More

Social Media

Light
Dark

‘শাস্ত্রী’য় ধারাভাষ্য

‘ধোনি ফিনিশেজ অফ ইন স্টাইল। ইন্ডিয়া লিফট দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ আফটার টোয়েন্টি এইট ইয়ার্স’ টেলিভিশনের অপর প্রান্তে বসে এই ধারাভাষ্যের সাথে পরিচিত প্রায় পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। ভারতীয়দের কাছে মাইক্রোফোনে তোলা সেই সুর তো আরও চেনা, আরও সুখকর স্মৃতি।

মাইক্রোফোন হাতে ২০১১ বিশ্বকাপজয়ের মুহূর্তের সেই ধারাভাষ্যটি দিয়েছিলেন ২৮ বছর আগে প্রথম বিশ্বকাপ জেতা ভারতেরই একজন সাবেক ক্রিকেটার। ৮৩ তে ক্রিকেটার হিসেব মাঠে থেকে সাক্ষী হয়েছিলেন। আর এবার বিশ্বকাপ জেতার সাক্ষী হয়েছিলেন কমেন্ট্রি বক্সে বসে। মাইক্রোফোন হাতে থাকা সে লোকটির নাম রবি শাস্ত্রী।

ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকর, কোচ, ধারাভাষ্যকর। রবি শাস্ত্রীর পেশাজীবন নিয়ে লিনিয়ার কাঠামো আঁকলে চিত্রটা ঠিক এমনই হবে। ক্রিকেট থেকে অবসরের পর দীর্ঘ সময় ধারাভাষ্য ক্যারিয়ারে ছিলেন। এরপর ভারতের কোচ। তারপর আবারও ধারাভাষ্যকর হিসেবে কমেন্ট্রি বক্সে প্রত্যাবর্তন।

ads

ক্রিকেট ক্যারিয়ারজুড়ে তাঁর নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় গ্যারি সোবার্সের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার ও প্রথম ভারতীয় হিসেবে এক ওভারের ৬ টি বলে ছক্কা মারার কীর্তিতে। কাকতালীয়ভাবে, স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে যুবরাজ সিংয়ের ছয় ছক্কা মারার দিনেও কমেন্ট্রি বক্সে ছিলেন রবি শাস্ত্রী। 

ধারাভাষ্যকার হিসেবে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের চেয়েও বেশি সুনাম অর্জন করেছিলেন তিনি। তবে মাঝে একটা লম্বা বিরতি নেন। ২০১৭ সালে ভারত জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আর ধারাভাষ্যকার হিসেবে মাইক্রোফোন হাতে দেখা যায়নি তাঁকে। দীর্ঘ ৫ বছর পর এ বছর থেকেই আবারও কমেন্ট্রি বক্সে উপস্থিতি মিলেছে তাঁর। চলমান ভারত- দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও ধারাভাষ্যে আছেন তিনি। তবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই মিলল ভিন্ন এক দৃশ্য। 

কমেন্ট্রি বক্সে তখন মুরালি কার্তিক আর রবি শাস্ত্রী। ভারতের দেওয়া ২৩৮ রানের টার্গেটে ভালই জবাব দিচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে শেষ ২ ওভারে ৬৪ রানের সমীকরণে ম্যাচটা ভারতের দিকেই যাচ্ছিল। এ সময় ১৯ তম ওভারে বলে আর্শদ্বীপ সিং। সে ওভারের প্রথম বলেই নো বল দেন তিনি। ফ্রি-হিটে পরের বলটি উপরে তুলেছিলেন মিলার। তবে অধিনায়ক রোহিত শর্মা সে ক্যাচ আর তালুবন্দি করতে পারল না। অবশ্য ফ্রি হিটের বল হওয়ায় ক্যাচ ধরেও তেমন লাভ হত না। তবে ঐ ক্যাচ মিসের পর ক্যামেরা তাক করা হয় রবি শাস্ত্রীর দিকে। 

আর এমন মুহূর্তেই মুরালি কার্তিক বিব্রতকর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন রবি শাস্ত্রীর দিকে। কার্তিক বলেন, ‘সাধারণত বোলাররা খারাপ করলে বোলিং কোচকে ক্যামেরায় দেখানো হয়, ফিল্ডার খারাপ ফিল্ডিং কোচকে দেখানো হয়। কিন্তু এই ক্যাচ মিসে ভারতের কোচিং স্টাফের কাউকে না দেখিয়ে আপনাকে দেখানো হলো কেন?’

 সবাইকে অবাক করে দিয়ে রবি শাস্ত্রী মজা করে কার্তিককে বলে উঠলেন, ‘আমি সব সময় ঘুমের মধ্যে থাকি। ঘুমের মধ্যে শুধু নাক ডাকি। আমার কোনো হুশ থাকে না।’

আরও বলেন, ‘টেলিভিশন ভাল জিনিস। সেখানে কি দেখালো, তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই।’ রবি শাস্ত্রীর কাছে এমন উত্তর পেয়ে অবশ্য মুরালি কার্তিক অবাকই হয়েছেন। কারণ তাঁর প্রশ্নের গুগলি যে বেশ ভালভাবেই সামলেছেন রবি শাস্ত্রী। উল্টো মুরালি কার্তিককেই বোধহয় মজার ছলে ধারাভাষ্যের শাস্ত্র শিখিয়ে দিলেন শাস্ত্রী।

ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকর, কোচ- কোনটিতে তিনি বেশি সফল ছিলেন? প্রশ্নটা যতটা সহজ। বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে যাওয়া কিন্তু আরও কঠিন। খেলোয়াড়ি জীবনে বিশ্বকাপ জিতেছেন। কোচিং জীবনে জেতেননি। কিন্তু ঘরে এবং বাইরে, দুই জায়গাতেই টেস্ট জয়ের অভ্যাসটা শুরু হয়েছিল তাঁর অধীনেই।

অস্ট্রেলিয়াকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই ধরাশয়ী করার নেপথ্যেও তিনি ছিলেন। আবার ক্রিকেট ধারাভাষ্যের ঐতিহাসিক সব মুহূর্তের আর্কাইভেও রবি শাস্ত্রী রয়েছেন। কোনটিতে তিনি বেশি সফল ছিলেন এই প্রশ্নে তাই রায়টা  আপাতত আমীমাংসিতই থেকে যায়।  

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link