More

Social Media

Light
Dark

শান্ত, সুদিনের সুবাসে!

সমালোচনা, ট্রল ব্যাপারটা তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁকে আক্রমণ করা হয়েছে বাজে ভাবে। বাংলাদেশের গুটিকয়েক ক্রিকেট সমর্থক কতটা নিচে নামতে পারেন সেটার সবচেয়ে বড় সাক্ষী তিনি। তবে এই সবকিছুকেই তিনি বাইশ গজের বাইরে রাখতে পেরেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন ব্যাট হাতে লড়াইটা সবুজ মাঠেই করতে হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নয়।

এবারের বিপিএলে একমাত্র ব্যাটার হিসেবে করেছেন পাঁচশোরও বেশি রান। অথচ এই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেও তাঁকে নিয়ে সন্দেহর শেষ ছিল না। ভরসাটা শুধু রেখেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আর টুর্নামেন্ট শেষে সেই শান্তই হয়ে উঠেছেন দলটার সবচেয়ে বড় পারফর্মার।

নাজমুল হোসেন শান্ত নিজেকে চেনালেন নতুন করে। বিপিএলের মত আসরে পারফর্ম করেছেন আত্মবিশ্বাসের সাথে। যদিও এই শান্তকে নিয়মিতই দেখা যায় নেটে। যার টেকনিক দেখে মুগ্ধ হয়েছেন দেশ-বিদেশের সমস্ত কোচ। বাংলাদেশের সব কোচই নেটে তাঁকে দেখে পছন্দ করেছেন।

ads

এই যেমন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগের কথাই বলা যাক। হঠাত করে নিয়ে আসা হল টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরণ শ্রীরামকে। তিনিও দুদিন দেখেই পছন্দ করে ফেললেন শান্তকে। কোথাও রান করতে না পারা শান্তকে তিনি নিয়ে নিলেন বিশ্বকাপের দলে। সংবাদ সম্মেলনে এসে জানালেন তাঁর চোখ কখনো ভুল দেখেনা। তিনি শান্তকে ঠিকই দেখেছেন, ঠিকই চিনেছেন।

বিশ্বকাপে খুব বড় কিছু করতে পারেননি শান্ত। তবুও এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইশোর বেশি রান করেছেন। আর সেটাই মুগ্ধ করেছিল সিলেটের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। সারাদেশের ট্রল, সমালোচনার বিপক্ষে গিয়ে এই রান করতে পেরেছিল শান্ত। তারমানে মানসিকভাবে এই ছেলে ভীষণ শক্ত।

সেটার প্রমাণ পাওয়া গেল বিপিএলেও। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে প্রতি ম্যাচেই ওপেন করতে নেমে রান করেছেন। দলকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন। তিনি একপাশ থেকে বড় ইনিংস খেলায় অন্য প্রান্তে হৃদয় হাত খুলে খেলতে পেরেছেন। যেই শান্তকে নিয়ে এত ট্রল তিনিই করলেন এক বিপিএলে ৫০০ রান। আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

বিপিএলের আগে নিজেও সেই সমালোচনার কথা বলেছিলেন শান্ত। গণমাধ্যমকে শান্ত বলেছিলেন তাঁর মনে হয় তিনি পুরো দেশের বিপক্ষে খেলেন। তবে বাইশ গজে এসব নিয়ে তিনি ভাবতে চাননা। তিনি শুধু নিজের ব্যাটিংটা নিয়েই থাকতে চান।

বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচেও দেখা গেল সেই শান্তকেই। আরেকপ্রান্তে আজ তৌহিদ হৃদয় দ্রুত আউট হয়ে গেলেও তিনি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন সিলেটকে। কুমিল্লার বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতে উড়ন্ত শুরু এনে দিয়েছেন। প্রথম ওভারে আন্দ্রে রাসেলকে মেরেছেন তিন বাউন্ডারি।

এরপর সিলেট দ্রুত দুইটা উইকেট হারালে আবার দলের হাল ধরেন। শান্ত যখন নিজের অর্ধশতকটা পূরণ করলেন তখন মাশরাফি বেড়িয়ে এলেন ড্রেসিং রুমে থেকে। ইশারায় শান্তকে বললেন বাইশ গজে টিকে থাকতে।

শান্ত টিকে থাকলেন অধিনায়কের কথা মেনেই। খেললেন ৪৫ বলে ৬৪ রানের ইনিংস। ব্যাটিং করেছেন ১৪০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে। তিনি যখন আউট হয়ে মাঠ ছাড়ছেন তখন তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। মাশরাফির ইশারাটাই শান্ত মেনে চলুক সবসময়। বাংলাদেশের হয়েও তাঁর এই ফর্ম অব্যাহত থাকুক। শান্ত বাইশ গজে আরো অনেক বেশি সময় কাটাক, ওখানেই তো তাঁকে সবচেয়ে বেশি মানায়। পুরো দেশের বিপক্ষে নয়, পুরো দেশকে সাথে নিয়েই তিনি খেলতে থাকুক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link