More

Social Media

Light
Dark

এ যেন শান্তর আসল রুপ!

জবাবটা দিতে শিখে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি জানেন ওই যে সবুজ গালিচার মধ্যখানে কৃষ্ণবর্ণের মাটি, সে মাটিতে দাঁড়িয়ে দাপট দেখাতে হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই নিন্দুকদের মুখে কুলুপ এঁটে দিতে হয়। সে কাজটা রপ্ত করে ফেলেছেন শান্ত। তিনি বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন ঠিক এ কারণেই এত ভরসা রাখে সবাই তাঁর উপর।

কি অবলীলায় তিনি খেলে গেলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে! স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করলেন বাইশ গজে। নিজেকে প্রমাণের চাপটা কোথাও একটা উধাও। তিনি রীতিমত তাণ্ডবলীলা চালালেন সাগরিকায়। তাঁর দারুণ ব্যাটিং যেন স্বস্তি জোগালো গোটা বাংলাদেশ দলকে। এমন কি বহুদিন বাদে দর্শকদেরও খানিকটা প্রশান্তি দিলো শান্তর ব্যাট।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি দেখা পেয়ে গেলেন অর্ধশতকের। ঠিক টি-টোয়েন্টি সুলভ একটা হাফসেঞ্চুরি। এই জায়গাতেই তো শান্তর বিপক্ষে রাজ্যের সব অভিযোগ। তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই রয়েছেন রানে। তবে স্ট্রাইকরেট বিবেচনায় বারেবারে কটু কথা শুনতে হয়েছে তাঁর। কিন্তু শান্ত একটা বর্ণিল চিত্র এঁকে গেলেন জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে। আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা শান্ত ঠিক কতটা ভয়ানক সেই প্রমাণটাই রাখলেন।

ads

৩০ বলে ৫১ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলে তিনি বিদায় নেন। ততক্ষণে অবশ্য ম্যাচ জয়ের খুব কাছেই তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন দলকে। মার্ক উডের দ্রুতগতির বলটি যেন ঠিকঠাক আন্দাজই করতে পারেননি শান্ত। বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি। কিন্তু এর আগে এই উডের এক ওভারে টানা চারখানা বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইংলিশদের ভীষণ চাপে ফেলে দেন শান্ত। রীতিমত অশান্ত হয়ে ওঠেন তিনি।

১৭০ স্ট্রাইকরেটে করা শান্তর এই অর্ধশতকই প্রমাণ করে তাঁর সামর্থ্যের। এদিন শান্ত কোন বাড়তি ঝুঁকি নেননি। অবলীলায় তিনি শট চালিয়েছেন। ব্যাট-বলের দারুণ মেলবন্ধনে রান এসেছে তড়িৎ গতিতে। আটটি চারে তিনি তাঁর এই দুরন্ত ইনিংস সাজিয়েছেন। ক্ল্যাসিক ক্রিকেটীয় শট খেলার প্রচেষ্টাই করে গেছেন তিনি যতক্ষণ ব্যাটিং করেছেন।

দেশীয় কিংবা ভিনদেশী কোচদের মুখে একটাই কথা শোনা যেত অধিকাংশ সময়ে। শান্ত নাকি নেট অনুশীলনে বেশ দারুণ ব্যাটিং করেন। সেই দারুণ ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনটাই তিনি ঘটালেন। ঠিক যে কারণে তিনি সকলের নয়নের মণি সেই কারণটাই তিনি এবার সমর্থকদের সামনে উন্মোচন করলেন। গেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ থেকেই নিজেকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার যাত্রাটায় গতি বাড়িয়েছেন।

বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন। এমন কি টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন তিনি। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দুইটি অর্ধশতক আদায় করেছেন শান্ত। সুতরাং পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। সেই আত্মবিশ্বাসটা টের পাওয়া যাচ্ছিলো ম্যাচের শুরু থেকেই।

এদিন টসে জিতে প্রথমে বোলিং করে বাংলাদেশ। আর নিজেদের বোলিং ইনিংসে শান্ত ছিলেন রীতিমত বাজপাখি। তিনটি মহাগুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। লং অন অঞ্চলে ওঠা প্রতিটা হাফ চান্সকে ফুলচান্সে পরিণত করেছেন শান্ত। তাছাড়া ইনিংসের একেবারে শেষ বলে, ছক্কা বাঁচিয়েছেন দলের পক্ষে। বাউন্ডারি লাইনের বাইরে থেকে সঠিক সময়ে বল ফিরিয়ে দেন মাঠের ভেতর। সে ক্যাচটা রনি তালুকদার লুফে নিতে পারলেই নিঃসন্দেহে দৃষ্টিনন্দন এক ক্যাচে পরিণত হতো সেটি।

সে যাই হোক, দিনটি শান্তর ছিল, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দারুণ ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি মারকুটে ব্যাটিংয়ে তিনি দলকে জয়ের বন্দরের পথ দেখিয়েছেন। তাঁর বাতলে দেওয়া পথ ধরেই তো সদ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। তাও আবার ছয় উইকেট ব্যবধানে দুই ওভার বাকি থাকতেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link