More

Social Media

Light
Dark

অপরিবর্তনশীল সাকিব

চারিদিকে সমালোচনার স্রোত। কিন্তু তাতে সামান্যটুকু ভ্রুক্ষেপ নেই। মাঠের ক্রিকেটার, উত্তরটাও দিবেন মাঠেই- এটাই যেন পণ। মাঠের বাইরের সমালোচনার প্রভাব কখনোই মাঠে পড়ে না। আর এতেই অনন্য হয়ে ওঠেন সাকিব আল হাসান। 

পঞ্চপাণ্ডবের এক পান্ডবই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত আছেন। দলের নেতৃত্ব কাঁধে নিয়েছেন। প্রতি সিরিজ কিংবা টুর্নামেন্টের আগে তাঁকে নিয়ে সমালোচনা এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেসব সমালোচনায় বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই সাকিবের।

কারণ ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে এসেও তিনি মাঠের ক্রিকেটে মহীয়ান। এখনও বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার। সময় বদলেছে, সাকিবের বয়স বেড়েছে, কিন্তু বদলায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিবের অন্তঃপ্রাণ হয়ে থাকার দীর্ঘ যাত্রা।

ads

ত্রিদেশীয় সিরিজে জয়শূণ্য বাংলাদেশ। কিন্তু স্বমহিমায় উজ্জ্বল সাকিব। আগের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৭০ রানের ইনিংস। দল ম্যাচ হেরেছিল। অবশ্য একার লড়াইয়ে বাকি সবার ব্যর্থতার দিনে জয় তো আকাশ কুসুম ভাবনা। ৭০ রানের ইনিংসে আগের দিন সাকিব যেখানে শেষ করেছিলেন, এ দিন সেই আগের রূপেই পাকিস্তানের বিপক্ষে শুরু করেছিলেন সাকিব।

কিউইদের বিপক্ষে ৭০ রানের ইনিংসের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে খেললেন ৬৮ রানের ইনিংস। আর দুর্দান্ত এ ইনিংসের মধ্য দিয়ে সাকিব তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১২ তম অর্ধ শতক তুলে নেন। অথচ বাংলাদেশের হয়ে দশটি ফিফটিও আর কেউ করতে পারেননি।

ব্যাটিং কিংবা বোলিং, যেটাই বলা হোক না কেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিব সেই দুটিতেই প্রকাণ্ড এক বটবৃক্ষ। সেই বটবৃক্ষের ছায়াতলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট চলে যাচ্ছে বছরের পর বছর। উনিশের সাকিব হয়তো নিজেও ফেলে এসেছেন। তবে একদম অন্তিম মুহূর্তে কিংবা ক্রিকেট মেইন প্রায়োরিটি না বলে যে রব ওঠে, তাঁর মাঝেও তো সাকিব মাঠের ক্রিকেটে ‘সাকিব’ই রয়ে গিয়েছেন।

ক্রিকেটটাকে একদম প্রধান অবলম্বন বানানো  ক্রিকেটারটাও তো তথাকথিত পার্ট টাইমার ক্রিকেটার বনে যাওয়া সাকিব হওয়ার চেষ্টায় ব্রত থাকেন। আসলে দিনশেষে ঐ আউটপুটটাই প্রয়োজন। মাঠের ক্রিকেটে কে কতটা দিল দিনশেষে সেটিই বিবেচ্য বিষয় হয়ে যায়। আর সাকিব সে বিবেচনায় একদম সেরাদের সেরা। 

সাকিবের ব্যাটিংটা ঠিক টি-টোয়েন্টিতে যায় না- এমন অপবাদ বছর জুড়েই চর্চিত হয়। কিন্তু ঐ যে, সমালোচনার উত্তর নিরব সুরে দেওয়াটাই তো সাকিবের অনন্যতা। শেষ ৭ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তিনটা ফিফটি। সহজাত প্রতিভায় সাকিবের বোলিংটা আসে, তাই সেটি নিয়ে খুব বেশি সমালোচনার সুযোগ নেই।

কিন্তু নির্দিষ্ট করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটিং নিয়ে সাকিব যে বেশ খেটেছেন তা তাঁর শেষ ইনিংসগুলোর দিকে চোখ দিলেই হয়। যে পাওয়ার হিটিংয়ে সাকিব নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন সেই সাকিবই ফিফটি করা ম্যাচ গুলোতে প্রায় দেড়শ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন। 

সাকিব এমনই। ক্রিকেট নিয়ে নিজের পরিকল্পনা অন্যদের মত অতো ঢাকঢোল পিটিয়ে করেন না। নিভৃতে, আড়ালে কাজটা করে যান। যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই। ঐ পরিমিতবোধ আর নিজস্ব আত্মবিশ্বাসেই সাকিব এগিয়ে যান সাকিবের মত। তবে ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে এত বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে একটি দলগত অর্জন সাকিবের খুবই দরকার। অন্তত গ্রেটনেসের পথে আরও এক পা এগিয়ে যাওয়ার জন্য তো অবশ্যই দরকার।

সাকিব নিজেও হয়তো এটা জানেন, কিন্তু জানান দিতে চান না। হয়তো চুপিসারে নির্লিপ্ততাতেই সাকিব সেই পরিকল্পনার পথে এরই মধ্যে হাঁটাও শুরু করে দিয়েছেন। সে হাঁটার পথ মসৃণ নয়, কিন্তু সমালোচনার তীক্ষ্ণ তীরও তো সহনশীল নয়। সাকিব যেহেতু সেসব তীরে বিদ্ধ হয়েই দুর্বার গতিতে এগিয়েছেন, তাই ক্যারিয়ারে সামনের অমসৃণ পথও হয়তো ঠিকই ডিঙ্গিয়ে যাবেন তিনি।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link