More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

গাঙ্গুলি-ফ্লিনটফ ও দু’টি দুর্দমনীয় উদযাপন

কিংবদন্তি ভারতীয় ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়া একবার বলেছিলেন, ‘সৌরভের জন্যেই আমি ক্রিকেট ভালবেসেছি।’

সৌরভ গাঙ্গুলি, এমন একজন মানুষ যার পুরোনো সব কিছু মনে করে আপনি হয়তো শ্রদ্ধায় মাথা নোয়াবেন কিংবা তাঁর নিজস্ব ধরণের জন্য চাইলে অবজ্ঞা করবেন, কিন্তু কখনই হিসাবের খাতা থেকে বাদ দিতে পারবেন না। ১৮ বছর আগে লর্ডসের সেই ব্যালকনির কথাই ধরুন না, জার্সিটা খুলে হাওয়ায় চরকি পাক ঘোরাচ্ছেন কলকাতার যুবরাজ। কারো কারো চোখে ব্যালকনির সেই বিকেলই বিশ্ব ক্রিকেটের সাথে ভারতীয় ক্রিকেটের মাথা উঁচু করার আগমনী বার্তাই দিয়েছিল।

অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের গল্পটাও অনেকাংশে একই। ‘বিরল প্রতিভা’ ‘স্যার ইয়ান বোথামের উত্তরসূরি’ নানা সব বিশেষণ নামের আগে যোগ করে বিশ্ব ক্রিকেটে যার আগমন ঘটেছিল উঠতি বয়সেই, ‘তরুণ প্রতিভা’ হিসেবেই!

ads

২০০২ সালে এই দুই মহারথীর মুখোমুখি সিরিজের আগে ফিরে যাওয়া যাক। সৌরভ গাঙ্গুলি আর অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ- ক্রিকেটে যারা নিখুঁত চরিত্র, কখনও বিতর্কিত কিন্তু এটাই তো ক্রিকেটের সত্যিকারের রং! সৌরভ গাঙ্গুলি যেমন ছিলেন তার সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের দাপুটে অধিনায়ক। শুধু কি তাই, ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজের দিনে তিনি ছাপিয়ে যেতেন ক্রিকেটের ঈশ্বর মানা হয় যাকে, সেই শচীন টেন্ডুলকারকেও।

অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, ল্যাঙ্কাশায়ারের মাঠে যখন আস্তে আস্তে পরিচিতি পেতে শুরু করেছেন তিনি, প্যাভিলিয়নের দর্শকের চোখে সেই বয়সেই তিনি সেরাদের কাতারে থাকার যোগ্য, ক্রিকেট সমালোচকরা যাকে স্যার ইয়ান বোথামের উত্তরসূরিও বলে দিয়েছেন।

২০০২ সালের আগের গল্প বলছিলাম। মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের ফিক্সিং কাণ্ডে ভারতীয় ক্রিকেট যখন টালমাটাল, দৃশ্যপটে ব্যাটন তুলে নিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। সেই সময়ে তাঁর কাছে আসে কাউন্টি দল ল্যাঙ্কাশায়ারের চুক্তি।

এশিয়া থেকে ওল্ড ট্রাফোর্ড ততদিনে মাতিয়ে এসেছেন ওয়াসিম আকরাম, মুত্তিয়া মুরালিধরণেরা। সুতরাং সৌরভ যখন যোগ দিলেন, তার কাছেও উচ্চাশা ছিল সমর্থকদের। শোনা যায়, ল্যাঙ্কাশায়ারে সৌরভের আচরণ ছিল বাকিদের চাইতে ভিন্ন। টিমমেটরা বলে থাকেন, সৌরভ আচরণ করতেন নিখাঁদ ‘যুবরাজ’ এর মত । অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ছিলেন সে সময়ে সৌরভের সতীর্থ। মূলত, সৌরভের সাথে ফ্লিনটফকে মিলিয়ে গল্পটার শুরু তখনই।

ফ্লিনটফ তাঁর বই ‘বিইং ফ্রেডি’-তে লিখেছেন, ‘সৌরভের অন্তর্ভুক্তি একদমই কাজে দিচ্ছিল না। এমনটা হতে পারে যে আপনি ভাল খেলছেন না, কেননা ক্রিকেটে যে কারোরই খারাপ সময় আসতে পারে। কিন্তু সৌরভকে দেখে আমার মনে হত সে দলে ইনভলভডই নয় । নিজের চাইতে সে দলের বাকিদের প্রতি বেশি আগ্রহী থাকত। তার আচরণ এমন ছিল যেন দল নির্বাচনে আমাদের সৌরভ ও বাকি ১০ জনকে নির্বাচন করতে হবে। আমার মনে হত, আমার দলে প্রিন্স চার্লস খেলেন- এতটাই রয়্যালটি ভাবতেন নিজেকে গাঙ্গুলি।’

কেন্টের সাথে প্রথম ম্যাচের দিনে ফেরা যাক। প্রথম বলেই আউট হয়ে গেলেন সৌরভ। ফ্লিনটফ যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন এ ব্যাপারে, সৌরভের উত্তর ছিল সাফ, ‘এসব ম্যাচে আমি আমার রান খরচা করি না। আমি সে সব ম্যাচেই রান করি যেখানে রানগুলো কাজে লাগে।’

রাহুল দ্রাবিড় বলতেন, ‘প্রথমে আসবে ঈশ্বর, এরপর আসবে সৌরভ গাঙ্গুলি!’ – মূলত এটা বলেছিলেন সৌরভের অফ সাইডে খেলার নিখুঁত শিল্পে মুগ্ধ হয়ে।

ফ্লিনটফের সাথে গাঙ্গুলির বিতর্ক নিয়ে কথা বলছিলাম। ২০০২ সালে লর্ডসের এক ম্যাচে সৌরভের সাথে ফ্লিনটফকে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় । যে সিরিজে বেলকনিতে সৌরভ ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের সবচেয়ে আইকনিক দৃশ্যটার জন্ম দিয়েছিলেন। একটু বলে রাখি, অনেকেই মনে করেন সৌরভের জার্সি খোলা উদযাপনের সাথে ফ্লিনটফের এর আগের সিরিজে মুম্বাইয়ের উদযাপনের যোগসূত্র আছে। তা থাকুক, সৌরভের সাথে ফ্লিনটফের লর্ডসে বিতণ্ডাটা লাগে কি নিয়ে?

সৌরভ পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি ফ্লিনটফকে কটুক্তি করিনি কিংবা তার সাথে ঝামেলাতেও জড়াইনি। আমি যেটা বলতে চেয়েছিলাম, আমার ভারত মহান।’

ফ্লিনটফ সৌরভকে বলতেন ‘একঘরে’। সৌরভ ফ্লিনটফকে জবাব দিয়েছেন এরও, ‘দেখুন, ফ্লিনটফ আমাকে একঘরে ভাবত। কারণ আমি ম্যাচ শেষে তাদের সাথে ড্রিংক পার্টিতে যোগ দিতাম না। ইংলিশ এই কালচার আমার পছন্দ ছিল না। আমি আমার কোকের ক্যান নিয়ে সেখান থেকে চলে আসতাম। তাছাড়া সেখানে আমি একা ছিলাম না, আমার স্ত্রীও ছিল। ম্যানচেস্টারে তার আমি ছাড়া কেউই ছিল না। এবং লম্বা সময় বাসায় স্ত্রীকে দুশ্চিন্তায় রাখা আমার সংস্কৃতিতেও ছিল না!’

যা হোক, ঠিক হোক বা বেঠিক, সৌরভ গাঙ্গুলি তাঁর আচরণ দিয়ে পুরো বিশ্বকে একটা বার্তা ঠিকই দিতে পেরেছিলেন। এখন যেমন কিছু বলেই আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে হ্যাশট্যাগের ছড়াছড়ি করে দিই কিংবা সোশ্যাল প্লাটফর্মে আমাদের আন্দোলনে যাওয়া লাগে, কলকাতার যুবরাজ এসব ছাড়াই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ‘ব্রাউন লাইভস ম্যাটার’- শ্বেতবর্ণের ইংলিশরা চাইলেই ভারতীয়দের অপমান করতে পারে না, সেটা খেলার মাঠে হোক বা যেখানেই! বরং সৌরভ বলেছিলেন, ‘এটা শুধুমাত্রই আমি যে সেই ম্যাটার করে!’

শুধু কি তাই? আরো হাজারে শিক্ষার ভিড়ে সৌরভ উপমহাদেশকে তো এটাও শিখিয়েছিলেন – কিভাবে উদযাপন করতে হয়!

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link