More

Social Media

Light
Dark

দ্য আফ্রিদি ল্যান্ডমার্ক!

১৯৯৬ বিশ্বকাপের পর কেনিয়ায় চারজাতি টুর্নামেন্টের আগে মুশতাক আহমেদের ইনজুরি পাকিস্তানের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্বভাবতই একজন লেগ স্পিনারের খোঁজ করছিলো পাকিস্তান। তখন পাকিস্তানের নির্বাচক ওয়াসিম আকরামকে বললেন অনূর্ধ্ব ১৯ দলের একজন লেগ স্পিনার আছে। সে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিশ্বকাপে বেশ ভালো করেছিলো। নাম – শহীদ আফ্রিদি!

আকরাম এর আগে অবশ্য নাম শোনেননি আফ্রিদির। তিনি বললেন, ‘ঠিকাছে! তাঁকে ডাকা হোক।’ আফ্রিদির কাছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) থেকে ফোন করা হলো দ্রুত পাকিস্তান দলের সাথে যোগ দিতে। তরুণ আফ্রিদি যোগ দিলেন দলের সাথে। নেটে বোলিংও করলেন বেশ কিছু সময়। আকরাম হঠাৎ তাঁকে বললেন, ‘ব্যাটিং কর‍তে পারো?’ আফ্রিদি মাথা নেড়ে বললেন – ‘হ্যাঁ, পারি।’

এরপর আকরাম নিজেই বোলিং করলেন! বেশিরভাগ বলই মাঠের বাইরে নিয়ে ফেলছিলেন আফ্রিদি। আকরাম নিজেও বেশ অবাক হয়েছিলেন আফ্রিদির ব্যাটিং দেখে। ম্যাচের আগে তৎকালীন অধিনায়ক সাইদ আনোয়ারকে আকরাম বললেন, ‘যদি কখনো দলের কঠিন অবস্থা থাকে আফ্রিদিকে উপরের দিকে পাঠিয়ে দেখতে পারেন!’

ads

২ অক্টোবর, ১৯৯৬। কেনিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হলেন আফ্রিদি। কিন্তু সেই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামার আগেই দল জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। বল হাতে ১০ ওভারে ৩২ রান দিয়ে শিকার করতে পারেননি কোনো উইকেট।

পরের ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। যে ম্যাচে ক্রিকেট দুনিয়াকে নিজের আগমনি বার্তা দিয়েছিলেন আফ্রিদি। রেকর্ড গড়ে স্মরণীয় করে রেখেছিলেন নিজের অভিষেক ইনিংস। সে এক অভাবনীয় ইতিহাস!

৪ অক্টোবর, ১৯৯৬। নাইরোবিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। ওপেনিং জুটিতে সাইদ আনোয়ারের সাথে ৬০ রানের জুটির পথে ২৩ রানে আউট হন সেলিম এলাহি। তিন নম্বরে ব্যাট কর‍তে পাঠানো হলো আফ্রিদিকে!

আনোয়ারের কথাতেই হয়তো আকরাম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন আফ্রিদিকে উপরের দিকে একবার বাজিয়ে দেখবেন। সেই একটা সিদ্ধান্তই পাল্টে দিল আফ্রিদির ক্যারিয়ার।

তিনি নামলেন মাঠে। তাঁদের বিপক্ষে, যাদের এতোদিন টিভিতে দেখছিলেন, যাদের নাম শুনেছিলেন শুধু। সেসব ক্রিকেটারদের সামনে খেলতে নেমে খুব নার্ভাসই ছিলেন তিনি। কিন্তু দ্রুতই সেটি কাটিয়ে লঙ্কান বোলারদের সামনে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন আফ্রিদি!

আকরাম-আনোয়ারদের বিশ্বাসের প্রতিদানটা ব্যাট হাতেই দিলেন আফ্রিদি। একপ্রান্তে লঙ্কান বোলারদের উপর তান্ডব চালিয়ে মাত্র ৩৭ বলে রেকর্ড গড়ে তুলে নিলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি!

ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি! সেটিও নিজের অভিষেক ইনিংসে। সনাথ জয়াসুরিয়া, মুত্তিয়া মুরালিধরনদের উপর তান্ডব চালিয়েছিলেন আফ্রিদি। লঙ্কান বোলাররা আফ্রিদির সামনে ছিলো অসহায়।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সাইদ আনোয়ারের সাথে ১২৬ রানের জুটি গড়েন আফ্রিদি! যার মধ্যে ১০২ রানই ছিলো তার! ১১ ছয় ও ৬ চারে ৪০ বলে ১০২ রান করে আউট হন আফ্রিদি। ওই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন সাইদ আনোয়ারও। ১২০ বলে ১১৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন আনোয়ার।

আফ্রিদি-আনোয়ারের ব্যাটিং দাপটে ওই ম্যাচে ৩৭১ রানের পাহাড়সম লক্ষ্যমাত্রা ছুঁড়ে দেয় পাকিস্তান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে অরবিন্দ ডি সিলভার সেঞ্চুরিতে ২৮৯ রান করতে সক্ষম হয় লঙ্কানরা। এক বল বাকি থাকতে গুড়িয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। বল হাতেও লঙ্কান অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গার উইকেট শিকার করেছিলেন আফ্রিদি।

ওই ম্যাচের পর এক ভিডিওতে আফ্রিদি জানান যে ব্যাট দিয়ে তিনি রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন সেটি ভারতীয় গ্রেট শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাট! ম্যাচের আগে পাকিস্তানি পেসার ওয়াকার ইউনুস এই ব্যাট আফ্রিদিকে দিয়ে বলেছিলেন, ‘শচীনের এই ব্যাট দিয়েই তুই খেলিস।’ আর সেই ব্যাটেই নিজের অভিষেক ইনিংস খেলতে নেমে রেকর্ড গড়েন আফ্রিদি।

ওই রেকর্ড প্রায় ১৮ বছর অক্ষত ছিলো। এরপর ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার কুরে অ্যান্ডারসন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করে আফ্রিদির রেকর্ড ভেঙে দেন। পরবর্তীতে সেই রেকর্ড গুড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়েন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স। ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩১ বলে সেঞ্চুরি করেন এবি। এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক তিনি। তবে, আফ্রিদির ঝড় আজো বেঁচে আছে স্মৃতির মণিকোঠায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link