সার্জিও রামোস চলে গেলো। ষোলো বছর পর। ষোলো বছর অনেকটা সময়, অনেকটা জড়িয়ে থাকা, অনেকটা অবলম্বন, অনেকটা অসহ্য হয়ে ওঠাও। রামোস চলে গেলো – অনেকটা জড়িয়ে থেকে, অনেকটা অবলম্বন হয়ে, অনেকটা অসহ্য হয়ে।
আমি জানিনা কাল থেকে কার উদ্দেশ্যে দেপোর্তিভো ম্যাচের মতো করে একদলের চাওয়াগুলো ভেসে আসবে, ‘সার্জি, গিভ আস আ গোল।’ ওই একদলের মধ্যে কি আমি পড়ি? আপনি পড়েন? হয়তো পড়ি, হয়তো আপনিও পড়েন, হয়তো আমরা সবাই পড়ি ওই একদলের মধ্যে।
চলে যাওয়াগুলো কবেই বা শ্রেণীর সীমাবদ্ধতা মেনেছে। তথ্য বলছে ২০১৪ এর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল থেকে ২০১৭ অবধি, সার্জির বাইশটা গোলের মধ্যে আঠারোটা গোল এসেছে যখন দল পিছিয়ে আছে বা ড্র করছে এমন অবস্থায়। নব্বই মিনিটেও সার্জি গোল করতে পারে।
সার্জি আমাদের বাঁচিয়ে দিতে পারে সুপারম্যানের মতো করে – আশি মিনিটেও – নব্বই মিনিটেও – কিংবা তারপরেও। আমি বার্সা, আপনি বায়ার্ন, কেউ হয়তো সিটি, কেউ হয়তো ইউনাইটেড, গার্নার বা অন্য কিছু। কিন্তু সার্জি আমাদের বেঁধে দিয়ে গেলো ওই একদলের বাঁধনে। আজ ষোলো বছর পর, সার্জি ওই লাল-হলুদ পতাকাটা গায়ে জড়িয়ে আমাদের সবাইকে বলিয়ে দিয়ে গেলো, সার্জি, গিভ আস গোল, গিভ আস মোমেন্টস ব্যাক।’
কাল থেকে লুকা মদ্রিচের নেওয়া ফ্রি-কিকের সময় জেরার্ড কি ডি বক্সে মিস করবেন সার্জির নড়াচড়া? কাল থেকে হয়তো টনি ক্রুজের কর্নার নেওয়ার সময়গুলোতে স্টেগেনকে আড়চোখে তাকাতে হবে না লম্বা সোনালীচুলো প্রাক্তন বুলফাইটারের দিকে। লিওনেল মেসি কার উপরই বা রেগে যাবেন, মার্সেলো কাকেই বা জড়িয়ে ধরবেন।
আর আমরা, ওই একদলের এক একটা মাথা, কাকেই ঘৃণা করবো, কাকেই ভালোবাসবো। রামোস কি স্থিতিস্থাপকতা জানেন? ইলাস্টিক স্প্রিংগুলো কেমন বেড়ে গিয়েও ফিরে ফিরে আসে। এল ক্লাসিকোর সময় সার্জির উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দেওয়া আরদা তুরানের গালাগালগুলো মনে পড়ছিলো, সার্জি শুষে নেন সব।
ক্যাম্প ন্যু বাসীরা কি অভিশাপ দেয় তাকে? কি, জানি, সার্জি হয়তো সেটাও শুষে নিয়েছে, ওই টেরি বুচারের রক্তমাখা ব্যান্ডেজটার মতো করে। সে ঘৃণিত, সে পুজিতও। সে লিওনেলের পা পিষতে পারে,সে পিকের কাঁধে চড়ে উল্লাসও করতে পারে।
যাবার বেলায়, এ কোন অদৃশ্য বাঁধনে জড়িয়ে দিয়ে গেলো সে! বায়ুশূন্য স্থান কি সত্যিই অস্তিত্ব রাখেনা? হয়তো রাখে না। মহেন্দ্র সিং ধোনি তো সেই কবেই বলে গেছেন, ‘ম্যায় পাল দো পাল কা শায়ের হু।’ কাল আবার নতুন মুহূর্ত আসবে। কাল আবার নতুন কেউ আসবে।
সার্জির বদলেও হয়তো কেউ আসবে। কেউ চ্যাম্পিয়নস লিগে পেনাল্টি মিস করে ইউরো সেমিতে প্যানেনকা মেরে ঋণমুক্ত হবে। কেউ ব্যাকভলিতে গোল ক্লিয়ার করবে। কিন্তু, গ্যালারির ওই গোছা গোছা কালো মাথাদের নিজেদের কড়ে আঙুলে নব্বই মিনিটের কর গুনতে গুনতে সার্জির দিকে তাকিয়ে থাকার কবিতাগুলো শুধুই যে মুহুর্তে আটকে থাকে না।
‘পাল দো পাল’- এর ছায়া সরিয়ে সেগুলো সেই কবেই মিথের মতো করে চিরস্থায়ী হয়ে গেছে। রামোস বোধহয় ‘পাল দো পাল’-কেও হারিয়ে দিয়ে গেলো, চিরস্থায়ী হয়ে, অবলম্বন হয়ে, অসহ্য হয়ে।
রামোস চলে গেলো। ষোলো বছর পর। রামোস আমাদের সবাইকে একসাথে বলিয়ে দিয়ে গেলো, ‘সার্জি, গিভ আস গোল, গিভ আস মোমেন্টস ব্যাক।’