More

Social Media

Light
Dark

শামিম ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’ পাটোয়ারি

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বাস্তবতা বলে তীব্র খরার মাঝে শামিম হোসেন পাটোয়ারি এক পশলা বৃষ্টি হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। দলের অধিনায়ক থেকে বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার পর্যন্ত সামর্থ্য সংকটের তীব্রতা চোখে আঙুল দিয়ে একাই দেখিয়ে দিয়েছে নবাগত শামিম।

শামিম কেবল একজন ব্যাটসম্যান বা অলরাউন্ডার নন। শামিম একজন কমপ্লিট প্যাকেজ। যার চোখে-মুখে আত্মবিশ্বাসের জোয়ার ধরা পড়ে। সামর্থ্যের সীমা অতিক্রম করেও লড়াইয়ের তীব্র প্রচেষ্টা পুরোপুরি স্পষ্ট। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে শামিমের ফিল্ডিং নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। গোলরক্ষক আর উইকেট রক্ষক বাদেও, মাঠের অন্যকেউ যে বাজপাখি হতে পারেন; সে ধারণা পাল্টে দিয়েছে শামিম।

মিরপুরের মাঠ অতিক্রম করে শামিমের সেই বাজপাখি রূপ হারারের মাঠও দেখলো। অভিষেকে, বাউন্ডারি লাইনে দৌঁড়ে বলের কাছে পৌঁছালেন, সবশেষ মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলটাকে আগলে রাখলেন; তারুণ্যের সর্বোচ্চ শক্তির ব্যবহার এটাকেই বলে।

ads

হ্যাঁ, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বা আধুনিক সীমিত ওভারের ক্রিকেট হল এমনই সব কমপ্লিট প্যাকেজদের খেলা। অন্যান্য দলে এরকম ক্রিকেটার বা এর চেয়েও ভাল মানের ক্রিকেটার আছেন। কিন্তু, আমাদের আর নেই। তাই, শামিমকে আগলে রাখতে হবে আমাদের।

একজন কমপ্লিট প্যাকেজ বা কমপ্লিট অ্যাথলেট সবদিকেই দ্যুতি ছড়িয়ে যাবেন। অবাক করে দিবেন অসাধারণ দক্ষতায়। অভাবনীয় কিছুই করে দেখাবেন। এসব দক্ষতাই একজনকে কমপ্লিট প্যাকেজের সমকক্ষ করে তোলে। যুবাদের বিশ্বজয়ে শামিম রেখেছিলেন অগ্রণী ভূমিকা। শামিম তিন বিভাগেই আলাদা করে বাড়তি সমীহ লাভ করার যোগ্যতা রাখে।

শেষ টি-টোয়েন্টিতে শামিমের প্রচেষ্টা সেই প্রসঙ্গই সামনে নিয়ে এসেছে। ফিল্ডিংয়ের সময় — ক্যাচ নিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ছয় বাঁচাতে নাইমের ফিরিয়ে দেওয়া বল, উল্টো দৌঁড়ে তালুবন্দি। গড়নে বেশ ছোটোখাটো হলেও, মাঠের আচরণে তা উপলব্ধির উপায় নেই। ক্রীড়াক্ষেত্রে তারুণ্যের শক্তিকে তাই কাজে লাগানোর ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয় প্রতিনিয়ত।

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাউন্ডারি লাইনে দুর্দান্ত এক ক্যাচ আর সাথে ব্যাট হাতে ১৩ বলে ২৯। আগে ব্যাটিং করে এই রান করলে, প্রথমদিনেই অতিরিক্ত বাহবা পকেটে পুরে নিতে পারতেন। যাই হোক, তারপরেও জাত চেনাতে ভুল করেননি প্রথম দিনই। দুরন্ত দুটো ছয়ের পাশাপাশি ছিল তিনটি দৃষ্টিনন্দন চারের মার।

শামিম যে দ্রুত শিখে নিতে পারেন, তার জবাব নিশ্চিত আজকে পেয়ে গেছে। আগের ম্যাচ জেতানোর সুযোগ থাকলেও পারেননি। এক্ষেত্রে তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না! যেহেতু, অভিষেক ম্যাচ আনন্দ নিয়ে খেলার নিয়ম। তবে বেশ দ্রুত শিক্ষা নিয়েছেন। যার প্রমাণ ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই। এবার ৬ চারে ১৫ বলে ৩১। একেবারে ম্যাচ জেতানো ইনিংস। পরিস্থিতি অনুযায়ী দলের চাহিদা মেটানো ইনিংস।

তবে মুগ্ধ করেছে উইকেট বাঁচাতে তার ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য। রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে সচরাচর এমন ক্ষিপ্রতা দেখা যায়না। আজকের পূর্বে সবশেষ কবে দেখেছি তাই মনেও পড়ছেনা। শারীরিক ধকলকে তোয়াক্কা না করে পুনরায় উঠে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বুক চিতিয়ে লড়ে যাওয়াই শামিমের বৈশিষ্ট্য।

দলের যখন প্রয়োজন ছিলো, তখনই চারের পসরা সাজানো ইনিংস। মুজারাবানিকে যেভাবে বোকা বানালেন, তার জন্য শামিম প্রশংসা পাবেন নি:সন্দেহে। জিম্বাবুয়ের সেরা বোলারকে ব্যাটের তুলনায় মস্তিষ্ক ব্যবহার করে জবাব দিয়েছেন। ধুঁকতে থাকা অধিনায়কের ভরসা হয়েছেন বড় শট খেলে। অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে অধিনায়ক, তা নিশ্চতভাবেই বলা চলে।

আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সিরিজ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শামিম হতে পারেন দলের তুরুপের তাস। দ্রুতগতির ক্রিকেটে শামিমের অপরিহার্যতা স্পষ্ট। দুয়েকটা ফিল্ডিং, সিঙেল, চার-ছয় খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আর শামিম হলো সেই মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখা একজন। বিশ্বজয় করা দলের সদস্য তো আর গড়পড়তা না হয়ে ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’ হবেন এটাই স্বাভাবিক।

টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্টের তকমা ছাড়াই শামিম এই দলে নিয়মিত খেলুক। এমন তকমা জুড়ে দেওয়ার পর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি সাব্বির রহমান রুম্মানকে। স্মৃতি ঘাঁটলে উত্তর পাবেন — অভিষেক ওডিআইতে সাব্বির দূর্দান্ত ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ করেছিলো সবাইকে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! সাব্বির এখন আমাদের কাছে এক বিরাট আক্ষেপ হতাশার নাম।

উদ্যমী শামিমে আশা খুঁজে বেড়াক বাংলাদেশ। দূরন্ত শামিমে, দূর্বার গতিতে ছুটুক পুরো দল। হারিয়ে বা ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই পূর্ণ যত্নে পরিণত করে গড়ে তোলা হোক। তারুণ্যের শক্তিকে সামনে এনে, তবেই সামনে এগিয়ে যাক দেশের ক্রিকেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link