং।

অনেকের বিচারেই এই সময়ে বাংলাদেশের সেরা ফিল্ডারটির নাম শামীম পাটোয়ারি। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে তার প্রদর্শনীও দেখা গেছে। যে ক্ষিপ্রতা, গতি ও দ্রুত জাজমেন্ট তিনি সার্কেলের ভিতর দেখিয়েছেন, তা অবিশ্বাস্য। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে এখন তার ধারে কাছে কাউকে পাওয়া মুশকিল।

নিজের ভালো ফিল্ডিং নিয়ে কথা বলতে একটু লজ্জা পেয়ে যান শামীম। তারপরও রহস্যটা বলতে গিয়ে বলছিলেন, ‘আমি ফিল্ডিংটা খুব এনজয় করি। আপনি ফিল্ডিং যত বেশি এনজয় করবেন, ততো ভালো করতে পারবেন। আমি মাঠে প্রতিটা বল আমার কাছে আসুক, এই চাই। প্রতিটা বলে নিজেকে তৈরি রাখি।’

ব্যাটসম্যান, ফিল্ডারের পাশাপাশি শামীমের আরেকটি গুন আছে-অফস্পিন। খুব উল্লেখযোগ্য বোলার না হলেও সীমিত ওভারের জন্য দারুন কার্যকর বোলার তিনি।

 

তাহলে আমরা কী পেলাম?

৬-৭ নম্বরের জন্য তৈরী একজন ব্যাটসম্যান, সেরা একজন ফিল্ডার এবং কার্যকর স্পিনার। তাহলে এখন নিশ্চয়ই বলতে পারি যে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য একটি তৈরী প্যাকেজের নাম শামীম হোসেন পাটোয়ারি।

সবই তৈরী আছে। মঞ্চটাও তৈরী। যদিও শামীম চান, আস্তে-ধীরে নিজেকে আরেকটু পোক্ত করে জাতীয় দলের স্বপ্নটা বাস্তব করতে। কিন্তু এখন তার মূল কাজ হবে নিশ্চয়ই নিজেকে পরের ধাপে প্রমাণ ও ধারাবাহিক করে ফেলা।

তাহলেই আমরা বলবো, বাংলাদেশের রেডি প্যাকেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link