More

Social Media

Light
Dark

কিউই বিপ্লবের নেতা

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রসঙ্গ আসলেই স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নাম আসতে বাধ্য। কেন বিখ্যাত তিনি? অবশ্যই, তাঁর অসাধারণ টেকনিকের জন্য তিনি বেশ পরিচিত। অফ দ্য প্যাডে তাঁর ফ্লিক, কভার ড্রাইভ, স্ট্রেইট ড্রাইভ কিংবা কাট – সবই ছিল দর্শনীয়। তবে, তিনি তাঁর চেয়েও বেশি পরিচিত কিংবা বিখ্যাত ঠাণ্ডা মাথার অধিনায়ক হিসেবে। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট (১১১) খেলা ক্রিকেটার তিনি। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন তিনি, সেই সাথে সবচেয়ে সফল অধিনায়কও তিনি!

২০০০ সালের আইসিসি নক আউট ট্রফি জয়ী অধিনায়ক ছিলেন তিনি। এখন পর্যন্ত সেটিই নিউজিল্যান্ডের একমাত্র আইসিসি ট্রফি জয়। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের হয়ে নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম অধিনায়কও এই ফ্লেমিং।

ব্ল্যাক ক্যাপ এই কিংবদন্তির শৈশবটা অবশ্য একটু অন্যরকমই ছিল। জন্ম ১৯৭৩ সালের এক এপ্রিল। পলিং ফ্লেমিং এবং গ্যারি কার্কের ছেলে স্টিভেন ফ্লেমিং ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত তার বাবার আদর পাননি। তার মা পলিং তাকে ১৬ বছর পর্যন্ত একা হাতে মানুষ করেন। বাবা ও ছেলে দুইজনেই সিনিয়র রাগবি দলের হয়ে খেলেছিলেন, সেই সাথে ক্যাশেমেয়ার ইলেভেনের হয়ে অধিনায়কত্বও করেছিলেন ফ্লেমিং। তার বাবা গ্যারি কার্ক ছিলেন সাউথ ক্রাইস্টচার্চ ক্রিকেট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট!

ads

প্লে স্টেশন, বই পড়া ছাড়াও গলফ খেলা ছিলো ফ্লেমিংয়ের শখ ৷ তার প্রিয় ব্যাটসম্যান ছিলেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় এবং প্রিয় বোলার ছিলেন সাবেক কিউই পেসার স্যার রিচার্ড জন হ্যাডলি। নয় মে ২০০৭ সালে ফ্লেমিং তাঁর দীর্ঘদিনের বান্ধবী কেলি পেইনকে বিয়ে করেন।

১৯৯৪ সালের ১৯ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ ২০০৮ সাল – প্রায় ১৪ বছর ২২ গজ দাপিয়ে বেড়ানোর পর তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানান ফ্লেমিং। ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (আইপিএল) প্রথম আসরে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়েও খেলেন তিনি। পরের বছরই আবার ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর ২০০৯ আসরে চেন্নাইয়ের কোচ নিযুক্ত হন তিনি। বিগ ব্যাশে ২০১৫ সালে মেলবোর্ন স্টার্সের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।

ইংল্যান্ডের ঘরোয়া লিগ কাউন্টিতে মিডলসেক্স, ইয়োর্কশায়ার ও ন্যটিংহ্যাম্পশায়ারের হয়ে খেলেছেন ফ্লেমিং। ২০০৫ সালে তার নেতৃত্বে নটিংহ্যাম্পশায়ার চ্যাম্পিয়ন হয়! ১৮ বছরে প্রথমবারের মতো সেবার তার অধীনে চ্যাম্পিয়ন হয় নটিংহামশায়ার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৯৯৪ সালের মার্চে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ৯২ রানের ইনিংস খেলে  ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন ফ্লেমিং। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেন নিজের মেইডেন টেস্ট সেঞ্চুরি। সেই সিরিজেই তৃতীয় টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পান ফ্লেমিং! নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে অধিনায়কত্ব করার কীর্তি গড়েন। মাত্র ২৩ বছর ৩২১ দিনে তিনি অধিনায়কত্ব করেন সেই টেস্টে।

তাঁর কিছু রেকর্ডের কথা না বললেই নয়।

  • রিকি পন্টিংয়ের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচে ওয়ানডে অধিনায়ক ছিলেন ফ্লেমিং (২১৮ ম্যাচ)।
  • টেস্টে এক বছরে সবচেয়ে বেশি ধরার রেকর্ডটি ফ্লেমিংয়ের (২৮)। ১৯৯৭ সালে এই রেকর্ড গড়েন তিনি।
  • ওয়ানডে অভিষেকে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে নার্ভাস নাইন্টিজে আউট হন ফ্লেমিং৷
  • টেস্টে এক ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট তার (২৮১.৮১)।
  • টেস্টে নিউজিল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এবং ম্যাচ ফ্লেমিংয়ের! (৭১৭২ রান এবং ১১১ ম্যাচ)
  • নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট এবং ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন ফ্লেমিং (১৭১ এবং ১৩২)
  • নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্টে অধিনায়কত্ব করেন ফ্লেমিং (৮০)।
  • নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে অধিনায়কত্বের রেকর্ডটিও তার (২১৮)।

অধিনায়ক হিসেবে ফ্লেমিং ছিলেন সেরাদের একজন। তার বিচক্ষণ অধিনায়কত্বের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছেন বেশ ক’বার। অজি গ্রেট শেন ওয়ার্নের মতে, বিশ্ব সেরা অধিনায়ক হলেন স্টিভেন ফ্লেমিং। সাবেক ইংলিশ স্পিনার গ্রায়েম সোয়ান বলেন, তার দেখা সেরা দু’জন অধিনায়কের একজন হলেন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, আরেকজন ফ্লেমিং। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে বাদ হবার পর নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান ফ্লেমিং।

বেশ চতুর এবং বিচক্ষণ অধিনায়ক হিসেবে নাম কামিয়েছিলেন ফ্লেমিং৷ শুধু অধিনায়কই নয় স্লিপ ফিল্ডার হিসেবে তিনি ছিলেন বেশ দুর্দান্ত। স্টিভেন ফ্লেমিং এর হাত থেকে ক্যাচ ফসকে যাওয়াটা অনেকটা অমাবস্যার চাঁদের মতোই ছিল! সব সময় দেখা যেত না।

১৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষে দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর কোচিং ক্যারিয়ারে আছেন ফ্লেমিং৷ ২৬ বছর ধরে ক্রিকেটের সাথে যুক্ত থেকে নিজের গুণের ভাণ্ডার ছড়িয়ে দিচ্ছেন ক্রিকেটের সর্বক্ষেত্রে। যিনি নিজের জীবনের অর্ধেকের বেশি সময়টা ক্রিকেটকে দিয়েছেন তাঁকে ক্রীড়াঙ্গনে মাপার মতো মাপকাঠি হয়তো তৈরি হয়নি আর কোনোদিনও হবে না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link