More

Social Media

Light
Dark

অন্ধকার পথে লঙ্কান ক্রিকেট

এই উপমাদেশে মানুষের রক্তে, রন্ধ্রে মিশে গেছে ক্রিকেট। আমি, আপনি আমরা সবাই মশগুল ক্রিকেটে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে, অফিসে লাঞ্চের আড্ডায় সবখানে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হয়। রাজনীতি, অর্থনীতি এসবের আড়াল থেকে মাঝে সাঝেই উঁকি দিয়ে জায়গা দখল করে ক্রিকেট। বিনোদনের খোরাক মেটানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম এখন ক্রিকেট।

এই ক্রিকেটটা হয়ত হারিয়ে যেতে চলেছে উপমহাদেশের এক দেশ থেকে। এর পেছনে অর্থনৈতিক বেহাল দশা অন্যতম প্রভাবক। শ্রীলঙ্কা, তাঁদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মাথায় কাড়িকাড়ি অর্থের ঋণের বোঝা। এ মুহূর্তে কি আর বিনোদনের চিন্তা করা সাজে? বোধহয় না। দেশটির দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ যখন ভাবছে কি করে জোগাড় হবে রাতে খাবার, তখন নিশ্চয়ই কেউ ভাবছে না বিনোদনের জন্যে বেছে নেওয়া যাবে কোন মাধ্যম।

তবে ক্রিকেট নিয়ে দারুণ এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কিন্তু নিজেদের এমন আর্থসামাজিক বিপর্যয়ের মাঝে বসে নেই লংকান কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা। তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার নিজেদের এমন আর্থসামাজিক বিপর্যয় নিয়ে। সাবেক তারকা ওপেনার সানাথ জয়াসুরিয়া মিছিলের সম্মুখভাগে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আন্দোলনের। অন্যদিকে জনসম্মুখে খুব বেশি কথা না বলা মাহেলা জয়াবর্ধনে থেকে শুরু করে লাসিথ মালিঙ্গার মত ক্রিকেট তারকারা তাঁদের মতামত জানাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ads

অন্যদিকে ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ও সাবেক মন্ত্রী অর্জুনা রানাতুঙ্গা শঙ্কা প্রকাশ করছেন আরেকটি গৃহযুদ্ধের। দেশটিতে বিরাজ করছে অস্থিতিশীল এক পরিস্থিতি। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক প্রপাগাণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে  মুসলিম এবং তামিলদের বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে গৃহযুদ্ধ যেন সন্নিকটে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম হয়েছে আকাশ ছোঁয়া। এমন এক পরিস্থিতিতে অন্ধরকার পথের দিকে ধাবমান লংকান ক্রিকেট।

একটা প্রজন্ম হয়ত অন্ধকার এক গুহার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। একটা কিশোর যে কিনা স্বপ্ন দেখত একজন ক্রিকেটার হবার সে এই মানসিক পীড়া আর ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে নিশ্চয়ই নিজের ক্রিকেট শৈলির উন্নয়নটা ঠিক করতে পারবে না। আর তাছাড়া দেশের অর্থনীতি যেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছে সেখানে নিশ্চয়ই ক্রিকেটের অবকাঠামোতে নেমে আসবে ধ্বস। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) দেশের ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ যা করতে পারবে তাঁদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের দেখভাল করে জাতীয় দলের কার্যক্রমগুলো অব্যাহত রাখতে।

তবে সে দিক থেকেও যে খুব অর্থশালী এক ক্রিকেট বোর্ড যে শ্রীলঙ্কার রয়েছে তা কিন্তু নয়। অভাবটা দেখা দেবে তৃণমূল পর্যায়ে। বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঠিক দ্বারপ্রান্তে রয়েছে লঙ্কান তৃতীয় কিংবা দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট। অ্যাকাডেমি গুলো নিজেদের কার্যক্রম ঠিক কতটা চালু রাখতে পারবে তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। তবে কি বিশ্বকাপ জয়ী একটা দেশের ক্রিকেট হারিয়ে যাবে অতল অন্ধকারে?

হারিয়ে যেতেও পারে। জাতীয় দলের সাথে যুক্ত থাকা খেলোয়াড়েরা নিশ্চয়ই ভিন্ন কোন পেশার খোঁজে বেড়িয়ে পড়তে পারে দেশান্তরে। যেমন জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রে হয়েছিল। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট একটা পর্যায়ে সম্মুখীন হয়েছিল নিষেধাজ্ঞার। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছিল তখন মুখ্য কারণ। এমন কিছু যে ঘটবে না লংকান ক্রিকেটে তা নিশ্চয়ই বলে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে আশঙ্কার শেষ নেই।

খোদ সানাথ জয়াসুরিয়া বলেছেন, ‘পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে শ্রীলঙ্কাকে রক্ষা করুণ।’ শুধু যে একটা বসবাসযোগ্য দেশের আকুতি জানিয়েছেন তিনি তা নয় গোটা ক্রিকেট কাঠামোটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতিত আহ্বান জানিয়েছেন সনাথ জয়াসুরিয়া। তবে এই কঠিন পরিস্থিতির শেষটা যে ঠিক কোথায় তা হয়ত কারওই জানা নেই।

আবার নিকট ভবিষ্যতে যে এর সমাধান মিলে যাবে তাও বলা যাচ্ছে না এখনই। ঠিক কোন পথ ধরে এগোবে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট সেটা দেখতে সময়ে স্রোতধারায় চেয়ে থাকতেই হচ্ছে। ঐতিহ্য আর গর্ব নিশ্চয়ই ম্লান হয়ে যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link