More

Social Media

Light
Dark

শুভমান, শুভ আরম্ভ

বয়স কুড়ি পেরোনোর আগেই পেয়ে গিয়েছিলেন তারকাখ্যাতি। ছোটদের বিশ্বকাপ, ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট – তাঁর ব্যাট হেসেছে সবখানেই। ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তারকার প্রসঙ্গ উঠলে তাঁর নামটাই উচ্চারিত হয় সবার আগে। আইপিএলের মঞ্চেও তাঁর ব্যাটে যেন বইছে রানের ফোয়ারা। রান করার অভ্যাসটা ধরে রাখতে পারলে তাই শুভমান গিলের জন্য মহাতারকা হওয়ার মঞ্চটা দূরের পথ নয় মোটেই। 

পাঞ্জাবের লখিন্দর সিং নিজে টুকটাক ক্রিকেট খেলেছেন। বড় পর্যায়ে খেলার স্বপ্নও ছিল, কিন্তু নানা কারণে সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। নিজের স্বপ্নটা তাই পূরণ করতে চাইতেন ছেলে শুভমান গিলের মাধ্যমেই। স্বপ্ন দেখতেন ছেলেটা তাঁর ক্রিকেটার হবে, বাইশ গজের চারদিকটা মাতিয়ে তুলবে শিল্পীর আঁচড়ে। গিলের ছোটবেলাতেই তাই খেলনা গাড়ি নয়, বরং হাতে তুলে দিয়েছিলেন ক্রিকেট ব্যাট। গিল বাবার স্বপ্নটা বুঝতে পেরেছিলেন, বিনা বাক্যবাণে নিজের স্বপ্নে পরিণত করেছিলেন ক্রিকেটকে। 

এরপরে সময় যত গড়িয়েছে সাফল্যের ফল্গুধারা লুটিয়ে পড়েছে শুভমানের পায়ে। ভারতের বয়সভিত্তিক সবগুলো দলেই খেলেছেন, রাজ্যের দলগুলো পেরিয়ে জায়গা করে নেন ছোটদের বিশ্বকাপগামী দলে। অবশ্য নিউজিল্যান্ডের সেই বিশ্বকাপে যাবার আগে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তারকার তকমা পেয়ে গিয়েছিলেন। সেটা অবশ্য হওয়ারই ছিল, কখনো বন্ধু নির্মলকে নিয়ে গড়েছেন ৫৮৭ রানের জুটি আবার কখনো রাজ্যের হয়ে ছুঁয়েছেন ত্রিশতক। 

ads

ছোটদের সেই বিশ্বকাপও মাতিয়ে তুলেছিলেন আপন মহিমায়। উইকেটের চারপাশে দারুণ সব শট খেলতে সাবলীল ব্যাটার তো বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে সচরাচর দেখেনি কেউ। ১১২ স্ট্রাইকরেটে ৩৭২ রান কিংবা টুর্নামেন্ট সেরার ট্রফি নয়, শুভমান বরং তাঁর ব্যাটিং দিয়েই মুগ্ধ করেছিলেন গোটা বিশ্ববাসীকে। 

বয়সভিত্তিক দল পেরিয়ে রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনে আরো শাণিত করেন নিজেকে। পেস কিংবা স্পিন দুয়ের বিপক্ষেই সাবলীল গিলকে আইপিএলে দলে ভেড়াতে কাড়াকাড়ি লাগে দলগুলোর মাঝে। শেষ পর্যন্ত ১.৮ কোটি রুপিতে সেবার কলকাতার ডেরাতেই গিয়েছিলেন গিল। আজন্ম টপ অর্ডারে ব্যাট করা গিল সিনিয়র ক্রিকেটে পা রেখেই যেন বুঝতে পারলেন কতটা রুক্ষ এ মঞ্চ। 

কলকাতাতে তাঁর জায়গা হলো সাত নম্বর পজিশনে। কিন্তু হাল ছাড়লেন না এই তারকা, সীমিত সুযোগের মাঝে নিজের সামর্থ্যের জানান দিলেন। এ দলের সফরগুলোতে বুঝিয়ে দিলেন তাঁর ব্যাটিংয়ের মাহাত্ন্য, ক্যারিবীয় মুলুকে খেললেন ২১৮ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস। 

জাতীয় দলে অভিষেকটা হলেও পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছিলেন না। ছিলেন আসা যাওয়ার মাঝেও, তবে ব্যাটের ক্যারিশমাটা ছিল। নিয়মিত সুযোগ পেতেই তাই রান বন্যা বইয়ে দিলেন। ওয়ানডেতে ভারতের হয়ে দ্রুততম হাজার রান কিংবা সর্বকনিষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরিয়ান সব রেকর্ডই নিজের করে নিলেন। টি-টোয়েন্টিতে শুরুতে খানিকটা ভুগলেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে উড়িয়ে দিয়েছেন সব শঙ্কা। 

চার মৌসুম কলকাতায় থাকার পর গত মৌসুমেই দল বদলে যোগ দিয়েছিলেন গুজরাট টাইটান্সে। প্রথম মৌসুমেই দলকে শিরোপা জেতানোর মিশনে ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে প্রতিন ম্যাচেই এনে দিয়েছেন ঝড়ো সূচনা, পরিণত সব ইনিংসে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন দলকে। গত বারের ফর্মটা টেনে এনেছেন এবারের মৌসুমেও। পাওয়ার প্লেতে শুভমানকে থামানোর জবাব যেন নেই কারো কাছেই। 

সময় যত গড়াচ্ছে শুভমান গিল আপন আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছেন। সব মিলিয়ে বলাই যায় সময়টা এখন শুভমান গিলের। আর এই শুভ দিন যতদিন থাকে ততদিন আখেরে লাভ তো ভারতীয় ক্রিকেটেরই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link