More

Social Media

Light
Dark

অ্যালান ডেভিডসন, প্রতিশ্রুতির আলোকরশ্মি

স্যার ডন ব্র্যাডম্যান যাচ্ছেন তাঁর দল নিয়ে ইংল্যান্ডে। জাহাজে উঠবার আগে কয়েক খানা ছবি তুলে নিলেন। সে ছবি ছড়িয়ে যায়। এক বৃদ্ধ তাঁর নাতিকে দেখান ছবি। রোমাঞ্চিত ক্ষুদে নাতি বলে ওঠেন একদিন তিনি ক্রিকেট খেলবেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। দাদুকে দেওয়া সে কথা রেখেছিলেন অ্যালান ডেভিডসন।

এটা বিশ্বাস করা হয় পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম ও অ্যালান ডেভিডসন হচ্ছেন ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা বাঁ-হাতি পেসার। তবে সে যোগ্য হতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ডেভিডসনকে। ১৪ জুন ১৯২৯ সালে জন্মেছিলেন ডেভিডসন। অতি সাধারণ এক পরিবারে জন্ম তাঁর।

জঙ্গলে কাঠ কাটতেন তিনি পাঁচ বছর বয়স থেকে। ১৪ হতে হতে কাঁধে গমের বোঝা নেওয়া শিখে গিয়েছিলেন। সেই সাথে শিখে গিয়েছিলেন যে কোন কিছুই খুব সহজে পাওয়া যায় না। এই বিষয়টা বেশ ভালভাবেই নিজের মস্তিষ্কে গেঁথে নিয়েছিলেন ডেভিডসন। আর দাদাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথাও একেবারে ঝেড়ে ফেলেননি তিনি তাঁর মাথা থেকে।

ads

তিনি স্বপ্নের পথে ছুটতে শুরু করেন। স্বপ্নটা ছুঁয়েও দেখেন একটা লম্বা সময় বাদে। এর মাঝে তিনি তাঁর খেলাতে এনেছিলেন আমুল পরিবর্তন। প্রথমত তিনি ছিলেন একজন বাঁ-হাতি অফ স্পিনার। সেখান থেকে নিজের বোলিং অস্ত্র বদলে ফেলেন। বনে যান পুরোদস্তুর পেস বোলার। ব্যাটিংকে সময় দিতেই তাঁর স্পিনার হওয়ার বাসনা। তবে পেসার বনে যাওয়ার ফলে তাঁর ব্যাটিংটা একেবারেই উধাও হয়ে গিয়েছিল তা নয়।

১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন। সে ট্যুরে অবশ্য খেলা হত না তাঁর। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে বাড়ি ফেরত পাঠানোর দ্বারপ্রান্তে ছিলেন তিনি। তবে তিনি বেঁচে যান। আর সেবারই ব্যাটে বলে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখেন। সে ট্যুরে পাঁচ ম্যাচে তাঁর উইকেট সংখ্যা ছিল ২৫টি অন্যদিকে, ব্যাট হাতেও দেখা পেয়েছিলেন চার খানা সেঞ্চুরির।

ব্যাটিং বোলিংয়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন দুর্দান্ত একজন ফিল্ডার। স্বল্প দূরত্বে অসাধারণ সব ক্যাচ ধরার কারণে তিনি ‘দ্য ক্ল’ হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। অলরাউন্ড পারফরমেন্স করা ডেভিডসনের বোলিং সত্ত্বাটাই আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে আলোচিত কিংবা আলোকিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

ক্যারিয়ারে ৪৪ খানা ম্যাচ খেলেছেন তিনি। আর উইকেট নিয়েছেন ১৮৬টি। অসধারণ পরিসংখ্যান। তবে আরেকটা দিক একটু তুলে না ধরলেই নয়। তাঁর ইকোনমি রেট। মাত্র ১.৯৭ ইকোনমি রেটে তিনি বল করে গেছেন পুরোটা ক্যারিয়ার জুড়ে। তবে ইনজুরির জনিত নানা কারণে তাঁর ক্যারিয়ারটা আরেকটু লম্বা হয়নি বলেই মত অনেকের।

আবার বেশ কিছু ক্রিকেট বোদ্ধাদের মত প্রায়শই তিনি মিথ্যা বলতেন ইনজুরি নিয়ে। এভাবেই তিনি বহু সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন। নতুবা ব্যাট হাতে ১৩২৪ রানে থমকে যেত না তাঁর ক্যারিয়ার। পাঁচটা অর্ধ-শতক বেড়ে হতে পারত দশখানা। আর সেঞ্চুরির ঘরে একখানা দাগ পড়লেও পড়তে পারত।

তবে সে যাই হোক। তিনি ছিলেন দুরন্ত। উইকেট শিকারে দারুণ পটু। তবে একদফা তাঁর সকল অবদান যেন হারিয়ে যায় ভারতের টেস্ট জয়ে। ভারত তাদের প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিল এই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে। ১৯৫৯ সালে কানপুরে হওয়া সে টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। তাও আবার মাত্র ৩১ রান দিয়ে। আর দ্বিতীয় ইনিংসে তো উইকেটের সংখ্যা বাড়িয়ে নেন।

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংটা সেদিন করেছিলেন। ৭ উইকেট নিয়েছিলেন ৯৩ রান দিয়ে। তবে ডেভিডসনের এমন বিধ্বংসী পারফরমেন্স ঢাকা পড়ে যায় ভারতের প্রথম টেস্ট জয়ের উল্লাসে। ইনজুরি নিয়ে বিতর্ক নিয়েই তিনি ১৯৬২ সালে খেলে ফেলেন নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে শেষবারের মত সাদা পোশাক আর ‘ব্যাগি গ্রিন’ ক্যাপ পড়ে মাঠে নেমেছিলেন অ্যালান ডেভিডসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link